১৪৭ বার পড়া হয়েছে
শচীন দেব বর্মণ জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি
জন্ম: ১ অক্টোবর ১৯০৬
মৃত্যু: ৩১ অক্টোবর ১৯৭৫
“তাকদুম তাকদুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল”,
১৯৭৫ সালে দেহাবসান হলেও এখনও যেন বাংলাদেশের ঢোল বাজিয়ে চলেছেন শচীন দেব বর্মণ। যাকে উপমহাদেশে শচীন কর্তা বলেই সম্বোধন করা হয়। কিংবদন্তিতুল্য এই সংগীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার, লোকসংগীত শিল্পী ও গায়ক জন্মগ্রহণ করেন কুমিল্লায়। তিনি ছিলেন চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবারের সন্তান। বাবা নবদ্বীপ চন্দ্রবর্মণ, মা মণিপুরের রাজকন্যা নিরুপমা দেবী। বাবার কাছেই সংগীতে হাতেখড়ি শচীন দেব নর্মণের। কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক, ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করে, তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। ১৯২৩ সালেই আকাশবাণী কোলকাতায় তিনি প্রথম গান করেন। ১৯৩১ সালে তার বাবা কোলকাতায় প্রয়াত হন, সে সময় তিনি ত্রিপুরার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। ত্রিপুরা রাজ্যের উচ্চতর পদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে, তিনি কোলকাতার ত্রিপুরা প্যালেসও ত্যাগ করে সামান্য একটি ভাড়া করা বাড়িতে চলে যান। এ বিষয়ে নিজের আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, “পিতার মৃত্যুর পর আমি যেন অগাধ জলে পড়ে গেলাম। এই অবস্থায় আমি আগরতলা বা কুমিল্লা গিয়ে থাকলে রাজকীয় আরামে ও নিশ্চিন্তে নিজেদের বাড়িতে বাস করতে পারতাম এবং রাজ্য সরকারের কোনো উচ্চপদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম। আমার বড় ভাইরা আমাকে তাই করতে বললেন। আমার কিন্তু এ ব্যবস্থা মনঃপূত হলো না। নিজে একলা সংগ্রাম করে, নিজে উপার্জন করে সঙ্গীত সাধনায় জীবন কাটিয়ে দেব। মনের মধ্যে একমাত্র এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কলকাতার ত্রিপুরা প্রাসাদ ছেড়ে ভাড়া করা সামান্য একখানা ঘরে আমার আস্তানা বাঁধলাম”। বিলাসী জীবনের মোহ ছেড়ে, সংগীত সাধনার জন্য শচীন দেব বর্মণের এই ত্যাগ বৃথা যায়নি। ভারতের পদ্মশ্রী পদকসহ অনেক অনেক দেশি এবং বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত এই মানুষটি আজও উপমহাদেশের সংগীত ভূবণে “কর্তা” হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছেন। ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর তৎকালীন বৃটিশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কুমিল্লায় (বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলা) জন্মগ্রহন করেন শচীন দেব বর্মণ। বাংলা গানের এই কিংবদন্তী কে, আমাদের শ্রদ্ধা।
শচীন দেববর্মণ (১ অক্টোবর, ১৯০৬ – ৩১ অক্টোবর, ১৯৭৫) বিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় বাংলা ও হিন্দী গানের কিংবদন্তীতুল্য ও জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক , সুরকার , গায়ক ও লোকসঙ্গীত শিল্পী । প্রায়শ তাকে এস ডি বর্মণ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। কিছুটা অনুনাসিক কণ্ঠস্বরের জন্য তিনি তার শ্রোতাদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত। প্রায় একশো বছর পার করেও বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে তার কালোত্তীর্ণ গানের আবেদন কিছুমাত্র লঘু হয়নি। কেবল সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে নয়, গীতিকার হিসাবেও তিনি সার্থক। তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পুত্র রাহুল দেববর্মণ ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীতপরিচালক এবং সুরকার ছিলেন। তার ছাত্রী এবং পরবর্তীতে সহধর্মিনী মীরা দেববর্মণ গীতিকার হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন।
