একটা বৃষ্টিস্নাত রাত
শারমীন ইয়াসমিন
“দুঃখটাকে পুষে রাখি
মনের ঐ অতল গহীনে
যতন করে তারে রাখি
লোকচক্ষুর আড়ালে
লোকে বলে কত সুখি
আমি কত সুখি রে।”
আজ ভোরটা খুব রোদেলা।আমার বারান্দায় রোদ পড়ছে। চায়ের সাথে তোমায় ভাবতে বেশ লাগছে –
গতরাতের কথাগুলো সুর হয়ে বাজছে।তোমার সেই টিনের ঘর,মেঠো পথ, আইল পথ,তোমার শৈশব সব যেন চোখে ভাসছে-
আর তোমার সেই প্রিয় শহর, যার অলিতে- গলিতে সর্বএ ছিল তোমার পদচারণা। তুমি ছিলে এখানে রাজা- মহারাজা।আর ছিল কত প্রণয়!
কোথায় গেলো সেইসব আজ? ইচ্ছে করে না, ফিরে পেতে,সেই রঙিন দিনগুলো,একান্ত আপন করে।আমার তো খুব ইচ্ছে করে-
তোমার হাতটি ধরে-
একটা বৃষ্টিস্নাত রাতে টিনের চালে অবিরাম টুপটাপ শব্দে-
নিঃশব্দে তোমার সান্নিধ্যে সারারাত জাগি,উপভোগ করি তোমার স্বপ্নকে,বৃষ্টিকে আর তোমাকে।
ঘরের চারিদিকে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে। চারদিকটা নিশ্চুপ হয়ে গেছে। শুধু মুখোমুখি বসে আছি তুমি আর আমি।
কারো মুখে কোন কথা নেই।তবে কথা হচ্ছে মনে মনে, চোখে চোখে।
বৃষ্টি বেড়েই চলেছে-
উহ্ কি ঠান্ডা লাগছে। তোমার মন যেন স্পর্শ করতে পারছি। আলো- আধাঁরিতে যেন ভেসে যাচ্ছি। মন যে কত কথা বলছে, ভেবেই অবাক হয়ে যাচ্ছি। অথচ কোথায় আমি আর কোথায় তুমি? তুমি তো,রয়েছো,কত শত হাজার হাজার মাইল দূরে । অথচ রয়েছো যেন আত্বার সাথে মিশে। হাত বাড়ালেই যেন তোমাকে স্পর্শ করতে পারি। তুমি কি জানো আমি যে তোমাকে এতো নিবিড়ভাবে অনুভব করি।
তোমার বিছানাটা খুব তুলতুলে আর নরম হবে তো?
কোমলতায়, আবেগে, ভালোবাসায় আমাকে জড়িয়ে নেবে তো?
নীল তোমার খুব প্রিয় রং, আমারও।
আমি নীল শাড়ি পরে কপোলে টিপ পরে
পায়ে আলতা পরে তোমার পাশে বসব।তবে জানো তো শাড়িটা হবে টাঈাইলের মোটা পারের।আর জমিনে থাকবে ছোট ছোট তারার খঞ্জন। এভাবে ভালো লাগবে তো তোমার?
