২০১ বার পড়া হয়েছে
ভ্রমণ: লাস ভেগাস-গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন-ক্যালিফোর্নিয়া:
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়। জ্যাকসন হাইটসের একটি রেষ্টুরেন্টে আড্ডায় কয়েকজন বাঙালি আমেরিকান। নিউইয়র্ক প্রবাসী ব্যাবসায়ী এবং সাংবাদিক। আড্ডায় নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় । নিউইয়র্ক বাংলা বই মেলা ২৮ অক্টোবর শুরু হবে। পাঁচ দিন ব্যাপি বই মেলা চলবে। মুক্তধারা আয়োজিত নিউইয়র্ক বই মেলায় আসছেন ঢাকা থেকে অনেকেই। জাফর আহমেদ রাশেদ তাদের একজন।
রাশেদ ভাই আমাদের বন্ধু। এবারে বই মেলা শেষ হলে আমরা তাকে নিয়ে ভ্রমণে বের হবো। এবারের ভ্রমণ হবে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলীয় তিন রাজ্যজুড়ে।
সাত জনের একটি দল ঠিক হলো। একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা হলো। সুশৃঙ্খল চার দিনের ভ্রমণ।
বই মেলা শেষ হয় ০১ নভেম্বর।
নিউইয়র্ক জেএফকে থেকে ডেল্টা এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে, ২০২১ সালের ০৩ নভেম্বর বুধবার সকালে আমরা লাস ভেগাস এয়ারপোর্টে পৌছাই। গাড়ি আগে থেকেই বুক দেয়া ছিল। এয়ারপোর্ট সংলগ্ন অ্যাভিস রেন্টাল থেকে ফোর্ড এক্সপেডিশন গাড়িটি পিক আপ করি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমন্বিত এই গাড়িতে সাত জনের সাচ্ছন্দে বসার, এবং সবার ব্যাগ-ব্যাগেজ রাখার পর্যাপ্ত স্পেস রয়েছে।
গাড়ি চালাবেন কবি এবং সাংবাদিক দর্পণ কবীর, এটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।
সিরকা রিসোর্ট হোটেল অ্যান্ড ক্যাসিনো। বিলাস বহুল হোটেল। অদ্ভূত আদলের একটি ভবন। ভেগাসের কেন্দ্রিয় এলাকার এই হোটেলটিতে আমাদের সাত জনের জন্য কামরা বুক দেয়া। এ কাজটি এবং পুরো ভ্রমণ পরিকল্পনাটি, বাকি সদস্যের সাথে পরামর্শ করে করেছেন শাহ জে চৌধুরী। শাহ চৌধুরী নিউইয়র্কের ব্যবসায়ী। বাংলা চ্যানেল নামে একটি টিভি চ্যানেলেরও কর্ণধার তিনি। দর্পণ কবীর, শাহ জে চৌধুরী ছাড়া এ গ্রুপের বাকি সদস্যরা হলেন,
একজন একেএম ফজলুল হক। হক ভাই নিউইয়র্কের একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী। হক এন্ড সন্সের কর্ণধার।
জাফর আহমেদ রাশেদ। ঢাকা থেকে এবারে নিউইয়র্ক বাংলা বই মেলায় যুক্ত হতে আসা একজন কবি এবং বাতি ঘর প্রকাশনার প্রধান নির্বাহী। আরেক সজ্জন হেলাল উদ্দিন। নিউইয়র্কের আরেক সাংবাদিক তোফাজ্জল লিটন। এই ছয় জনের সাথে আমিও এই গ্রুপের এক সদস্য।
হোটেলে পৌছানোর আগেই রাস্তায় হালকা খেয়ে নিয়েছিলাম আমরা। হালকা, কারন সন্ধ্যায় একটি নিমন্ত্রণ রয়েছে। কারো বাসায় গিয়ে খাওয়ার নিমন্ত্রণ নয়। হক ভাইর বড় ছেলে লাস ভেগাস নগরীতে থাকেন। একজন চিকিৎসক। ডা. সোহাগ আমাদের দলটিকে একটি রেষ্টুরেন্টে ডিনার করাবেন। ভেগাস নগরীর প্রণকেন্দ্রে একটি ব্যস্ত রেষ্টুরেন্ট। ঘুরাঘুরি করে এলাকাটি একটু পরখ করে নিলেন সবাই।
