আমিও নারী
[ লাবণ্য সীমা ]
পর্ব -১
সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকেই আজ অবধি প্রতিটি নারীর রূপ একই।
নারী যেদিন তুমি এই সুন্দর পৃথিবীতে এলে সেদিন থেকে ই শুরু হলো গুঞ্জন।
মেয়ে হয়েছি বলে আমাকে কেউ উলুধ্বনিতে বরণ করেনি ।
বাবা খুশি হয়ে ছিলো। কিন্তু সে খুশি প্রকাশ করার আগেই পাশ থেকে তাকে বলা হলো এতে খুশি হবার কিছু হয় নাই। বাবাকে নিরুৎসাহিত করে বলা হলো, বাছা তুমি আরেকটা সন্তান নাও । বাবা দ্বিমত পোষণ করলে বলা হলো তুমি ভুল করছো এই মেয়ে দিয়ে কি হবে?
বংশের বাতি জ্বালাবে কে? তাই বলছি আবারও….?
মেয়ে!
বাবা!
নিজ সন্তানকে ভালোবেসে বুকে টেনে নিলেও খোলা মনে হাসতে পারলো না বাবা; রয়ে গেলো নীরবতায়।
হায় নারী! ভালোবাসার ফুলে জন্ম নিলেও তোমাকে গ্রহন করা হলো ভুলের ফসল হিসাবে।
আমি যখন হাঁটতে শিখলাম, মা খুব শখ করে আমার পায়ে নূপুর পড়িয়ে দিলো
আমার নূপুরের ঝংকারে যেনো আনন্দের বন্যা বহে যেতো।
আমি যেখানেই থাকি মা বুজতে পারতো আমি বাড়িতেই আছি। আজ বুজতে পারি সেই নূপুর ছিলো একপ্রকার শিকল ।
একটু বড় হলাম তখনও বিড়ম্বনার স্বীকার হলাম।
মায়ের খুব ইচ্ছে আমি ভালো কোনও স্কুলে পড়ি। ইংলিশ মিডিয়াম হলে আরো ভালো হয়।মায়ের সে ইচ্ছে-ও পূরণ হলো না।
সবাই বললে তুমি ভুল করছো। ও তো মেয়ে, এত ভালো স্কুলে এত টাকা খরচ করে পড়িয়ে কি হবে? বিয়ে দিলে তো পরের বাড়ি চলে যাবে।
এ কথা শুনে মা মুখ লুকিয়ে কেঁদেছে। দরজার আড়ালে দাড়িয়ে দেখেছি মায়ের বোবা কান্না।
কেবল আমি মেয়ে বলেই মায়ের সেই ইচ্ছে কে অবমূল্যায়ন করে বলা হয়েছিলো তোমার সিদ্ধান্ত ভুল।
মা খুব চাইতো আমি খেলোয়াড় হই
নাচ, গান, সহ সব কিছুতেই আমার দক্ষতা থাকুক। কিন্তু
মা আমাকে নিয়ে যত স্বপ্ন দেখতো সবাই নানা যুক্তিতে তার সেই স্বপ্ন গুলোকে ভুল প্রমাণ করে দিত।
সমাজের সেই সংকীর্ণতা থেকে মা নিজ জীবনে যা উপলব্ধি করেছিলো , তা থেকে আমাকে বের করতে চেয়েছিলো কিন্তু পারলো না।
আমি মেয়ে বলে সেদিন মাকে জিতিয়ে দিতে পারি নাই। কিন্তু
মা থেমে থাকেনি তার চেষ্টা চালিয়ে গেছে ।সমাজ, সভ্যতার সব কষাঘাত সহ্য করে মা আমাকে নিয়ে এগিয়ে গেছে।
মা মনে মনে বলতো আমি কোনও ভুল করিনি।
আমার মেয়ে কোনও ভুলের ফসল নয় সে আমার ভালোবাসা, আমার গর্ব।
মা কতোটা সফল হয়েছিলো গল্পের শেষ অবধি পড়লে বুজতে পারবেন।
তারপর
আমি শৈশব ছেড়ে আমি কৈশোরে পা রাখলাম।
আমায় বেঁধে দেওয়া ছোট্ট পরিসরটুকু যেনো আরো ছোট হয়ে গেলো।
সেই পরিসরের দরজা জানালা গুলো আস্তে আস্তে সব বন্ধ করে দেওয়া হলো।
অনাকাংখিত অদৃশ্য এক সেলে আমাকে বন্দী করা হলো। বলা হলো ও মেয়ে এখন থেকেই ওকে ঘরে রাখতে হবে নইলে কারোও নজর পড়ে গেলেই সর্বনাশ। তখন আর ভালো বিয়ে হবে না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো কিন্তু কিছু করার নেই।
অসহায় মা পাশে থেকে বলে, মাগো কোনও বাঁধায় ই বাধা নয়, তুমি এর মধ্যে থেকেই নিজেকে তৈরী করো। মায়ের একনিষ্ঠ সেই চেষ্টা আমাকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তা পুরো গল্পটা পড়লে জানতে পারবেন।
মা সব সময় আমায়, সাহস দিতেন আর বলতো তুমি আমার মেয়ে, আমার ভালোবাসা।কখনই তুমি আমার ভুলের ফসল নও। আমার মাকে নিয়ে আমার গর্ব হয়।
আমার বেড়ে ওঠার পেছনে বাবার ভূমিকা ছিলো খুবই নগন্য। আমি বাবাকে ছোট করছি না তবে বাবা চাইলে অনেক কিছু করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার পরিবারের গন্ডি ছেড়ে আমার বা মায়ের পাশে এসে দাড়ান নি। কখনো আমার হয়ে প্রতিবাদ করেন নি।যদি করতেন তাহলে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন পূরণে মাকে এত কষ্ট সহ্য করতে হতো না।
বড্ড হাসি পায় হায়! এ কোন পৃথিবীতে আমি এসেছি?
আপনারা বিরক্ত হবেন না সাধারণ ঘরের চেনা গল্প। ঠিক মনে করেছেন কিন্তু এটা আমার গল্প তাই পড়বেন শেষ অবধি প্লিজ।
এরপর…
চলবে….