ফ্রিজ!
রুমানা মোকবুল
রবিন একজন ব্যবসায়ি। খুলনার ছেলে। মাসে মালামাল কিনতে দু’বার ঢাকা নারায়ণগঞ্জে আসে।দুরত্বের কারণে দিনে এসে দিনে যাওয়া সম্ভব হয় না। একদিন থাকতে হয়। আশেপাশে তেমন কোন আত্নীয় স্বজন না থাকায় একটা বাড়ির নীচ তলায় একটা রুম ভাড়া নিয়ে ওখানেই থাকে। যদিও মাসে দু-তিন দিনের জন্য তবুও এছাড়া কিছুই করার নেই। ভাড়া তেমন না। ওই মাসে হাজার টাকা দিলেই হয়।
রবিনের সংসারে মোটে চারটে মানুষ। মা বাবা-মা আর একটি মাত্র বোন।মায়ের খুব ইচ্ছে রবিন বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে আসুক।রবিন বলে, সময় হলে ঠিক করে নিবে।
নারায়ণগঞ্জ আসা যাওয়া করতে করতে রবিন যে বাড়িতে থাকে সে বাড়ির বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। দেখতে অপূর্ব সুন্দরী।মাকে সব খুলে বলে।বড় লোকের মেয়ে তবুও ছেলের পছন্দ বলে কথা।তাছাড়া রবিনের অবস্থা ও খারাপ না।
দুই পরিবারে মতামতে বিয়ে সুন্দর ভাবেই সম্পন্ন হয়ে গেল। মেয়েটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তার আচার ব্যবহার।শ্বশুর শ্বাশুড়ি একেবারে মুগ্ধ। একমাত্র ননদ সেও ভাবীকে পেয়ে সন্তুষ্ট।মেয়েটির নাম চুমকি।
বিয়ের আগে চুমকির একটাই চাওয়া ছিল রবিনের কাছে। সে মা- বাবাকে রেখে খুলনা অতো দূর থাকতে পারবে না। এদিকে রবিনের ব্যবসা খুলনায়।তবুও ভালোবাসার দাম রবিন দিলো। নারায়ণগঞ্জে আলাদা বাসা নিলো। বাবা-মা বোনকে নিয়ে বেশ হাসি আনন্দে কয়েকটা দিন কেটে গেল। চুমকির ইচ্ছে শ্বশুর শ্বাশুডি ননদ মিলে একসাথেই থাকার কিন্তু বুড়ো বুড়ি নিজের বাড়ি ঘর রেখে কিছুতেই বন্ধি জীবন কাটাতে রাজি নয়। ওদিকে ছেলের ব্যবসা মেয়ে রিতার সামনে এস এস সি পরিক্ষা।
বেশ সুখেই দিন কাটছিলো। কিন্তু না, কেউ একজন রবিনকে বলেছে ; রবিনের অবর্তমানে ওর সুন্দরী বউ কোন একটা ছেলের সাথে ঘোরাঘুরি করে এবং কখনো কখনো রাতে ছেলেটাকে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে।রবিন যেন কিছুতেই মানতে পারলো না। ওই লোক নাকি বলেছে বিশ্বাস না হয় চোখ রাখুন।
সারারাত রবিনের চোখে ঘুম আসলো না। সকালে চুমকির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খুলনায় রওয়ানা হয়ে গেল।
রবিনের বোন রিতার এস এস সি পরীক্ষা শেষ। সে হঠাৎই রবিনের নারায়ণগঞ্জের বাসায় হাজির।চুমকি তো ননদকে দেখে খুশিতে আত্নহারা। রিতা জানতে চাইলো রবিনের কথা। চুমকি বললো, রবিন তো আজই খুলনায় চলে গেল। রিতা মনে মনে খুশিই হলো। কারণ বাড়িতে বাবা-মা একা। এটা যে সময়ের ঘটনা তখন বাংলাদেশে কিছু হাতে গোনা মানুষ মোবাইল ব্যবহার করতো।
