২৪৩ বার পড়া হয়েছে
সাজেক ভ্রমণ কাহিনি
২৮/২/১৯ ইং ছিলো আমার জীবনে একটি বিশেষ দিন। ঐ দিন একটা স্বপ্নকে বাছাতে একটা স্বার্থ জলান্জলী দিলাম। তাই ওই দুইদিন মনটা কিছুটা খারপ ছিলো। ১/৩/২০১৯ সন্ধে ৭ টা। সুজনের দোকানে সাজু সহ বসে গল্প করছিলাম। মনটা খারপ চিলো তাই ভাবলাম মেঘের দেশ সাজেক গুরে আসি। মনটা ঠান্ডা হবে। আমি প্রস্তাব দিতেই দুজন রাজী হয়ে গেলো। আরো দুজনকে এড করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু একজনের ব্যবস্থা হলো।★★★সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ, সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা , দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু , পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত । সাজেক হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন ; যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । এখানে সাজেক বিজিবি ক্যাম্প অবস্থিত । সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উঁচুতে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প। সাজেক রুইলুইপাড়া এবং কংলাক পাড়া এই দুটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। রুইলুই পাড়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট । আর ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কংলাক পাহাড়-এ কংলাক পাড়া অবস্থিত । সাজেকে মূলত লুসাই ,পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করে । রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখে যায় সাজেক ভ্যালি থেকে । তাই সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় রাঙামাটির ছাদ ।
৪ জন সকাল ৭ টায় সেনবাগ থেকে হালকা নাস্তা করে ফেনী রওনা দিলাম, ৪ জনের ভাড়া১৬০ টাকা ।সকাল ৮ টায় সকালের নাস্তা সেরে বারীয়াহাঠ পৌচালাম সকাল ৯ টায়, ভাড়া ১২০ টাকা । তার পর খাগড়াচড়ীর বাসের জন্য অপেক্ষা।৯:৩০ মিনিটে, হিলকিং বাসে ছড়ে রওনা দিলাম খাগড়াছড়ী, সেখানে পৌচালাম দুপুর ১:৩০ মিনিটে।ভাড়া ৮০০ টাকা। দুপুরের খাওয়া সেরে সাজেকে চাঁন্দের গাড়ীর কাওন্টারে গিয়ে দেখি একটা গাড়ী আর আমরা মাত্র ৪ জন। আমাদেরকে বিকেল ৩.টার স্কটে নিয়ে যাবে, আবার কাল সকালে নিয়ে আসবে ভাড়া ৭৭০০ টাকা নির্ধারিত। খাগড়াছড়ী থেকে দুরত্ব ৭০ কিলোমিটার, পাহাড়ী দুর্গম রাস্তা। খরছ কমাতে ২ টি হুন্ডার সাথে কথা বল্লাম, ৩০০০ টাকায় মোটামোটি কথা চলচে। এর মধ্য একটা সি এস জি ড্রাইবার এসে বল্ল আমাকে ৩৫০০ টাকা দিলে আরামচে গুরে আসতে পারবেন। তার পর ৩০০০/ টাকায় রপা হলো। রওনা দিলাম ২:৩৫ মিনিটে। ভাঘাইহাট পৌচালাম বিকেল ৩:৫ মিনিটে। সেখান থেকে আরমি স্কটে রওনা দিলাম সাজেকের দিকে ৩:৩০ মিনিটে। শেষ কয়েক কিলোমিটার গেলাম চাঁন্দের গাড়ীতে চড়ে, পৌচালাম, সন্ধার আগে। হোটেল খোজাখুজির পাশাপাশি সূর্যাস্থের সৌন্দর্যরূপ উপভোগ করতে লাগলাম। হেলিপ্যেডে দাড়ীয়ে সূর্যাস্ত দেখার আনন্দ নিজ চোঁখে না দেখলে বুজতে পারবেন না। ১৫০০ টাকা দিয়ে দুই পাসে ভেলকনি ওয়ালা সেনি-লুসি নামে একটা সুন্দর দুই বেডের কটেজ নিলাম।