লাল সবুজের ডিসেম্বর।
(রুপা খানম)
সাত টি রং এর মধ্যে প্রতিটি রঙেরই থাকে নিজস্ব এক ভাষা। সেখানে এই লাল-সবুজ যে শুধুমাত্র রঙ নয়, এ যেন লাল-সবুজের ক্যানভাস। যেখানে দেশপ্রেম আর ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে নতুন এক ঠিকানা, যেখানে স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে লাল-সবুজের পরিচয়ে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সাহসী সে গল্পগুলো দিনশেষে প্রকাশ পেয়েছে দুইটি রঙের মধ্য দিয়ে। এ যেন সাহস আর তারুণ্যের প্রতিশ্রুতিতে আঁকা অনন্য এক চিত্র।লাল-সবুজের চাদরে মোড়ানো একটি ছোট্ট দেশ, নাম তার বাংলাদেশ।
তেমনিভাবে প্রতিবছর ক্রিসমাসের সময়ে সারা বিশ্ব লাল-সবুজ রঙে আবৃত হয়ে থাকে। খৃষ্টানদের বড়দিন এই ডিসেম্বর মাসে লাল সবুজের সমারোহ চারিদিকে। ক্রিসমাস পালনে রঙের এই বিন্যাসকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ঘর এবং ক্রিসমাসের বিস্কুট সজ্জার জন্য লাল ও সবুজ রঙকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। লাল ও সবুজ রঙ দুটিকে যুগলবন্দিভাবে ব্যবহারের এই প্রথা ১৪ শতকে চালু ছিল। তখন সাধারণের প্রার্থনাস্থল থেকে যাজক ও প্রার্থনাবেদিকে আলাদা করার জন্য ব্যবহৃত রুড স্ক্রিনে লাল ও সবুজ রঙ করা হতো। ক্যামব্রিজের গবেষক ড. স্পাইক বাকলো বলেন, এধরনের সীমানাচিহ্নে ব্যবহৃত রঙ ভিক্টোরিয়ান সময়ের মানুষদেরকে পুরাতন ও নতুন বছরের মধ্যে সীমানা নির্ধারণের জন্য লাল ও সবুজ রঙ ব্যবহারে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে ক্রিসমাসের সময়ে লাল ও সবুজ রঙকেই ব্যবহার করা হয়।
এই দিনে ফিলিস্তিনের বেথলেহেমের এক জীর্ণ গোশালায় জন্ম নিয়েছিলেন এক মহামানব, যিশুখ্রিস্ট। তখন থেকেই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে বড়দিন হিসেবে উদযাপন শুরু করে। প্রতিটি মানুষের মন ভালোবাসা ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল করে তোলাটাই এই উদযাপনের লক্ষ্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বিশ্বজুড়েই সব মানুষের হূদয়ে সঞ্চার করে উৎসব-মাধুর্য। প্রতিটি মানুষের মন ভালোবাসা ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল করে তোলাটাই এই উদযাপনের লক্ষ্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বিশ্বজুড়েই সব মানুষের হূদয়ে সঞ্চার করে উৎসব-মাধুর্য। বড়দিনের সর্বশেষ প্রস্তুতিটি নেওয়া হয় ক্রিস্টমাসের পূর্বসন্ধ্যায়। প্রতিটি সবুজ ক্রিসমাস ট্রি কে লাল সবুজে সাজানো হয়। ঘরের সামনে খ্রিস্টীয় ধর্মের অন্তর্গত চরিত্রের পুতুল সাজিয়ে প্রদর্শনী করে থাকেন।
এই দৃশ্যকে ক্রিব বলা হয়। চিত্রশিল্পে যিশুর জন্মদৃশ্য ফুটিয়ে তোলার ঐতিহ্যটি সুদীর্ঘ। এই দৃশ্যে মেরি, জোসেফ, শিশু যিশু, স্বর্গদূত, মেষপালক থাকে। যেসব দেশে খ্রিস্টান সংস্কার প্রবল, সেখানে দেশজ আঞ্চলিক ও লোকসংস্কৃতির সঙ্গে মিলনের ফলে বড়দিন উদযাপনে নানা বৈচিত্র্য চোখে পড়ে।সব জায়গায় লাল আর সবুজের সমারোহ থাকে । দিনটি সকল খ্রিস্টান ধর্মালম্বির কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, খ্রিস্ট ধর্মালম্বিদের বিশ্বাস শুধু মানুষকে পাপের বোঝা থেকে মুক্তি দিতে যীশুখ্রিস্ট মহামানব হওয়া সত্বেও জন্ম নিয়েছিলেন এই দিনে ফিলিস্তিনের বেথেলহেমের এক জীর্ণ গোশালায়।
অপর দিকে ১৬ই ডিসেম্বর বীর বাঙালির বিজয় দিবস। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সব দেশে বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদ্বয় ঘটে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মুক্তিকামী মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের পর এদিন আত্মসমর্পণ করে ।আর পাকিস্তানি বাহিনীর এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ দুই যুগের পাকিস্তানি শোষণ আর বঞ্চনার। নির্যাতন, নিষ্পেষণের কবল থেকে মুক্ত হয় বাঙালি জাতি।
সারা বিশ্বের বড় দিন আর বাংলার স্বাধীনতা বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে যথাযথ মর্যাদা আনন্দ ও উৎসাহে পালন করা হয়। স্বাধীনতা দিনটি আর বড়দিনটি সকলের জন্য আনন্দের থাকে অনেক বেশি। লাল সবুজের ডিসেম্বর মাসে দুই ভালবাসার এই দিনে কেহ ঘরে বসে থাকে না । সকলে আনন্দে মেতে উঠে। ছোটরা বাবা-মায়ের সঙ্গে বেড়াতে পছন্দ করে, রঙিন কাগজের শিকলি, আলোকমালায় সাজানো ঘর, সান্তাক্লস, ঝাউগাছ দিয়ে তৈরি ক্রিসমাস ট্রি ।বাংলার স্বাধীনতা দিবসে চারিদিকে উৎসব, শহর কে সাজানো হয় লাল সবুজ বাতি দিয়ে আলোক সজ্জা। গান, কবিতা, সাজ সাজ রব এক স্বাধীনতার আনন্দ চারিদিকে। বড়দিন আর স্বাধীনতা লাল সবুজে বহে সমন্তারাল। এই ডিসেম্বর মাসে বিশেষ দিবসে খাদ্য তালিকায় থাকে বিশেষ খাবার লাল সবুজ কেক, বিস্কুট, পোলাওয়ের বিশেষ ভোজ- সবকিছুতেই লাল সবুজ নিয়ে জমকালো আনন্দের ছাপ ফুটে উঠে বিশ্বে বিজয়ের তালিকায়।
লেখক: নিউইয়র্ক/আমেরিকা প্রবাসী।
১ Comment
Excellent & Woundeful dost.