বিকিনি পরা নানা বয়সের পিংক পরীদের অবাধ বিচরণ এ এলাকায়। সন্ধ্যায় এ এলাকায় খেতে আসবো।
এখানেই বহু প্রসিদ্ধ লাস ভেগাস ষ্ট্রিপ! সারিবদ্ধ আপস্কেল ক্যাসিনো হোটেল। নিয়ন-সবুজ, উজ্জ্বল, কোথাও হট পিংক, আবার একটু অন্ধকার। সোয়া চার মাইলের স্ট্রিপটি হেঁটে হেঁটে অবলোকন করে উপভোগ করার মত সৌন্দর্যে ভরপুর। লাস ভেগাস। জুয়ার ফ্লোরের পাশাপাশি, বিস্তীর্ণ হোটেল কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ধরনের দোকান, রেস্তোরাঁ। মধ্যমান থেকে শুরু করে অত্যন্ত উচ্চমানের! সঙ্গীত, কমেডি এবং সার্কাস-স্টাইলের অভিনয়, পারফরম্যান্স চলছে এখানে। বেল্লাজিওর উড্ডয়ন, কোরিওগ্রাফ করা ফোয়ারা এবং হাই রোলার পর্যবেক্ষণ চাকার মতো আকর্ষণগুলির কারনে ভেগাস ষ্ট্রিপে ভিড় জমেই থাকে। বিশ্বের নানা কোনা থেকে আগত পর্যটকদের ভিড়। যারা সেখানে যায়, একদিনে তাদের নয়নই ভরে না। মন ভরারতো দূরে থাক। উপভোগের অদম্য এক পিপাসা নিয়ে এরা ফিরে যেতে হয়।
রাতে আধো অন্ধকারে, মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা একটি বড়ো গোল টেবিল ঘিরে আমরা আট জন খেতে বসেছিলাম। চমৎকার স্বাদের স্টিক, সুস্বাদু নানা সি-ফুড সহ একটি হ্যাপী ডিনারের আয়োজন ছিল সেখানে। তৃপ্তির সাথে খাওয়ার পর আবার দুই প্রকারের ডিজার্ট চলে আসে। পিছনে হেলান দিয়ে আমি সহ অনেকেই তা উপভোগ করি। ডিনারের পর ফটো শেসন চলে।
অফিসের কাজে টেক্সাস যাবেন সোহাগ। এয়ারপোর্ট পৌছতে হবে। বাবা এবং তাঁর ভ্রমণ সঙ্গীদের কাছ থেকে বিদায় নেন তিনি।
ফেরার পথে শাহ জে চৌধুরী সবার সাথে কথা বলে নেন। হোটেলে পৌছার পর, আবার বের হয়ে যে যার মত করে ঘুরাঘুরি করা যাবে। তবে সকাল সাতটায় ওঠে তৈরি হতে হবে। অ্যারিজোনা রাজ্যে অবস্থিত গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে হবে।
সিরকো রিসোর্ট হোটেলটি শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য! লাস ভেগাস নগরীর প্রথম এমন হোটেল। ডাউন টাউনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ৩৪ তলা এই ভবনটির প্রথম দুই তলা জোড়ে বিশাল ক্যাসিনো। অনেকগুলি নাচের মন্চে নাচ চলছে। একের পর এক নর্তকী বদল হচ্ছে। অর্ধনগ্ন এমনকি প্রায় নগ্ন সুন্দরীরা। ভেগাসের নানা রিসোর্ট হোটেলের ক্যাসিনো ফ্লোরগুলিতে বিনোদন দিতে সদা প্রস্তুত থাকে এই তরুনীরা।
দুটি দলে বিভক্ত হয়ে, ক্যাসিনো গেমিং মেশিনগুলোতে খেলেছেন অনেকে? ঘুরেছন ক্যাসিনোর নাচের মন্চগুলো? পানীয় অর্ডারের নাম করে, ফ্লোরে কর্মরত লাস্যময়ী স্বল্প পোশাকের নারীদের কেউ কাছে ডেকে কথা বলেছেন? এসব কিছুই যে জানা যাবেনা! সেটা বুঝা গেল সকাল বেলা। নাস্তা সেরে আমরা গ্রান্ড ক্যানিয়নের পথে। জাফর আহমেদ রাশেদ জিজ্ঞেস করেন, কে কত ডলার জেতেছেন বা হেরেছেন ক্যাসিনোতে। কেউ কোন জবাব দিচ্ছিলেন না। সবার নিরবতা ইঙ্গিত দেয় “লাস ভেগাসে যা-ই ঘটে থাকুক, তা লাস ভেগাসেই থাকবে। আর কোথাও বা নিজ শহরে এনিয়ে আলাপ হবে না।” সবাই এমন নীতিতে বিশ্বাসী!