শচীন দেববর্মণ জন্ম কুমিল্লায়৷ তবে আদিবাস বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে৷ তিনি ছিলেন ত্রিপুরার চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবারের সন্তান। বাবা নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মণের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন। তৎকালীন ত্রিপুরার অন্তর্গত কুমিল্লার রাজপরিবারের নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। মা মণিপুর রাজবংশের মেয়ে নিরুপমা দেবী। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ঐ কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ তে ভর্তি হন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস করতে শুরু করেন ছোটবেলা থেকে সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগী ছিলেন।। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে প্যারালিটিক স্ট্রোক হয়ে কোমায় ছিলেন পাঁচ মাস। ৩১ অক্টোবর, ১৯৭৫ তার প্রয়াণ হয়।
কুমিল্লার ঐতিহাসিক অভয় আশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক সংগীত প্রাণ প্রয়াত শ্রী পরিমল দত্তের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, শহরের চর্থা এলাকার গোল পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের এই বাড়িটি ছিল তৎকালীন ভারত বর্ষের ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক বাহাদুরের সৎভাই মহারাজ নবদ্বীপ কুমার দেব বর্মন বাহাদুরের। ত্রিপুরার এই মহারাজার স্ত্রী ছিলেন বেশ কয়েকজন। তার মধ্যে পাটরাণী পুত্র মহারাজা নবদ্বীপ কুমার দেব বর্মন বাহাদুরকে আরেক রাণীর পুত্র বীরচন্দ্র মানিক বাহাদুর হত্যা করতে উঠে পড়ে লাগলে উপায়ান্তর না দেখে মহারাজ নবদ্বীপ রাজ বাড়ির কর্মকর্তা শ্রী কৈলাস সিংহের পরামর্শে সপরিবারে কুমিল্লায় চলে আসেন। জানা যায়, বিখ্যাত ‘রাজমালা’ গ্রন্থটি কৈলাশ সিংহ রচনা করেছিলেন। কৈলাস সিংহের পরামর্শে মহারাজ নবদ্বীপ সিংহাসনের দাবীও এ সময় ছেড়ে দিয়েছিলেন। কুমিল্লা শহরের পূর্ব চর্থায় অবস্থিত এ বাড়িটি তৎসময়ে নির্মিত হয়েছিল। বাড়িটি দেখতে কুমিল্লা শহরের ব্রিটিশ আমলে তৈরী বাড়িগুলোর মতোই মনে হয়। কোন রাজ প্রসাদের মত দেখতে এ বাড়িটি নয়। এই কুমার দেববর্মণ বাহাদুরের পুত্রই হলেন শচীন দেব বর্মন।
বাবা নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মণ ছিলেন একজন সেতারবাদক এবং ধ্রূপদী সঙ্গীতশিল্পী। তিনিই ছিলেন শচীন দেববর্মণের প্রথম শিক্ষক। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে হতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণচন্দ্র দের কাছে সঙ্গীতচর্চা করেন। এরপর তার সঙ্গীত শিক্ষা চলে উস্তাদ বাদল খান এবং বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। ধ্রূপদী সঙ্গীতের এই শিক্ষা তার মধ্যে সঙ্গীতের মৌলিক জ্ঞান সঞ্চারে গভীর ভূমিকা পালন করে। এই শিক্ষা তার পরবর্তী জীবনের সুর-সাধনায় প্রভাব বিস্তার করেছিল। পরবর্তীতে তিনি উস্তাদ আফতাবউদ্দিন খানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। শহরের চর্থা