ভ্রমণ কাহিনিঃ
শিল্পের ছোঁয়ায় সুন্দর গুঠিয়া মসজিদ: মনিরা মিতা
আনন্দ, ভালোলাগা আর রূপময় স্বপ্নীল পৃথিবীতে ক্ষণিকের তরে হারিয়ে যেতে মন ছুটে চলে অজানা কোনো সৌন্দর্যের হাতছানিতে।পাহাড়, নদী, সাগর, অরণ্যের সৌন্দর্য মনকে ভরিয়ে তোলে।নতুন করে কাজের উৎসাহ জোগায় ।
কাজের চাপে মাঝেমধ্যে বড় একঘেয়ে মনে হয়। মন চায় কোনো শিল্পের কারুকার্যে মন রাঙাতে। আর সে মনের খোরাক জোগাতেই দূর থেকে দূরে চলে মানুষ।
সে চলার পথের একটু বিরতীর জায়গা হতে পারে বরিশাল জেলার গুঠিয়া ইউনিয়ন।
শিল্পের ছোঁয়ায় তৈরি করা হয়েছে বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স যা স্থানীয় লোকের কাছে গুঠিয়া মসজিদ নামে পরিচিত। অপূর্ব সুন্দর এই মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ও রূপকার এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। গুঠিয়া ইউনিয়দের প্রায় সব মসজিদের সম্মনিত ইমামরা ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্থাপনের সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ১৪ একর জমির ওপর স্থাপিত এটি নির্মাণে প্রায় দুই লাখ শ্রমিক অক্লান্ত পরিশ্রম করেন প্রায় দীর্ঘ তিন বছর। ২০ অক্টোবর ২০০৬ সালের ২৭ রমজান আলহাজ হযরত মওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোছেববুল্লাহ (পীর সাহেব ছারছীনা দরবার শরীফ) জামে মসজিদটি শুভ উদ্ভোধন করেন।
মসজিদটি নির্মাণের পর থেকেই অগণিত দর্শনার্থী ভীড় জমায় এর আঙিনায়। সুবিশাল এ মসজিদের চতুর্দিকে মন মাতানো ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে সাজানো, যা দেখে মনে অনাবিল আনন্দ ধরা দেয়। মসজিদের ভেতরটা যেন আরো সুন্দর। অপূর্ব কারুকার্য, ঝাড়বাতির ঝলকানি একটু হলেও মনকে প্রশান্তি দেয়। মসজিরে সামনে অবস্থিত শান বাঁধানো ঘাটের স্বচ্ছ পানিতে রঙ্গিলা মাছের খেলা দেখে আপনিও হারিয়ে যাবেন কল্পনার কোনো দূর রাজ্যে।
গুঠিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে বরিশাল বাস স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে গাড়ি কিংবা অটো নিয়ে চলে যাবেন ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বায়তুল আমান জামে মসজিদে। তবে মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর চার কিলোমিটার আগে আপনার চোখের দৃষ্টি আটকে যেতে পারে দুর্গা সাগর দীঘি দেখে। দূর্গা সাগর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ দীঘি যার আয়তন ২৫০০ হেক্টর। বরিশাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা গ্রামে এটি অবস্থিত। রাজা জয় নারায়ণের মা রানী দুর্গাবর্তী ১৭৮০ সালে এ দীঘি খনন করেন। দীঘির মধ্যখানে জঙ্গলাকীর্ণ ঢিবি রয়েছে, যা দেখতে ছোট দ্বীপের মতো লাগে। জঙ্গলে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ ও নানা প্রজাতির সাপ। জনসাধারণ দীঘিটির পাড় দর্শনের অনুমতি পেলেও নেই কৃত্রিম দ্বীপটিতে প্রবেশের অধিকার। এখানো দীঘিটির পাড়ে নানা রকমের পূজার আয়োজন করা হয়। দুর্গা সাগরের পাড়ে ক্ষণিকের ভ্রমণ শেষ করে বিকালের খোলা হাওয়ায় মন রাঙিয়ে, ফুরফুরে মেজাজে পৌঁছাতে পারেন গুঠিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদে। মসজিদের সৌন্দর্য অবলোকন করে দৃষ্টি জুড়িয়ে ফিরতে পারেন আপন নীড়ে। তবে বায়তুল আমান জামে মসজিদের কারুকার্য আপনার মনেও খোদাই হয়ে রবে বহুদিন।