শতাব্দীর চুম্বন
সাঈদা আজিজ চৌধুরী
পৃথিবীর অন্দরে নীলিমার বন্দরে কি বিস্ময়করভাবে বেঁচে আছি !
শতাব্দীর সিঁড়িপথে কার্নিশে পদযুগল, ধাপগুলো ধীর লয়ে হেঁটে চলেছি
উদয়াস্তের কালান্তরে শিশিরের ঝরে পড়া, সোনালি সূর্য
ঋতুর পাখিদের আসা যাওয়ার পথে পথে পাহাড়ের বুকে নিরোদপুঞ্জ
বেঁচে আছি রক্ত জবার দোল খাওয়া পুষ্প রেণুকুঞ্জ
বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে অতৃপ্তির উষ্ণ সমুদ্র স্নান
অখণ্ড আনন্দ মানবিক অস্তিত্ব মিশে আছে কাব্য অভ্যন্তর।
নিশ্ছিদ্র অমানিশা ছিন্নভিন্ন করে জোনাকের গুঁড়ি গুঁড়ি আলোর পথ
আরণ্য গন্ধ মাদকতা ছড়ানো জারুল হিজলের বন,
সোনালি মহার্ঘ্য জলস্রোত।
হেঁটে বেড়াই বিস্ময়ে সহস্র মানুষের মুছে যাওয়া ক্ষয়ে যাওয়া পদচিহ্নে
মেঘের ওপারে সিঁড়ি সজীব সতেজ শৈল গিরি পথ ধরে
বেঁচে আছি স্বর্গের দ্বার হতে ধর্ষিত পৃথিবীর রক্তমাখা পিঞ্জরে
অনাবৃত দাহিকা আর্শি দিগম্বর শতাব্দীর নগ্ন খেলা উৎসবে।
অতৃপ্তির কারাগারে আসক্তির রহস্য ঘূর্ণিপাঁকে নদীর নিঃশ্বাস বেসামাল
আদম-ঈভ এর চিরাচরিত অনুতাপ বিলাপ।
সোনালি চিলের ডানায় স্বপ্নপাখির চুম্বন মহাশূন্যে মিলায়
সুনামি জলোচ্ছ্বাস, সাগর বিস্ফোরণ নীল বেদনার হেমলক পানশালায়
জীবনের ক্যানভাসখানি সুরে অসুরে বন্ধন জড়াজড়ি
ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ বিষুব বেষ্টনি বৈরী প্রকৃতি মহামারি।
অজস্র দুর্বোধ্য বিস্ময়ে তবু বেঁচে আছি সহস্র বৃষ্টির ফোঁটায়
ললাটে আমার শতাব্দীর জ্বলজ্বলে আশিষ-চুম্বন কাব্যটিকা শোভা পায়
অন্ধকার ছেপে আত্মার গতি অনন্ত পথে আলোর পাঠশালায়।
আদমের স্বজাতির লোহিত সাঁতার কৃষ্ণ গহ্বরের দৈত্যাকার মুখ
ফেণিল বুদবুদ ওঠা জাগতিক সম্ভার সমগ্র সৌরলোক
অসুরকে জয় করার কি অদম্য ব্যাকুল প্রত্যাশার নিঃশ্বাস
সূক্ষ্ম চেতনার বিশ্বাস, বুকের পাঁজরে ঘাসফুল বুনোহাঁস
মেঘ-পাহাড়ের ধূসরতায় পাহাড়-কন্যা স্বর্ণলতিকা নিপুণ শৈল্পিক সাধনা
বেঁচে আছি মানুষের দুর্লঙ্ঘ অরণ্য বন্দরে শত বন্দনায়।
আলোর গতির চেয়ে দ্রুতগতি মানুষের দুর্গম মন
মেঘের গম্বুজে অদৃশ্য অস্তিত্ব আলোর নকশা সীমাহীন
অসুরের পরাজয় নিত্য পরাভব, সত্য-সুন্দরের বিশুদ্ধ আরাধনা
আমার এক চোখে শিশিরকণা অন্য চোখে গুঁড়ি গুঁড়ি আলোর দানা।