শুক্র শনিবারে ভাড়া বেসি থাকে, আমরা গিয়েছি রবি বারে তাই ভাড়া পানির দরে (তাদের মতে)। নিচেই ছিলো সেনি-লুসি রেষ্টুরেন্ট। বারবিকিও চিকেন, ভেম্বো চিকেন চিলো তার বিশেষ আকর্ষন। আমরা রাতের খাবারে ভেম্বো চিকেন আর পরাটা অর্ডার দিলাম। দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। দামাদামি করে ৫০০ টাকায় নিলাম। ভেম্বো চিকেনের আগুনের পাসে বসে সবাই গল্প করছিলো। আমি গোসল সেরে তাদের সাথে যোগ দিলাম। হঠাত করে মনটা আবার খারপ হয়ে গেলো। আমি উপরে উঠে বেলকনির ছেয়ারে একা একা বসে আকাসের তারা,আর একটা প্রকান্ড গাছ দেখতেছিলাম। আর জীবনের সাথে তারা, দখিনা বাতাস ও ঐগাছটির মিল খুজতে চিলাম। হঠাত রাবুর কথা আর বাড়ীর কথা খুব মনেপড়লো ফোন দিয়ে উদাসমনে কিছুক্ষন কথা বল্লাম। সুজনের ডাকে চমকে উটলাম। ভাই বাশ রেডি। কিন্তু বাশ থেকে চিকেন বের করে যখন বাটিতে নিলো একেবারই মাথায় বাশ । এতুটুকুর দাম ৭০০ টাকা চায়? খেয়ে সেদিনের মত গুম। সকালে গুম থেকে উঠে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ পুট উচু কংলাক পাহাড়ের দিকে রওনা দিলাম। মাটির উচুনিচু রাস্তা সবার হাতে বাশের কন্চি, উঠতে লাগলাম পাহাড় চুঁড়ায়। যখন কংলাক পাহড়ের সর্বোচ্ছ চুড়ায় পৌচালাম তখন ঘড়িতে সময় ৮:৩০ মিনিট। কিছুক্ষন ১৮০০ পুট উচু থেকে মেঘের ভেলা,আর দিঘন্ত বিস্তৃত পাহাড় রাশীর সোন্দর্য অবোলোক করতেচিলাম। যাত্রাপথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। দূরের উঁচু-নীচু সবুজ পাহাড়, বুনো ঝোপ, নামহীন রঙীন বুনো ফুল এসব নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য আপনাকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে।
পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ আর পথের দুধারে জমে থাকা সবুজ বনানী যাত্রা পথের সব ক্লান্তি দুর করে দিবে। ফেইজবুকে লাইভ ভিডিওতে বন্ধুদের ও কিছুটা আনন্দ দেয়ার চেস্টা করলাম। পেরার পথে ভম্বো টি, ও তেতুল চা, আরো নতুন মাত্রা যোগ করলো। কটেজে পিরে বেগ গুছিয়ে নিয়ে নস্তা করে ১০ টার স্কটে খাগড়াছড়ী রওনা দিলাম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আন্তরীকতা এবং সাজেক সহ সমস্ত পাহাড়ি অন্চলে তাদের কর্মকান্ড দেখে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে করতে যখন খাগড়াছড়ী এসে পৌঁচালাম, দেখি একটা মানববন্ধন চলতেছে। তাদের ব্যনার দেখে সবার মন খারাপ হয়ে গেলো। সেখানকার নিমোখারাম, বেইমান এমপির সংসদে দেওয়া সেনাবাহিনীর নামে মিথ্যাচার ও অপশারনে বক্তৃতার প্রতিবাদে। আপসুস যাদের জন্য সেনাবাহিনী, রাস্তাঘাট সহ অবকাঠামো গত এতো উন্নয়ন করলো তাদেরকেই স্থানীয় নিমোখারাম জনগন অপশারন চায়?? সাথে সাথে আমার সাজেক আসার কারনটা মনে পড়ে গেলো। এমন অকৃতজ্ঞ মানুষ দেখি সব জায়গায় আছে। যারা নিজেদের হীন স্বর্থে আমার সব অবদান বেমালুম ভুলে গেল। তারা আমার ভালোবাসার হলুদ পাখীটার বুকে হিংসা আর অকৃতজ্ঞতার তীর মেরে দিলো। আমার কিছু আপন মানুষ ও তখন পাখি শিকারের আনন্দে হাত তালী দিচ্ছিলো। তাই কষ্টটা ভুলতে আমার অনেক দিন লাগবে। নিশ্চই আল্লাহ ন্যয়বিচারক। আন মনে এসব ভাবতে ভাবতে খাগড়াছড়ি এসে পৌঁচালাম।
