সাদিয়া নাজিব’র কবিতাগুচ্ছ:
“নিঃশব্দ কথা”
জানি তুমি আমাকেই দেখতে আসো
নানা ছলে, নানা ছুঁতোয়
রেখে যাও স্পর্শ ঘাসে, মাটিতে।
যেখানে যে পথে আমি চলি
চিহ্ন ফেলে যাও তুমি সেই পথে পথে।
তোমার সংকেত, গোপন দীর্ঘশ্বাস
কিছুই গোপন নয় আমার কাছে।
আমি জানি অনেকের ভিড়ে হাজার কথামালার মাঝে
কোন কথাটি শুধু আমার জন্য তোলা।
হৃদপিন্ড আমার ধক ধক করে লাফিয়ে ওঠে
তোমার গোপন আহ্বানে।
ভীরুর মতো বাতাসেই বার্তা পাঠিয়ে
একলা হও নিজস্ব কথোপকথনে।
এর নাম কি দেবো জানি না
যে অনুভূতি কোন চাওয়া পাওয়া হীন
লেনা দেনার ভাষা যার নেই
শুধুই গোপন, শুধুই দীর্ঘশ্বাস!
মনের তারে ঝংকার ফেলে
স্বপ্নের লাগাম ছিঁড়ে
বৃত্তের বাইরে সাহসী হয়েই দেখো না!
কথা দিলাম বিপদে ফেলবো না
তোমার ঘর্মাক্ত ক্লান্ত শরীরে
ভালোবাসার ঝর্ণাধারা হবো।
প্রিয় সপ্তর্ষি
খোঁপায় জ্বালতো আলো প্রিয় সপ্তর্ষি
চুমে আমার অগণন কেশ।
দিঘল, লাজরাঙা, লজ্জাবনত কালো কেশ।
মেঘেরা পুড়তো ঈর্ষায়।
সারারাত ধরে গাইতো গান
অত্রি, অঙ্গিরা, পুলহ, পুলস্ত্য…
তাঁরা সাতজন।
সাত মুগ্ধ ঋষি।
ঘুম ছিলো না আমার চোখে।
জেগে জেগে শুনতাম ওদের কেশ বন্দনা।
মাঝরাতে শুকতারার দ্যুতি
ঝল্কে উঠতো চোখের তারায়
পরানে উথলে উঠতো প্রেম।
আকাশের ওই বুড়ো ভালুক
গভীর রাতে হতে চাইতো
আমার প্রেমজ বিধাতা।
একলা রাতে, আমার সাথে জেগে ছিলো
অসংখ্য কাব্য, সুর।
ক্রমশ নিশি হারালো পথ
দূর বহুদূর।
লাজরাঙা কালো কেশ থেকে ঝরে পড়লো
সাতটি তারার ফুল; ধ্যানমগ্ন সাত ঋষি।
নিভে গেলো অনেক আলোর ভিরে
প্রিয়তম নক্ষত্র খচিত রাত
প্রিয় সপ্তর্ষি…।
‘ধ্যানস্থ’
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় মিশে যাচ্ছো তুমি নারী
প্রিয় রমণী আমার!
তামাক পোড়া ঠোঁট
ছুড়ছে হাওয়ায় বৃত্ত মুহুর্মুহু
তুমি তার কেন্দ্রে ঘুরছো বিচিত্র ভঙ্গিমায়
নাচছো ত্রিতালে ছৌ!
কংক্রিটে ফুটছে দারুণ সব বোল
আঙুলের টোকায় টোকায়।
ফ্যাকাশে, ফাটাফুটা পুরনো জিন্সে
শিষ বাজাচ্ছে তুমুল প্রেম
আহা সুন্দরী!
অন্তরে এ কি জ্বালা ঢেলেছো
বিবর্ণ ঠোঁট ব্যস্ত ব্যাকুল
জ্বালতে আগুনের ফুলকি
হাতরে মরে দিয়াশলাই
তামাকের সাহচর্য
আর
তোমার রাঙা ওষ্ঠের মতো
বিষাক্ত নীলাভ মদিরা..
আমার ‘ললিত’, আমার পুনশ্চঃ
তখন শেষ প্রহরে যামিনী
ভিজে গেছে ললিত রাগ
চোখের পাতায়।
চৌরাশিয়া মূর্ছনায়
শেষ বেলা।
তুমি এলে অনাহুত
বেদনা ঢেলে
আবার কে কাঁদায়
এই অবেলায়!
দীর্ঘ সন্ন্যাসে কেটে গেছে কতো জল-জোছনা
ডেকে গেছে কুহু
ফেলে মায়া মরিচীকা
তবু ‘প্রেম’, তুমি কেনো কড়া নাড়ো
কেনো ঝড় তোলো একলা শয্যায়
চোখের পাতায়
ললিত রাগে
শেষ মধু বসন্তে!
ডুবে থাকা নিঃসঙ্গ নিমজ্জনে!
আমার শেষ প্রহরের ‘ললিত’
আমার পুনশ্চঃ
খুচরো পয়সার মতো
কতগুলো প্রেম পড়ে আছে মনের থলিতে
কিছু আছে সিকি
কিছু আধুলি।
একটি পূর্ণাঙ্গ নোটের অপেক্ষায়
আমি পথে পথে ঘুরি
হতদরিদ্র এক প্রেম ভিখারি….।
১ Comment
very good job; congratulations.