শেফালির আত্মিক বিণ
[ জেবুন্নেছা সুইটি ]
দীর্ঘ বত্রিশ বছর পর, শেফালীর মনে এ কেমন আবছা আলোয় চকচক করছিল ঝরে যাওয়া কদমফুলের রেণু!
কদমের তলে শেফালী তরে! শেফালির গায়ে কদমের রেণু!
সতেরো বছর পর ফুটেছে তাঁরা আত্মীক বিণে! কেউ হয়তো জানতেই পারবে না, কি হ’য়ে গেছে তাঁদের মাঝে।
একদিন শেফালী কদমকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার কথা তোমার মনে আছে? কতদিন তুমি আমায় বিরক্ত করো না! মনে আছে, প্রতিদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটায় তুমি আমায় গায়ে রেণু ঝরিয়ে দিতে। আমি চুপচাপ তোমার ঝরা ভালোবাসার ঘ্রাণ নিতাম।
তুমি ভাবতে, আমার শোধবোধ কিছুই নেই।
আমি তোমার ভাবনায় লুটোপুটি খেয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিতাম ঘাসের বিছানায়।
তারপর? তারপর, তুমি একদিন প্রকৃতির ইশারায় নিজেই আমার গায়ে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে, ঠুস করে হেলে পড়ে বললে “সরি বাতাস একটু জোরে বইছিল” আমি হেসে বলতাম, তো, তাতেই কি হয়েছে?
আমার কিন্ত তেমন লাগেনি। তুমি ব্যথা পাওনি তো? তুমি বললে, একটু…
আমি জানি ইচ্ছে করেই…
হ্যাঁ, তা হলে কথা বলছো না কেন? বললাম সুভাষ নিতে মধুর লাগে।
তখনই আবার রেণু ঝরাতে আর হাসতে।
আমি আনন্দে আত্মহারা হতাম।
তুমি মুচকি হেসে, একধরনের মায়াবী কামুকতা আড় চোখে তাকিয়ে বললে, “হ্যাঁ সব মনে আছে, তবে আবছা আলোয়ে।
আমি আবার বললাম, আচ্ছা সেই মেঘের কথা মনে আছে? ঐ যে কালো মেঘ, গুড়ুম গুড়ুম বজ্রপাত? তুমি আমাকে আঁকড়ে ধরলে, আমি থরথর করে কাঁপছিলাম। সেইদিন কি যেনো হ’য়েছে… দু’জনাতে! আমি তোমার বাহুতেই ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে তোমায় বললাম, ছেড়ে যেও না, হারিয়ে যেওনা… তুমি বললে “হারালাম কই! আছি, আছি তো, তোমাকে জড়িয়ে, তোমার বাহুডোর।
হ্যাঁ, এক এক করে স…ব মনে পড়ছে…
হঠাৎ শুরু হলো জলোচ্ছ্বাস, তান্ডব, তড়িৎ হাওয়া… এরি মাঝে তুমি ছিটকে পড়লে!
আমি উপড়ে গেলাম মাটি থেকে! মহা প্লাবনে
নদীর বুকে ভাসতে ভাসতে আমি চলে গেলাম সাগরে! আর তুমি কখন যে আমার বুক থেকে ছিটকে পড়ে কোথায় হারিয়ে গেলো… ঠিক আন্দাজ করতে পারলাম না।
হ্যাঁ, আমিও বুঝতে পারেনি তোমাকে ছেড়ে কোথায় কোন উজানে ভাটির দেশে চলে গিয়েছিলাম। আজ বত্রিশ বছর পর, খুব মনে পড়ছে। সেই স্মৃতি বিজড়িত আমাদের ভালোবাসা, খুনসুটি, সেই আত্মিক বিণের সুর, কদমের রেণু আর শেফালীর ঝরা সবুজ ঘাস, ঘাসের বুকে মৃদু হাওয়া, সেই এক অন্য রকম অনুভব!!!
চলনা গো, দু”জন হেঁটে চলি স্মৃতির ডালা সাজিয়ে আমাদের মরণ তলায়। এতদিনে সেখানে হয়তো আমাদের বংশধরেদের খোঁজ পাবো।
আমরাতো মরে গিয়েছিলাম, এতো বছর পরে আবার কেনো দেখা হলো?
দেখাই যখন হ’য়ে গেলো! ক্ষতি কি আবার আরেকটা জীবন গড়ি। হাতে হাত রেখে পায়ে পায়ে হেঁটে, স্মৃতির দুয়ারে বেখেয়ালি মনের ডানা বুনতে জীবনের গল্পে, নতুন করে আবারও পথের দিশা খুঁজেি। চলতো দুজন মিলে স্বপ্ন বিলাসী অনুভব স্বাধীন ভাবে বাঁচি। চলো…
১ Comment
Congratulations