এসেই দুপুরের খাওয়ার সেরে রিছাং ঝর্নার দিকে রওনা দিলাম।
★★★
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র হতে ৪ কি.মি. পশ্চিমে মূল রাস্তা থেকে উত্তরে গেলেই ঝর্ণার প্রবেশপথ। জেলা শহর থেকে ঝর্ণা স্থলের দুরত্ব সাকুল্যে ১১ কি: মি: প্রায়। হাজার ফুট নীচের উপত্যকায় দৃষ্টি পড়লে কোন অপূর্ব মুগ্ধতায় যে কেউ শিউরে উঠে মন। ঝর্ণার সমগ্র যাত্রাপথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর।
পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ আর পথের দুধারে জমে থাকা সবুজ বনানী যাত্রা পথের সব ক্লান্তি দুর করে দেয়। পাহাড়ী পথটা মোটেও আরামদায়ক নয়। আমরা সবাই একটি করে বাশের লাঠি নিয়ে হাটি তাতে পরিশ্রম কম হয়। লাল মাটির পথ মাড়াতে মাড়াতে বুঝতে পারলাম পাহাড়ী জীবন কতটা কষ্টকর। এভাবে হাটতে হাটতে একসময় কানে ভেসে আসবে গমগম করে পানি পড়ার শব্দ। বুঝতে পারবেন এসে পরেছেন রিছাং ঝর্না কাছে।
আমরা সেখানে গোসলা না করেই হাত মুখ দুয়ে চলে আসি। পথে আনারস, আর লেবুর সরবাত খেয়ে, ২ টা হুন্ডায় চড়ে
আমরা চলে আসি আলুটিলা গুহা দেখতে।
★★★আলুটিলা ও রহস্যময় সুড়ঙ্গ
খাগড়াছড়ি শহর হতে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা পযর্টন কেন্দ্রে আছে রহস্যময় গুহাটি। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। তবে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত বলে একে আলুটিলা গুহাই বলা হয় । এটি খাগড়াছড়ির একটি নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। খাগড়াছড়ি বেড়াতে এলে সবাই অন্তত এক বার হলেও এখানে ঘুরে যাবেন। এটি একটি চমৎকার পিকনিক স্পট। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়, হৃদয় ছুয়ে যায়। আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সব চাইতে উচু পর্বত। নামে এটি টিলা হলেও মূলত এটি একটি পর্বতশ্রেনী। এখান হতে খাগড়াছড়ি শহরের বেশ কিছুটা অংশ দেখা যায়। শুধু তাই নয় পাহাড়ের সবুজ আপনার চোখ কেড়ে নেবে। আকাশ পাহাড় আর মেঘের মিতালী এখানে মায়াবী আবহ তৈরি করে।
আলুটিলা রহস্যময় সুড়ঙ্গে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে পর্যটন কেন্দ্রের টিকেট কেঁটে ভীতরে প্রবেশ করতে হবে। ফটক দিয়ে পর্যটন কেন্দ্র প্রবেশের সময় আপনাকে মশাল সংগ্রহ করতে। কিন্তু আমার কাছে লাইট থাকার কারনে আমরা মসাল কিনিনাই,।রহস্যময় গুহাটিতে একেবারেই সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। ।