এলাকার শচীন দেববর্মনের বাড়ির উল্টো দিকে অবস্থিত মুন্সি বাড়ির ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাড়ির জমিদার সালাহউদ্দিন আহম্মেদ প্রকাশ মর্তুজ মিয়ার বন্ধু ছিলেন শচীন দেববর্মণ। মর্তুজ মিয়ার পরিবারিক ইতিহাস থেকে শচীন দেবের গায়ক হওয়ার পিছনের চমকপ্রদ তথ্য জানা যায়। জানা যায়, কৈশোরে একদিন শচীন দেববর্মণ ও মর্তুজ মিয়া যখন মুন্সি বাড়ির সামনের রাস্তায় রাতের বেলায় পায়চারী করছিলেন তখন শচীন দেব গুণগুন করে গান গাইছিলেন। এ সময় বাড়ির সামনে বসা জমিদার নাবালক মিয়া বাড়ির চাকর সফর আলীকে রাস্তায় গান গাওয়া ছেলেটাকে ডেকে আনতে বললেন। সফর গিয়ে শচীন দেবকে বললেন, শচীন কর্তা আপনাকে হুজুর ডেকেছে। তখন শচীন দেববর্মণ ভয় পেয়ে যান। পরে অভয় দিয়ে তাকে ডেকে এনে নাবালক মিয়া জিজ্ঞাসা করেন, তোর তো গলা ভালো, কোন বাদ্য যন্ত্র আছে কিনা? তখন শচীন না সূচক উত্তর দিলে জমিদার নাবালক মিয়া পিয়ানো, হারমোনিয়াম, তবলাসহ সংগীতের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কিনে তার নিজ গৃহের একটি কে সংগীত সাধনের ব্যবস্থা করে দেন। কানাকেষ্ট নামের এক তবলচি রেখে দেন। সে থেকে সংগীতে শচীনের উত্থান ঘটে।
কুমিল্লায় শচীন দেববর্মণের পরিত্যক্ত পৈতৃক ভিটা। বীরচন্দ্র মাণিক্যের অর্থানুকূল্যে, কুমিল্লার চর্থায় ৬০ একর জমি নিয়ে প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন কুমার বাহাদুর নবদ্বীপচন্দ্র। এই প্রাসাদে ১৯০৬ সালের পয়লা অক্টোবর তার ছোট সন্তান শচীন দেববর্মণের জন্ম। ১৯১০ থেকে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঠাকুরপাড়ার সুরলোক, কান্দিরপাড়ের সবুজ সংঘ নাট্যদল, দি গ্রেট জার্নাল থিয়েটার পার্টি, ইয়ংম্যান্স ক্লাব ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠেছিল কুমিল্লার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। ত্রিপুরার মহারাজারা কুমিল্লায় তৈরি করেছেন টাউনহল, নাট্যশালা, লাইব্রেরি এবং নানা সংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে শচীন দেবের বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন সুরসাগর হিমাংশু দত্ত, অজয় ভট্টাচার্য, মোহিনী চৌধুরী, সমরেন্দ্র পাল, কাজী নজরুল ইসলাম, শৈলবালা দাম, ধ্রুপদীয়া সৌরেন দাশ, সুধীন দাশ প্রমুখ। সেখানে নিয়মিত আসতেন চলচ্চিত্র পরিচালক সুশীল মজুমদার, ননী মজুমদার, ব্রজেন ব্যানার্জি, জিতু দত্ত, অরুণ মহলানবিশ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। গানের ধরন ছিল ভোরকীর্তন, নগরকীর্তন, কবিগান, ঢপযাত্রা। সাহিত্যিক, সুরকার, গীতিকার, কবি ও সঙ্গীতজ্ঞগণ একত্রিত হতেন ইয়ংমেন্স ক্লাবে। আড্ডা থেকে ভেসে আসত নজরুল ও শচীন দেবের গান। নজরুল কুমিল্লা এলে থাকতেন তালপুকুরের পশ্চিমপাড়ে একটি ঘরে। কুমিল্লা থেকে শচীন দেব কলকাতা চলে আসেন ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে তিনি প্রথম গান করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে পিতা নবদ্বীপচন্দ্র কলকাতায় দেহত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন ত্রিপুরার প্রধানমন্ত্রী। শচীন দেব তখন থাকতেন কলকাতার ত্রিপুরা প্যালেসে। নিজের লেখা সরগমের নিখাদ নামক আত্মজীবনীতে শচীন দেববর্মণ স্বয়ং লিখেছেনঃ “পিতার মৃত্যুর পর আমি যেন অগাধ জলে পড়ে গেলাম। এই অবস্থায় আমি আগরতলা বা কুমিল্লা গিয়ে থাকলে রাজকীয় আরামে ও নিশ্চিন্তে নিজেদের বাড়িতে বাস করতে পারতাম এবং রাজ্য সরকারের কোনো উচ্চপদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম। আমার বড় ভাইরা আমাকে তাই করতে বললেন। আমার কিন্তু এ ব্যবস্থা মনঃপূত হলো না। নিজে একলা সংগ্রাম করে, নিজে উপার্জন করে সঙ্গীত সাধনায় জীবন কাটিয়ে দেব। মনের মধ্যে একমাত্র এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কলকাতার ত্রিপুরা প্রাসাদ ছেড়ে ভাড়া করা সামান্য একখানা ঘরে আমার আস্তানা বাঁধলাম।”
