সাহিত্য ও কাব্যচর্চার শর্তাবলি
। মোশাররফ হোসাইন সাগর ।
প্রকৌশলী না হলে সে তো পারে না ইমারত গড়তে,
ডাক্তার না হয়ে কেউ পারে না চিকিৎসা করতে।
ড্রাইভিং না জানলে কেউ করতে পারে না ড্রাইভারী,
এমন ব্যক্তির হাতে কেউ তুলে দেয় না নিজের গাড়ি।
লেখক হতে হলেও হওয়া চাই ভাষাজ্ঞানের অধিকারী,
তা না হলে সাহিত্য-সমুদ্র কিভাবে তুমি দিবে পাড়ি?
কবিতা বা গান লিখো, গল্প লিখো, লিখো উপন্যাস,
ভুল লিখে বাংলা ভাষার কেউ কোর না মহাসর্বনাশ।
লিখতে গেলে সবার আগে ভাষাজ্ঞানটাই থাকা চাই,
ভাষাজ্ঞান না থাকলে লেখার কোনোই দরকার নাই।
কিসব লিখোরে ভাই, নেই তাতে কোনো বিরামচিহ্ন,
এইসব লেখার সাথে সবার সম্পর্ক করতে হবে ছিন্ন।
ঢাকা হইতে ছাড়ছো প্লেন, লন্ডনে পৌঁছে বিরাম নাও,
মাঝখানেতে একটু থেমে দম ফেলার না সুযোগ দাও।
ণত্ব-বিধান, ষত্ব-বিধান, সাথে আরও সন্ধি ও সমাস
না জেনেই লিখে তুমি ভাষাটার করছো যে অঙ্গনাশ।
ব্যাকরণের সব নিয়ম-কানুন অকারণে হয়নি যে সৃষ্টি,
সেই নিয়মটা না মেনে লিখে বিরক্ত করো চোখের দৃষ্টি।
লিখতে চাইবে আলু-পটল, হয়ে যাবে যে লাউ-কুমড়া,
শব্দের অর্থ না বুঝেই এমন কাণ্ড করছো যে তোমরা।
‘ফোটা’ এবং ‘ফোঁটা’-এর মাঝে পার্থক্য ঘটে অর্থখানি,
‘কাদা’ ও ‘কাঁদায়’ রয়েছে ভিজে মাটি, চোখের পানি।
‘বাঁধা’ অর্থ বন্ধন, লিখতে ব-এর উপর চন্দ্রবিন্দু দাও,
‘বাধা’ অর্থ ‘প্রতিবন্ধকতা’, এবার চন্দ্রবিন্দু তুলে নাও।
কোনো নারীকে ‘দর্শন’ করে লেখো যদি করেছি ধর্ষণ,
এই দুনিয়ার সকল মানুষ তোমায় ঘৃণা করবে যে বর্ষণ।
‘চুরি’ ও ‘চুড়ি’র মাঝে আকাশ-পাতাল আছে ব্যবধান,
‘বিষ’-কে ‘বিশ’ লিখে সেটা খেলে কি বেঁচে যাবে প্রাণ?
‘করুণ’ শব্দকে কেউ যদি না জেনে ‘করুন’ লিখে ফেলো
যেটা তুমি বলতে চেয়েছো তার অর্থ উল্টে-পাল্টে গেল।
‘শ্বশুর’ লিখতে ‘ব’ লাগে, কিন্তু ‘শাশুড়ী’ লিখতে নাই,
‘সার্থক’ লিখতেও ‘ব’ নাই, কিন্তু ‘স্বার্থ’ লিখতে পাই।
‘স্বপরিবারে’ লিখলে কেউ সেটা ‘নিজের পরিবার’ হয়,
‘সপরিবারের’ অন্য অর্থ ‘পরিবারসহ’, একা একা নয়।
‘ভাইকে’ যদি ‘ভাই কে’ লেখো তা প্রশ্নবোধক হয়ে যায়,
‘আমিও’-কে ‘আমি ও’ লিখলে ‘ও-প্রত্যয়’ হয় অব্যয়।
‘কাকা’-কে কেউ ‘কা কা’ লিখলে হবে যে ভীষণ মজা,
নিজের চাচা তার কান মলে তারে দিবে ভীষণ সাজা।
‘কিভাবে’ শব্দটাকে কেউ না বুঝে ‘কি ভাবে’ লিখলে
জানো কি তুমি কতবড় মারাত্মক একটা ভুল করলে?
‘কিভাবে’র অর্থ হলো, সে কেমন করে কর্মটাকে সারে,
আর ‘কি ভাবে’র অর্থ হয় সে বা তারা কী চিন্তা করে।
‘আশা’-কে ‘আসা’ লিখলে জীবনে নেমে আসবে হতাশা,
আশা হারিয়ে ফেললে তুমি কিসের উপর করবে ভরসা?
লেখার জন্য বেছে নেয়ার সুযোগ রয়েছে যেকোনো বিষয়,
কিন্তু লেখাটা হতে হবে নির্ভুল, শুদ্ধ আর সঠিক নিশ্চয়।
কোনো লেখা না পড়ে, না বুঝে যারা ছড়াও প্রশংসাবাণী,
জ্ঞানী তো নও তোমরা কেউ, তোমাদের আমি মূর্খ জানি।
সেরা পাঠক হওয়ার জন্য করো থাকো কত যে মিথ্যাচার,
লিখো, কী অসাধারণ অতুলনীয়, হয়েছে অতিচমৎকার।
আছে যাদের লজ্জা-শরম, আছে ভাইরে মান আর সম্মান,
লেখার আগে তুমি অর্জন করে নাও শুদ্ধভাবে ভাষাজ্ঞান।
ভুল করা তো দোষের নয়, ভুলটাই সে যখন আঁকড়ে রয়,
ভুল সংশোধন করে নেয় না যে তখন-ই তা দোষের হয়।
শুদ্ধ ভাষায় লিখলে কিছু তা পড়তে খুব-ই ভালো লাগে,
সেই লেখকের সব লেখা পড়তে মনে সবার আগ্রহ জাগে।
রাগ কোর না কেউরে ভাই, সবার-ই আমি কল্যাণ চাই,
লেখক-কবি সবাই যে আমার অতি আপন বোন ও ভাই।
আমারও ভুল হতে পারে, করি না তো গর্ব ও অহংকার,
আমার ভুলটাও ধরিয়ে দিতে দিলাম সবাইকে অধিকার।
২৪. ০৯. ২২
১ Comment
very nice poetry; congratulations