শুরু থেকেই ঐ অন্চলের আবহাওয়া ছিল সন্তুষজনক। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন যাওয়ার পথেও তাই। মরুভূমির ওপর দিয়ে দীর্ঘ পথ। পাথর কেটে নির্মিত হাইওয়ে। শতশত মাইল একেবারে সমতল সরল রেখার পথ। উচুনিচু, আঁকাবাকা পাহাড়ি রাস্তা আরো কত শত মাইল। দুপাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য। খাঁখাঁ রোদ্দুর মরুপথ। নীল আকাশ, গতিময় সাদা মেঘের খন্ড। সুদৃশ্য পথের কোথাও পাহাড়ের খাড়া ঢালু বেয়ে নেমে গেছে আমাদের গাড়ি। চোখের সামনে ভেসে এসেছে দূরে নীল জলের কোন লেক। অদ্ভূত সুন্দর সব দৃশ্য। শব্দ করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সহযাত্রিরা। দর্পণ কবীর দক্ষতার সাথে গাড়ি চালাচ্ছেন। রসাত্মক নানা কথাবার্তায় বিনোদন দিয়ে মাতিয়েও রাখছেন সবাইকে। একের পর এক কৌতুক শুনাচ্ছেন হেলাল উদ্দিনও। কখনো হালকা, কখনোবা গাঢ় কৌতুক! অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছেন সবাই। কৌতুক শুরুর আগেই হেসে ফেলেছেন কখনো।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক, অ্যারিজোনা। ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন। ০৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে আমরা সেখানে পৌছাই। বিপুল সংখ্যক গভীর গিরিখাত। এখানে লাল পাহাড়, পাথরের স্তরযুক্ত শৃঙ্খল। লক্ষ লক্ষ বছরের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের নিদর্শন। ভিউপয়েন্টগুলির মধ্যে রয়েছে ম্যাথার পয়েন্ট, ইয়াভাপাই অবজারভেশন স্টেশন এবং স্থপতি মেরি কোল্টারের লুকআউট স্টুডিও। রয়েছে ডেজার্ট ভিউ ওয়াচ টাওয়ার। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময়, ক্যানিয়ন এবং কলোরাডো নদীর বিস্তৃত দৃশ্য সহ লিপান পয়েন্টটিও জনপ্রিয়।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, এমন এক বিস্তির্ণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের চমৎকার সম্ভার। একদিনে অবলোকন করে শেষ হয় না। পিছুঠান থেকেই যায়।
লাল পাহাড়, দূসর উপত্যকার অস্পৃশ্য সৌন্দর্য্যের লীলাভূমে কয়েক ঘন্টা থাকার পর, অতৃপ্তি নিয়েই আমরা চার নভেম্বর সূর্যাস্তের পূর্বেই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে পিছনে রেখে লস অ্যান্জেলেসের উদ্দেশ্যে গাড়িতে চড়ে বসি।
আরিজোনার লাল পাহাড়ী অন্চল থেকে আবার নেভাদা রাজ্য হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যান্জেলেস পর্যন্ত প্রায় আট ঘন্টার ড্রাইভ। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এবং লস অ্যান্জেলেসের মধ্যকার একটি হাইওয়ের নাম ‘রুট ৬৬’। এটিকে ‘নটোরিয়াস রুট সিক্সটিসিক্স’ বলা হয়ে থাকে। নানা রোড ট্রিপ সিনেমায় ফিচার্ড হয়েছে এই রুট ৬৬। এর বিষয়ে বলা হয়, এখানে ড্রাইভ করলে বারবার ফিরে আসতে মন চাইবে। আমাদেরও এমন অনুভূতিই হয়েছিল।