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অডিশনে ফেল করলেন ভারতের রেকর্ড প্রস্তুতকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এইচএমভিতে। তবে সে একই বছর তার প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড বের হয় হিন্দুস্তান মিউজিক্যাল প্রোডাক্টস থেকে শচীন দেবের প্রথম রেকর্ডকৃত দুটি গান হল পল্লীগীতির ঢঙে গাওয়া “ডাকিলে কোকিল রোজ বিহানে” যার গীতিকার হেমেন্দ্র কুমার রায় এবং খাম্বাজ ঠুমরি অঙ্গের রাগপ্রধান “এ পথে আজ এসো প্রিয়” যার গীতিকার শৈলেন রায়। ১৯৩০-এর দশকে তিনি রেডিওতে পল্লীগীতি গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পূর্ব বাংলা এবং উত্তর-পূর্ব বাংলার পল্লীগীতির উপর তার বিশেষ ঝোঁক ছিল।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে অল ইন্ডিয়ান মিউজিক কনফারেন্সে তিনি গান গেয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে ঠুমরি পেশ করে ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁকে মুগ্ধ করেছিলেন। শেখ ভানুর রচনা ‘নিশিথে যাইয়ো ফুলবনে’ দেহ ও সাধনতত্ত্বের গানটিকে প্রেমের গানে রূপান্তর করলেন কবি জসীমউদ্দীনকে দিয়ে এবং রূপান্তরিত এই গানটি রেকর্ড করলেন ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৩৭ এ মীরা ধরকে বিয়ে করেন। মীরা ধর ছিলেন তার সঙ্গীত জীবনের বিশ্বস্ত সঙ্গী। বাংলা গানের জগতে মীরা ধর তথা মীরা দেববর্মণ অন্যতম সার্থক গীতিকার। তার লেখা গানের মধ্যে আছে;
শোন গো দখিন হাওয়া,
বিরহ বড় ভাল লাগে,
সুবল রে বল বল,
বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে,
কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে লেখা
তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল।
সঙ্গীত পরিচালনা সম্পাদনা
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজগী নামক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার সঙ্গীত পরিচালনা জীবনের শুরু। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান হলো:
যদি দখিনা পবন (রাগপ্রধান)
প্রেমের সমাধি তীরে (কাব্যগীতি)
নিশীথে যাইও ফুলবনে (পল্লিগীতি)
বধুঁগো এই মধুমাস (পল্লিগীতি)
ওরে সুজন নাইয়া (পল্লিগীতি)[৩]
নির্বাচিত চলচ্চিত্র সম্পাদনা
সুদূরের প্রিয়ে (১৯৩৫)
রাজগি (১৯৩৭)
যখের ধন (১৯৩৯)
আমার গীতি (১৯৪০)
নারী (১৯৪০)
রাজকুমার নির্বাসন (১৯৪০)
প্রতিশোধ (১৯৪১)
অশোক (১৯৪২)
অভয়ের বিয়ে (১৯৪২)
জীবন সঙ্গী (১৯৪২)
মহাকবি কালিদাস (১৯৪২)
মিলন (১৯৪২)
জজসাহেবের নাতনী (১৯৪৩)
ছদ্মবেশী (১৯৪৪)
মাটির ঘর (১৯৪৪)
প্রতিকার (১৯৪৪)
কলঙ্কিনী (১৯৪৫)
মাতৃহারা (১৯৪৬)
এইট ডেইজ (১৯৪৬)
শিকারী (১৯৪৬)
দিল কি রাণী (১৯৪৭)
দো ভাই (১৯৪৭)
চিত্তর বিজয় (১৯৪৭)
বিদ্যা (১৯৪৮)
শবনম (১৯৪৯)
কামাল (১৯৪৯)
মশাল / সমর (বাংলা ভাষায়) (১৯৫০)
আফসার (১৯৫০) (নবকেতানের প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র)
পিয়ার (১৯৫০)
বুযদিল (১৯৫১)
সাজা (১৯৫১)
নওজোয়ান (১৯৫১)
বাজি (১৯৫১)
বাহার (১৯৫১)
এক নজর (১৯৫১)
জাল (১৯৫২)
লাল কুনওয়ার (১৯৫২)
