রফিকুল হক দাদুভাইয়ের অবস্থা ভালো নেই:
পঁচাশি বছরের দাদু ভাই বার্ধক্যজনিত নানান রকম শারীরিক অসুস্থতায় নিজ বাসায় দিন কাটাচ্ছেন। সবার নিকট দোআ কামনা। তিনি যেন আমাদের মাঝে আবারও ফিরে আসতে পারেন। আমিন।
(দাদুভাইয়ের ৮০তম জন্মদিন -এ প্রথম আলোতে প্রকাশিত, ০৯-০১-২০১৬)
দাদুভাই, ফোনটা দয়া করে বন্ধ করেন’, মঞ্চে বক্তব্য দিতে দিতে বললেন দাদুভাইয়ের শিষ্য, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন। দাদুভাইকে শুভেচ্ছা জানাতে আসছে একের পর এক ফোন। মঞ্চে বসে হাসিমুখে মুঠোফোনে সেই শুভেচ্ছা গ্রহণ করছেন তিনি। এত ভালোবাসা যাঁর জন্য, তিনি সমগ্র দেশের ভালোবাসার মানুষ, বিশিষ্ট ছড়াকার রফিকুল হক, ‘দাদুভাই’ নামেই তিনি খ্যাত। গান লিখেছিলেন মরমি শিল্পী আবদুল আলীমের জন্য, লিখেছেন অসংখ্য ছড়া, তৈরি করেছেন বহু লেখক ও ছড়াকার। সে জন্যই বাংলা একাডেমিতে গতকাল শুক্রবার বসেছিল ছড়াকার আর শিশুদের মিলনমেলা। গতকাল ছিল শিশুসাহিত্যিক, শিশুসংগঠক, নাট্যকার, গীতিকবি ও প্রবীণ সাংবাদিক রফিকুল হক দাদুভাইয়ের ৮০তম জন্মদিন।
সকালে এক আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দাদুভাইয়ের জন্মদিন উদ্যাপনের আনুষ্ঠানিকতা। চাঁদের হাট কেন্দ্রীয় পরিষদের আয়োজনে শোভাযাত্রাটি শিশু একাডেমী থেকে শুরু হয়ে বাংলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়।
সকালের পর্বে অতিথিরা লাল-সবুজ বেলুন উড়িয়ে উত্সবের উদ্বোধন করেন।
এই উপলক্ষে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছিল দিনব্যাপী তিন পর্বের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল রফিকুল হক দাদুভাইয়ের ৮০তম জন্মদিন উদ্যাপন কমিটি।
প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে সকালের পর্বে দাদুভাইকে নিয়ে কথা বলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, নাট্যব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন, ছড়াকার লুত্ফর রহমান রিটন, শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, ছড়াকার আমীরুল ইসলাম, প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার প্রমুখ। এ সময় স্মারকগ্রন্থ হাসিতে হাসিতে আশিতে-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ ছাড়া তিন অধিবেশনের অতিথিদের নিয়ে তিনটি কেক কাটা হয়।
জন্মদিনের শুভেচ্ছায় সিক্ত ছড়াকার রফিকুল হক বলেন, ‘যাদেরকে নিয়ে চাঁদের হাট শুরু করেছিলাম, তারা এখন স্ব স্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র। যাদেরকে প্রেরণা ও ভালো কাজের ইন্ধন জুগিয়ে অন্তরে স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিলাম, তারা এখন দাবানলে পরিণত হয়েছে। আমার তেমন প্রাপ্তি না থাকলেও আনন্দ অনেক। কেননা আমার চাঁদের হাট থেকে এমন সব রত্ন বেরিয়ে এসেছে।’
আজকের শিশুদের নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে রফিকুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের শিশুরা প্রকৃত বাঙালি হয়ে উঠুক—জন্মদিনে এটাই আমার চাওয়া। এই শিশুরাই এ দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করবে।’
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘রফিকুল হক শুধু বাংলাদেশের সফল ছড়াকারই নন, সফল শিশু সংগঠন তৈরিতে তিনি বৃক্ষের মতো। হাজার হাজার শিশুর প্রতিভা বিকাশে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন।’ তিনি আরও বলেন, অর্ধশতক ধরে রফিকুল হক চাঁদের হাট পরিচালনা করে যাচ্ছেন। সেখানকার বহু শিশু আজ প্রতিষ্ঠিত। আমি বিশ্বাস করি, তাঁর ছোঁয়া যারা পেয়েছে, তারা কখনো খারাপ মানুষ হতে পারে না। তাদের কেউ দুর্নীতি করতে পারে না, নারীর প্রতি সহিংস হবে না।’
কাজী রোজীর সভাপতিত্বে দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বক্তব্য দেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, কথাশিল্পী ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সাংবাদিক ও কথাশিল্পী আনিসুল হক প্রমুখ। এ পর্বে তরুণেরা দাদুভাইকে নিবেদন করে কবিতা ও ছড়া পাঠ করেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘শিশু সংগঠনগুলো শিশুদের মানসিক বিকাশে, চেতনা জাগ্রত করতে একসময় শিকড় পুঁতেছিল। এ চেতনা থেকেই একসময় আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। সেসব শিশু সংগঠনের অনেকগুলো এখন বিলুপ্ত। শিশুদের বিষয়গুলো ক্রমাগত গুরুত্ব হারাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।’
মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘গত ৫০ বছরের মধ্যে যদি শিল্পসমৃদ্ধ সমাজ সচেতনতা নিয়ে কেউ ছড়া রচনা করে থাকেন, তিনি রফিকুল হক দাদুভাই। বাংলা ভাষা যত দিন থাকবে, তত দিন দাদুভাই থাকবেন।’
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘দাদুভাই না থাকলে ইমদাদুল হক মিলন নামে কোনো লেখকের জন্ম হতো না। তিনি চিরনবীণ বিস্ময়কর এক মানুষ। অনেকগুলো আলোকস্তম্ভ তিনি তৈরি করেছেন। চাঁদের হাট না থাকলে সেটা সম্ভব হতো না।’
২ Comments
দাদাভাইয়ের ছড়াকবিতার ভক্ত তো আমার শুরু থেকেই।তার কবিতা প্রানে ছন্দের ষ্পন জাগায়।রক্তে শিরায় দোলা আনে।
তার সুস্থতা কামনা করছি।
অভিনন্দন দাদাভাইকে।
দাদাভাইয়ের ছড়াকবিতার ভক্ত তো আমি, আমার শুরু থেকেই।তার কবিতা প্রানে ছন্দের ষ্পন জাগায়।রক্তে শিরায় দোলা আনে।
তার সুস্থতা কামনা করছি।
অভিনন্দন দাদাভাইকে।