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে লস অ্যান্জেলেস পর্যন্ত ভ্রমণটি অপূর্ব ছিল। জিপিএস’এ দেখা গেল, আমরা রাত দশটার দিকে লস অ্যান্জেলেস পৌছাবো। লস এঞ্জেলেস। একটি বিস্তৃত দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার নগরী। এদেশের চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন শিল্পের কেন্দ্র। আইকনিক ‘হলিউড’ সাইন। হলিউডের প্যারামাউন্ট পিকচার্স, ইউনিভার্সাল এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মতো স্টুডিওগুলি এখানে। এখানে হলিউড বুলেভার্ডে, টিসিএল চাইনিজ থিয়েটার। ওয়াক অফ ফেম। সেলিব্রিটিদের হাত এবং পায়ের ছাপ প্রদর্শনের ব্যবস্থা। নানা সেলেব্রিটীদের নাম, এবং তাদের বাড়ির ম্যাপ বিক্রি করে স্থানীয় হকাররা। পর্যটকরা ম্যাপ অনুসরণ করে প্রিয় তারকার বাড়িটি চিহ্নিত করতে পারেন।
এমন একটি নগরীতে আর কয়েক ঘন্টার মধ্যে পৌছাবো। অন্যরকম উত্তেজনা ছিল সবার মধ্যে। এই গ্রুপের অনেকেই আমেরিকার এই অন্চল ভ্রমণ করছেন প্রথম বারের মত।
শাহ্ জে, চৌধুরী ফোনে কারো সাথে কথা বললেন। লস অ্যান্জেলেস নগরীতে বাংলা বাজার নামে একটি এলাকা রয়েছে। সেখানে আলাদিনস্ রেষ্টুরেন্টে আমাদের রাতের খাবারের আয়োজন হয়।
দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা ভাত না খাওয়া সাত জন বাঙালি। যুক্তরাষ্ট্রের মাহাবী মরু অঞ্চলে ১২ ঘন্টার একটানা রোড ট্রিপের ধকল।
আমাদের গাড়িটি রাত দশটায় লসএন্জেলেস পৌছায়। শুধু জাফর আহমেদ রাশেদই নয়। সবাই খেয়েছেন কই মাছ, রুই মাছের ঝুল, শাক-ডাল দিয়ে ভাত। এরপর নগরীর ডাউন টাউনের মিলেনিয়াম হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম নিয়েছেন সবাই।
০৫ নভেম্বর শুক্রবার সকাল। লস অ্যান্জেলেস অন্চলের আবহাওয়া উজ্জ্বল এবং নাতিশীতুষ্ণ ছিল। নাস্তা সেরে আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম অন্বেষণ করতে। গ্রিফিত অবজারভেটরিতে গিয়েছি আমরা। পাহাড়ের গায়ের হলিউড সাইনকে পটভূমিতে রেখে এবং নানা বিখ্যাত স্থাপনায় ছবি উঠানো হয়েছে আমাদের।
দুপুরের খাবার স্থানীয় একটি রেষ্টুরেন্টে হয়েছে। সেখানে বাঙালি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময় হয়েছে। একটি বিজনেস মিটিংও ছিল।
এরপরই লস অ্যান্জেলেসের রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে পড়েছিলাম আমরা। বেভারলি হিলস সহ হলিউডের পরিচ্ছন্ন আবাসিক এলাকায় হেঁটে বেড়িয়েছি। মনে পড়েছে একটি টিভি শো’র কথা। ‘বেভারলি হিলস ৯০২১০’ নামে একটি মূলধারা টিভি সিরিয়াল নব্বই দশকে খুব নাম করেছিল। সেলেব্রিটীদের আবাস স্থল বেভারলি হিলসের জিপকেড ৯০২১০। জিপকোডের নামে টিভি শো! আংশিক দেখেছিলাম সিরিজটি।
সান্তা মনিকা বেলভার্ডে হাটার সময় মনে হয়েছে সেই সময়ে ঘটা হাই প্রোফাইল ও জে সিম্পসন মামলার কথা। মনে পড়েছে জাজ্ ইটো, এটর্ণি জনি ককরান। ও জে সিম্পসন, একজন কিংবদন্তি ফুটবল খেলোয়াড়। একজন কৃষ্ণাঙ্গ সেলেব্রিটির, নিজ শ্বেতাঙ্গ স্ত্রী নিকোল ব্রাউন সিম্পসন হত্যা মামলায় তার জড়িয়ে পড়া। মামলার শুরু হয়েছিল আজ থেকে দুই যুগ আগে, ১৯৯৪ সালের ১৭ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রীওয়েতে দ্রুত গতিতে চলা ফোর্ড ব্রঙ্কো জীপকে দূর্ধর্ষ তাড়া করেছিল লস অ্যান্জেলেস পুলিশ বিভাগ। ধরা হয়েছিল ও জে’কে। পুরো ঘটনাটি লাইভ টেলিভিশনে বিশ্বের মানুষ অবাক হয়ে দেখেছিল।