আরমান (১৯৫৩)
শাহেনশাহ (১৯৫৩)
বাবলা (১৯৫৩)
জীবন জ্যোতি (১৯৫৩)
টেক্সি ড্রাইভার (১৯৫৪)
আঙ্গারেয় (১৯৫৪)
রাধাকৃষ্ণ (১৯৫৪)
চল্লিশ বাবা এক চোর (১৯৫৪)
দেবদাস (১৯৫৫)
মুনিমজী (১৯৫৫)
হাউস নং. ৪৪ (১৯৫৫)
সোসাইটি (১৯৫৫)
মদ ভারে নেইন (১৯৫৫)
ফান্টুশ (১৯৫৬)
পেয়িং গেস্ট (১৯৫৭)
পেয়সা (১৯৫৭)
নও দো গেয়ারাহ (১৯৫৭)
মিস ইন্ডিয়া (১৯৫৭)
সোলভা সাল (১৯৫৮)
লাজওয়ান্তি (১৯৫৮)
চলতি কা নাম গাড়ি (১৯৫৮)
কালা পানি (১৯৫৮)
সিতারো সে আগে (১৯৫৮)
সুজাতা (১৯৫৯)
কাগজ কে ফুল (১৯৫৯)
ইনসান জাগ উঠা (১৯৫৯)
মাঞ্জিল (১৯৬০)
কালা বাজার (১৯৬০)
বোম্বাই কা বাবু (১৯৬০)
মিঁয়া বিবি রাজি (১৯৬০)
আপনা হাথ জাগান্নাথ (১৯৬০)
বেওয়াকুফ (১৯৬০)
এক কে বাদ এক (১৯৬০)
বাত এক রাত কি (১৯৬২)
ডা. বিদ্যা (১৯৬২)
নটি বয় (১৯৬২)
বন্দীনি (১৯৬৩)
মেরি সুরাত তেরি আঁখে (১৯৬৩)
তেরে ঘার কে সামনে (১৯৬৩)
জিদ্দি (১৯৬৪)
কেইসে কাহো (১৯৬৪)
বেনাজির (১৯৬৪)
তিন দেবিয়াঁ (১৯৬৫)
গাইড (১৯৬৫)
জুয়েল থিফ (১৯৬৭)
তালাশ (১৯৬৯)
আরাধনা (১৯৬৯)
জ্যোতি (১৯৬৯)
প্রেম পূজারী (১৯৭০)
ইশক পার জোর নাহি (১৯৭০)
গাম্বলার (১৯৭১)
নয় জামানা (১৯৭১)
শর্মিলী (১৯৭১)
চৈতালী (১৯৭১)
তেরে মেরে সাপ্নে (১৯৭১)
ইয়ে গুলিস্তান হামারা (১৯৭২)
জিন্দেগী জিন্দেগী (১৯৭২)
আনুরাগ (১৯৭২)
অভিমান (১৯৭৩)
জুগনু (১৯৭৩)
চুপা রুস্তম (১৯৭৩)
ফাগুন (১৯৭৩)
উস পার (১৯৭৪)
প্রেম চলচ্চিত্র (১৯৭৪)
সাগিনা (১৯৭৪
চুপকে চুপকে (১৯৭৫)
মিলি (১৯৭৫)
বারুদ (১৯৭৬)
অর্জুন পণ্ডিত (১৯৭৬)
ত্যাগ (১৯৭৬)
দীভাঙ্গী (১৯৭৬) only one song, remaining songs were composed by Ravindra Jain
আরাধনা (১৯৭৬)
সাজা (মুক্তি পায়নি)
২০০৭ সালে শচীন দেববর্মণ স্মরণে ডাকটিকিট (Rs.১৫ সম মূল্যের) প্রকাশ করা হয়
১৯৩৪: স্বর্ণপদক, বেঙ্গল সর্বভারতীয় সঙ্গীত সম্মেলন, কলকাতা ১৯৩৪
১৯৫৮: সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার
১৯৫৯: এশিয়া ফিল্ম সোসাইটি অ্যাওয়ার্ড
১৯৬৪: সেন্ট হরিদাস অ্যাওয়ার্ড
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
১৯৭০: শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী: আরাধনা: সফল হোগি তেরি আরাধনা
১৯৭৪: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: জিন্দগি জিন্দগি
১৯৬৯: ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী খেতাব লাভ।
ফোক সঙ্গীতের জন্য আন্তর্জাতিক জুরি
২০০৭: তার স্মরণে একটি ডাক টিকিট (সম্মুখ মূল্য Rs ১৫) মুক্তি দেওয়া হয়
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার
১৯৫৪: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: ট্যাক্সি ড্রাইভার
১৯৭৩: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: অভিমান
১৯৫৯: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: সুজাতা: মনোনয়ন
১৯৬৫: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: গাইড: মনোনয়ন
১৯৬৯: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: আরাধনা: মনোনয়ন
১৯৭০: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: তালাশ: মনোনয়ন
১৯৭৪: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: প্রেম নগর: মনোনয়ন
বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড
১৯৬৫: শ্রেষ্ঠ সুরকার (হিন্দি বিভাগ): তিন দেবীয়া
১৯৬৬: শ্রেষ্ঠ সুরকার (হিন্দি বিভাগ): গাইড
১৯৬৬: শ্রেষ্ঠ পুরুষ প্লেব্যাক গায়ক (হিন্দি বিভাগ): গাইড
১৯৬৯: শ্রেষ্ঠ সুরকার (হিন্দি বিভাগ): আরাধনা
১৯৭৩: শ্রেষ্ঠ সুরকার (হিন্দি বিভাগ): অভিমান