আর ফটক হতে বাম দিকের রাস্তা বরাবর হাঁটলে পরে পাবেন রহস্যময় সেই গুহা। গুহাতে যাবার আগে আপনি পাবেন একটি বিশ্রামাগার ও ওয়াচ টাওয়ার। এর সামনে দিয়ে রাস্তা চলে গেছে আলুটিলা গুহা মুখে। আগে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে হতো গুহামুখে। কিন্তু এখন পর্যটন কর্পোরেশন একটি পাকা রাস্তা করে দিয়েছে। ফলে খুব সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় গুহামুখে।
পাকা রাস্তা শেষ হলে আপনাকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে। প্রায় ৩৫০টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে পরে পাওয়া যাবে কাঙ্খিত সেই আলুটিলা গুহা। গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোন প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না তাই মশাল নিয়ে ভীতরে প্রবেশ করতে হয়। একেবারেই পাথুরে গুহা এটি। গাঁ ছম ছম করা পরিবেশ। খুব সাবধানে পা ফেলে সামনে এগুতে হয়। কারন সুরঙ্গের ভীতরে কোন আলো নেই। সুরঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে। এর তলদেশে একটি ঝর্না প্রবাহমান। তাই খুব সাবধানে মশাল বা আলো নিয়ে গুহা পাড়ি দিতে হবে। পা ফসকে গেলেই আহত হতে হবে।
তবে অন্য কোন ভয় নেই। গুহাটি একেবারেই নিরাপদ। এর দৈর্ঘ প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহার ভীতরে জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে, রয়েছে বড় বড় পাথর। গুহাটির এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হতে সময় লাগবে প্রায় ১০ মিনিট। গুহাটি উচ্চতা মাঝে মাঝে এতটাই কম যে আপনাকে নতজানু হয়ে হাটতে হবে। সব কিছূ মিলিয়ে মনে হবে যেন সিনেমার সেই গুপ্তধন খোঁজার পালা চলছে। বিশ্বে যতগুলো প্রাকৃতিক রহস্যময় গুহা আছে আলুটিলা সুরঙ্গ তার মধ্যে অন্যতম। সেখানথেকে আমরা চলেএলাম উপজেলা পর্যটান কেন্দ্রে সেখানকার প্রধান আকর্ষন জুলন্ত ব্রীজ, এবং সামনে বড় বৌধ্য মন্দির।সব গুরে সন্ধায় এসে পৌচালাম বাস টার্মিনালে। এসে দেখি চিট নাই। পরবর্তী বাস ৮: ৩০ মিনিটে এর পর শুধু অপেক্ষা,,,, টিকেট কেটে কাউন্টরে বসে বসে হিসেব করতে লাগলাম। আমাদের ৪জনের থাকা, খাওয়া,গাড়ীভাড়া সহ মোট খরছ ১০০০০ টাকার কিছু কম। জন প্রতি ২৫০০ টাকা খরচ হলো। আসার সময় রাবুর জন্য একটা হ্যন্ড বেগ ও কিছু বারমিজ আচার নিলাম। রাতে খাওয়ার খেয়ে সৌদিয়া পরিবহণের একটি বাসে ছড়ে ফেনী এসে পৌঁছালাম। ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা।ফেনী থেকে সাহী বাসে জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়াদিয়ে সেনবাগ রাস্তামাথা, তারপর সি এন জিতে ২০ টাকা করে সেনবাগ বাড়ীর দরজায়। তখন রাত ১:৩০ মিনিট। এক ডাকেই রাবু ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দিলো।
সবশেষে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার ভ্রমন সংগীদের। সবার আন্তরিকতায় আমরা সবগুলো সিদ্বান্ত খুব দ্রুত নিতে পেরেছি। আর ছবি তোলার বিষয়টা নিজ দায়িত্বে দেখে নিবেন।
রফিকুল ইসলাম রবি, সেনবাগ নোয়াখালী।
১ Comment
ভ্রমণ পিয়াসু ব্যক্তিদের অনেক উপকারে আসবে