তৃপ্তি সহকারে নগরীর নানা রাস্তায় হেঁটে, সন্ধ্যার পর ডিনার সেরে লস অ্যান্জেলেস এয়ারপোর্ট চলে যাই আমরা। সেখানে অ্যাভিস কার রেন্টালে, লাস ভেগাস থেকে রেন্ট করে নিয়ে আসা গাড়িটি জমা দেই।
০৫ নভেম্বর রাত এগারোটা। সান ফ্রান্সিস্কোর উদ্দেশ্যে আরও একটি ডেল্টা ফ্লাইটে আমরা ওঠে বসি। মাত্র এক ঘন্টা ২৬ মানিটের ফ্লাইট। মধ্যরাতের একটু পরে সান ফ্রান্সিস্কো পৌছাই। এয়ারপোর্ট থেকে আরো একটি রেন্টাল গাড়ি নেই। রাস্তার স্ন্যাক সেরে হোটেলে গিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ি।
০৬ নভেম্বর ২০২১ শনিবার। সান ফ্রান্সিস্কো ক্যালিফোর্নিয়া। সুন্দর আবহওয়া। সহনীয় তাপমাত্রা। সকাল বেলা উঠেই ঐতিহাসিক গোল্ডেন গেট ব্রীজ দেখতে চলে যাই। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে দেখে গাড়ি নিয়ে ব্রীজটি পার হয়ে যাই। ওপর পারের একটি স্পটে থেমে, গোল্ডেন গেট, সান ফ্রান্সিস্কো বে’ এবং ব্রীজটির দৃশ্য অবলেকন ছিলো রোমান্চকর। আশ্চর্য রকমের প্রাকৃতিক এবং প্রযুক্তিগত সৌন্দর্য্যের মিশ্রণের এক লীলাভূমি এই এলাকাটি।
এখানে রয়েছে একটি স্মৃতিসৌধও।
গোল্ডেন গেট থেকে নৌযানে করে মেরিন, নেভি এবং উপকূল রক্ষী নাবিকেরা যাত্রা শুরু করত। যুদ্ধ জাহাজ যখন প্রশান্ত মহাসাগর অভিমুখে যাত্রা করে গোল্ডেন গেটের উত্তর সীমান্তের এই স্থানটি পার হত, নাবিকরা শেষ বারের মত বাড়ির দিকে তাকাতো। এরপর শুরু হতো অজানার উদ্দেশে, অসীম দিগন্তের দিকে যাত্রা।
কেউ ফেরে আসতো, কেউ আর কখনো ফিরত না। যুক্তরাষ্ট্রের সেইসব নাবিকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তৈরি হয় এই স্মৃতিসৌধ।
সেখানে ছবি ওঠানোর পর্ব শেষে, প্রায় ঘন্টা খানিক ড্রাইভ করে সিলিকন ভেলীতে পৌছাই আমরা।
ফেসবুক, গুগুল, আমাজন ইত্যাদির হেড কোয়ার্টারগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। সম্প্রতি নাম পরিবর্তন করে ফেসবুক এখন ‘মেটা’। এর হেড কোয়ার্টার প্রাঙ্গনের পুরাতন ফেসবুক সাইনবোর্ড সরিয়ে মেটা নামে আকর্ষণীয় সাইন প্রতিস্থাপন হয়েছে। আমরা সেটার পঠভূমে ছবি উঠিয়েছি। আরও পর্যটকের ভীড় ছিল মেটা নিয়ে ছবি উঠাতে।
আমাদের এই ভ্রমণ প্রোগ্রামের শেষ দিন। সিলিকন ভেলীর পরে, নগরীর নানা জায়গায় অপরিকল্পিত ভাবে ড্রাইড-থ্রু করেছি আমরা। সে পর্যায়ে একটি পাহাড়ী অদ্ভূত সুন্দর জায়গা পেয় যাই। এটি, এবং আরো কয়কটি জায়গায় গিয়ে ছবি উঠানো হয়।
আরো একটি ভাল লাগার শহর সান ফ্রান্সিস্কোকে পিছনে ফেলে, আবার এখানে ফিরে আসার স্পৃহা হৃদয়ে নিয়ে সন্ধ্যা সাতটায় এয়ারপোর্ট চলে যাই। চোখে মুখে একটি সুন্দর, সফল ভ্রমণের মুগ্ধতা। রাত সাড়ে এগারোটার নিউইয়র্কগামী ফ্লাইটে উঠি আমরা সাত জন। বাসায় পৌছাবো রোববার ভোরে। রেববার, ঘুমানো যাবে। সোমবার থেকে নিউইয়র্কের কোলাহল। আবার শুরু সেই কর্মব্যস্ততা। তবে নিউইয়র্ক আমাদের ভালবাসার।
আমাদের হোম সুইট হোম!