ননদ ভাবী বেশ ভালো ভাবেই হাসি গল্পে দিন কাটাচ্ছে। এরি মাঝে চুমকি একদিন কিছু কেনাকাটা করবে বলে বের হলো।দুপুরের রান্নার সময় হয়ে যায় তবুও আসে না দেখে রিতা নিজেই রান্না করবে বলে ডিপ ফ্রিজ খুলে দেখতে লাগলো কি রান্না করা যায়। দেখলো নীচের দিকে কালো পলিথিন মোড়ানো একটা বেশ বড় প্যাকেট।নিশ্চয়ই গোরুর মাংস । এদিকে ছুটা বুয়া সব কাজ করে দিয়ে যায়। প্যাকেটটা বুয়ার হাতে দিয়ে ভিজাতে বললো রিতা। বুয়া মাংস ভিজিয়ে সব কাজ শেষ করে মাংস কাটবে বলে পলিথিন থেকে মাংস বের করে এক চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
ঘটনার আকস্মিকতায় রিতা দৌড়ে দেখতে এলো কি হলো। গামলার পানিতে চোখ পড়তেই রিতার চিৎকার আশপাশের লোক জুটে গেল।বাড়ি ভর্তি লোকজন।কারো কথাই ঠিক ভাবে বোঝা যাচ্ছিল না আসলে কি ঘটলো। এরি মাঝে চুমকি এসে দেখতে পেলো ওর বাসার সামনে এক বিশাল লোকজনের জটলা। চুমকি ভাবলো ননদ রিতাকে রেখে এতোসময় বাইরে ছিল। না জানি ননদের সাথে খারাপ কি ঘটে গেলো।
ভিড় ঠেলে এগিয়ে যা দেখলো এটার জন্য চুমকি মোটেই তৈরি ছিল না। গোরুর মাংস ভেবে পলিথিনে যা পাওয়া গেল তা হলো রবিনের চোখ সমেত মাথাটা।কালো চুল। বড় বড় চোখ।সে চোখ যেন চুমকিকেই খুঁজছে। ততোক্ষণে পুলিশ খবর পেয়ে দলবল নিয়ে হাজির। চুমকি শক্ত পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
চুমকির জবানবন্দিতে উঠে এলো সেই লৌহমর্ষক কাহিনি। সেদিন আসলে রবিন বাড়ি যাওয়ার কথা বলে চুমকির প্রতি নজর রাখছিলো। রাত আনুমানিক দশটা সাড়ে দশটায় হোন্ডা নিয়ে একটা ছেলে চুমকির ঘরে ঢুকে গেল। তার কিছুসময় পর রবিন ঘরে ঢুকলো এবং দু’জনকে খুব অন্তরঙ অবস্থায় দেখে ফেলাটাই কাল হলো রবিনের।
দু’জনে মিলে রবিনকে কিল-ঘুষি মারতে লাগলো। রবিন কিছু বুঝে উঠার আগেই চুমকি রান্না ঘর থেকে বটি এনে রবিনের ঘাড়ে খুব জোরে বসিয়ে দিলো। রবিনের দেহ টুকরো টুকরো করে পলিথিনে মুড়িয়ে বস্তায় ভরে জনৈক ছেলেটা নিয়ে বেরিয়ে গেল। কেউ যাতে চিনতে না পারে মাথাটা দেহের সাথে দিলো না। তুলে রাখলো ফ্রিজের একেবারে তলানিতে। ভেবেছিল পরে সুবিধা মতো কোন সময়ে বাকী কাজ টুকু সেরে নিবে।
পরদিনই ননদ রিতা এসে হাজির হবে এটা চুমকি ভাবতেই পারেনি।
রবিনের বাবা-মা বিশ্বাস করতে পারছিলো না এতো সুন্দর মানুষ এমন কাজ করতে পারে।ওদিকে চুমকি স্বামীকে খুন করলেও জনৈকের ভালোবাসায় কোন ফাঁকি ছিলো না।
কিছুতেই ছেলেটার নাম ঠিকানা কেউ জানতে পারলো না, আর সেই সুযোগে জনৈক ছেলেটা বেশ বাঁচা বেঁচে গেলো। ছেলেটা বেঁচে গেলেও হয়তো তার কারণে অন্য কোথাও অন্য কোন রবিনের এভাবেই প্রাণ হারাতে হবে…