চুলটা দেখতে কিন্ত বেশ লম্বা।একেবারে বাঙালি নারীর কেশ। তুৃমি না হয় খোঁপায় একটা ঘাসফুল পরিয়ে দিও।তাতেই হবে।তবে ভালোবাসাটা দিও উজাড় করে। এখানে কোন কমতি রেখো না।
রাতে এক পেয়ালা গরম গরম চা রেখো।দু’ জনে শেয়ার করে নিবো। তারপর নিশ্চুপ, ঘুমহীন, স্মৃতিময় এ রাত কেটে যাবে।
তারপর ভোরে –
বকুলতলা হয়ে আইল পথ ধরে শিশির ভেজা দুর্বাঘাসে পা ভিজিয়ে আমিও হারিয়ে যেতে চাই-
আমার সেই ফেলে আসা শৈশবে।আ! কি মিষ্টি ছিল সেইদিনগুলো।মাঠের পর মাঠ,ধূ ধূ প্রান্তর কি চমৎকার বিকেলবেলা। বড় ইচ্ছে করে এমন এক সকালে তোমার হাতটা ধরে কোন এক অজানা স্বপ্নলোকে হারাতে।
গতরাতে লিসা তার অতি প্রিয় এক পুরনো বন্ধুর সাথে কথা বলছিল। কথা বলতে বলতে এক সময় অতীতের সেই রঙিন দিনগুলোতে নিজের অজান্তেই হারিয়ে যায়।কখন যে আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি।লিসার কাছে মনে হচ্ছে তার বন্ধুটি বোধ হয় তার কাছেই আছে। লিসার মনে হচ্ছে তার বন্ধু যেন তার পাশেই বসে আছে।কিন্তু না, তার বন্ধুটি তার কাছ থেকে হয়তবা বহু বহু, হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্হান করছে।কোনদিন হয়তবা দেখা নাও হতে পারে।লিসা ভাবে তাতে কি ওকে তো সিন্ধুকে সযতনে ভরে রেখেছি।।মহামূল্য দামি আর প্রিয় বলেই তো লোকচক্ষুর আড়ালে তু্লে রেখেছি।সময়ে- অসময়ে একান্ত আপনার হয়ে কথা বলি।নাইবা হলো তার সাথে দেখা। ভাবতে তো ভালো লাগে যে কেউ একজন আছে,যে আমাকে
সত্যি সত্যি অনেক ভালোবাসে, আমার মঙল কামনা করে। আমার সুখ সমৃদ্ধি কামনা করে।
লিসা নিজের মনের সাথে নিজেই কথা বলছিল। আর পুলকিত ও শিহরিত হচ্ছিল। আজকাল একাএকা থাকতে লিসার বেশ ভালোই লাগে। সমস্ত দিনের কাজের পর নিজেকে নিয়ে ভাবতে লিসার বেশ লাগে।
আমার মন যদি কা্ঁদে কারো জন্য।আমার অন্তর আত্না যদি বিচলিত হয় কারো শুভকামনায়,কাউকে ভেবে যদি সুখ পায় এ মন, তাতে দোষ কি? তাতে খুব কি বেশি ক্ষতি হয় কারো?
মেঘলা আকাশে যদি সূর্য হাসে,তাতে কি পৃথিবীতে অনর্থ ঘটে? কেউ যদি কাউকে ভেবে আনন্দ পায় সেটা কি খুব গুরুতর অপরাধ?
সমুদ্রে যখন জোয়ার আসে কেউ কি পারে তা আটকে রাখতে? ভরা পূর্ণিমায় যখন পৃথিবী সিগ্ধ-
কোমল হয়, তাতে কি চাঁদের বিশেষ কোন ক্ষতি হয়?
প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা যায় হাজারো।কিন্ত ঐ যে মন যে খাঁচায় বন্দি , সে কি সব মেনে নেয়? সে তো মুক্ত আকাশে ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়াতে চায়।
জীবন বড় গতিময়,কাব্যময়।জানা- অজানার স্বপ্নময় ও নান্দনিক সৌন্দর্যময়। কিন্তু কখন কোথায় হারিয়ে যায়, কার সাথে কথা বলতে বুঝা বড়ই মুশকিল।
ক্ষণস্হায়ী এ জীবনে নিজের অজান্তেই কিছু প্রিয় মুখ ভেসে আসে। রয়ে যায় কিছু প্রিয় স্মৃতি।কিন্তু সংসার এক কঠিন জায়গা।বাস্তবতা বড় নিষ্ঠুর।এখানে সবকিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।যেন চতুর্দশপদী কবিতা।এর ব্যতয় হলে জীবন যেন দূর্বিষহ হয়ে ওঠে। মন বলে যেন কিছু থাকতে নেই।কিন্তু কেন? এই ক্ষণস্হায়ী জীবনে কেন এতো বাধা,এতো ববর্ণবৈষম্য।কেন এক একজনের জন্য নিয়ম এক এক রকম হব, ভেবে ভেবে লিসার মন খারাপ হয় যায়।কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক থাকে তারপর আস্ত আস্ত স্বাভাবিক হয়ে যায়। লিসা ভাবে এরই নাম হয়তবা জীবন।কিন্ত জীবন কি আরও সুন্দর ও সহজ হতে পারে না?
চলবে।