শ্যামল ছায়া
সুরমা খন্দকার।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মর্নিং ওয়ার্ক করতে করতেই দেখা রাকার সাথে রেশমীর। বয়সের কারণেই আন্টি বলে সম্বোধন। রেশমী আন্টির সাথে পূর্বে কখনও পরিচয় হয়নি রাকার। রেশমি আন্টি মাঝবয়েসী একজন, যাকে দেখলে খুব আপন আপন মনে হয়, ব্যক্তিগত জীবনে খুব স্ট্রং প্রিন্সিপিলিটি রাখেন।
চলুন হাঁটার কাজটা শেষ করি, দুইজনই একসাথে হাঁটার মজাই আলাদা। গল্প করা যাবে। যদিও বাসায় ফিরতে হবে, বাচ্চাদের স্কুল, সাহেবের নাস্তা দিতে হবে, অফিস আছে তার। হাঁটতে হাঁটতে আলাপ, যেন অনেক দিনের পরিচয়।
প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন রেশমী আন্টি। বি,এ পড়া অবস্থায় শ্যামল নামের এক ছেলেটিকে আপন করে নিলেন। যদিও পরিবারের সম্মতি নিতে কষ্টই হয়েছিল।
সে যাক। ভালোই যাচ্ছিলো সংসার জীবন। কম ইনকাম হলেও পরিবার ছিল সুখের নীড়।
বিয়ের তিন মাসের মাথায় রোড এক্সিডেন্টে শ্যামল সাহেব ওপারে পাড়ি জমান। চার ভাই বোনের মধ্যে আন্টি ছিলেন তৃতীয়। ভাইবোনরা উনাকে দ্বিতীয় বার কারো সাথে আবদ্ধ হওয়ার জন্য চেয়েছেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।
বাবার অঢেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তিনি সাধারণ জীবন যাপন বেছে নিয়েছেন।
শ্যামলকে হারিয়ে একাকী জীবন পার করতে রেশমি আন্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এক ঘরে হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর আবার নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলেন। জীবনের কত প্রহর কেটে গেছে। সঙ্গত অধিকারগুলো জীবন থেকে না পেয়ে উনি ব্যথিত হলেও ভেঙে পড়েননি। বিপর্যস্ত হয়েছিলেন, অপ্রস্তুত হয়েছিলেন। একাকী দূর্গম পথে চালিয়েছেন মহত্ত্বের রথ।
বাবা বেঁচে থাকতেও চেয়েছিলেন বিয়েটা করে সংসারী করতে। বাবা যা সম্পদ দিয়ে গিয়েছিলেন, তাতে একটা বৃদ্ধাশ্রম করেছেন ‘শ্যামল ছায়া’ নামে, আর একটা বাড়ি দিয়েছেন, যার আয় চ্যারিটিতে দান করেন। আর নিজে উপার্জন করে নিজে চলেন।
এতকিছু শোনার পর রেশমী আন্টির প্রতি কেমন সম্মানিতবোধ করছে রাকা।
একদিন সব ভয়, লজ্জা, দ্বিধা উপেক্ষা করে রেশমী আন্টি-কে রাকা বলে,
আন্টি একটু কথা বলবো?
বললো হ্যাঁ বলো-
– একটু ব্যক্তিগত। রাকা বললো।
– ঠিক আছে বাসায় এসো।
কয়েক দিন পর রাকা রেশমী আন্টির বাসায় গিয়ে দারুণ আড্ডা দেয়। রাকা-কে খুব আপন করে নিয়েছেন আন্টি।
এর পর মাঝে সাঝে দুইজনই মর্নিং ওয়ার্ক, কখনও বাসায় ছুটিয়ে আড্ডা জমে।
আজকেও বাসায় সুন্দর একটা আড্ডা হলো, অনেক না বলা কথা আন্টি আজকে আমাকে শুনালেন।
রেশমী আন্টি এমন একজন জয়ী মানুষ যে তার আত্মাকে নিজের অধীন করতে পেরেছিলেন। পার্থিব অন্বেষণে পরাজিত হননি। ভিতর জুড়ে যে অক্ষয় সুখ প্রদ্বীপ জ্বালিয়েছেন।
চির জ্যোতিময়!
নাহি তার ক্ষয়!
নাহি তার পরাজয়!
একদিন আন্টিকে রাকা বলে, তারপর—-?
আন্টি বলে তুমি কি বলবে আমি জানি- আমি এ বিষয়ে কারো সাথে কথা বলিনি, বলি না। তোমাকে অন্যরকম মনে হয় তাই –
এই প্রথম আন্টি রাকাকে বললো-
– সুচী, পৃথিবী মুখ ফিরিয়ে নেয় বলে সূর্য অস্ত মনে হয়।
সত্য প্রেমে ঔজ্জ্বল্য স্থির। আমরা পারি না তাকে মূল্য দিতে।
কিছু ভালোবাসা নিঃস্বার্থ হয়।
দেখা হবে না, পাওয়া হবে না।
তবু ভালোবাসা থাকে
অফুরান অক্ষয়।
আর দু’জন মানুষ যখন কথা হয়। তখন ছেড়ে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি হয়।
শ্যামল-তো আমায় ছেড়ে যায়নি।
আমি ওকে কীভাবে ছেড়ে যাই?
আমি আন্টির বাসা থেকে বের হয়ে আসছি আর ভাবছি।
অদর্শনে প্রেম হ্রাস পায়।
কিছু ভালোবাসা জীবনের ভোজে অপাংতেয় রয়ে যায়।
তবু প্রজ্জ্বল উজ্জ্বল রয়ে যায়।
২ Comments
Osadhaon
very good job