কবিতাগুচ্ছ:
রতন চন্দ্র রায়
বুকের জ্বালা
অপেক্ষা করে আছি
কতটা বছর ধরে
তোমার হাতটি ধরে হাঁটবো
সারাটা জীবন ভর।
কথা দিয়েছিলে তুমি
এ সিঁথিতে সিঁধুর পড়াবে,
নিয়তির কি নির্মম পরিহাস
জানিনা কি হলো আমার…
বুকের জ্বালা নিয়ে
চলবো আর কতকাল…
বুকের পাঁজরে ব্যাথা উঠেছে
মনে হয়…
বাঁচবো না আর বেশি কাল।
সারাটা জীবন গেলো
আগুনে পুড়ে-পুড়ে
মুত্যুর পড়ে উঠিও না চিতায়
মাটিতে করিও আমার সমাধি
মন থেকে পাবো একটু শান্তি।
নির্জনে
কবিতার বইটা আজ হাতে উঠে না
গল্পের বইটা আজ পড়া হয় না।
তবু মাঝে-মাঝে মনে হয়
সেই তুমি আসবে ফিরে।
সেই আশাতে আজও
প্রতিটি প্রহরে জপি তোমার নাম…
মাঝরাতে তারার আলোতে
দেখতে পাই তোমার পদচারনা…
রাতের অন্ধকার দেয় তোমায় পাহারা।
এতবছর পরও তোমার মুখটি
চোখের মাঝে ভাসে সারাক্ষণ,
জানি না কি যে তার কারণ।
চোখের মাঝে আজ জল আসে না
বুকের মাঝে শুধু রক্তক্ষরণ,
এই নি:স্ব হৃদয়টা আজও চায়
তোমার মনের ভালোবাসা।
জানি না আর পাবো কি না
তোমাকে আপন করে,
আমারও হৃদয় কুঠুরিতে
একাকী নির্জনে…
শকুন
ক্ষুধার্ত শকুন ঘুরছে
আজ শহর জুড়ে,
শহর জুড়ে আজ গ্রাস করছে
তিলে-তিলে সবাইকে।
বিনাদোষে খুন ধর্ষণ
শহরের রাজপথে……
রাজনৈতিক অঙ্গনে খুন হচ্ছে
দিনে- রাতে সারাক্ষণ।
শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানের প্রদীপ
জ্বালানোর পরিবর্তে,
ধর্ষিত কলঙ্কিত করছে বিদ্যাকে
ন্যায়বিচারের দরজাগুলো
কারা যেন তালা দিচ্ছে বাহির হতে।
বিবেকহীন মানুষগুলো
বিচরণ করছে রাজপথে,
বিবেকবান মানুষগুলোকে
তালাবদ্ধ করেছে চার দেয়ালের মাঝে।
সেই তুমি
পৃথিবী জ্বলে-পুড়ে ছাই হবে
হৃদয়ের ভালোবাসা চিরকাল থাকবে,
মনের অজান্তে বার-বার মনে পড়বে।
দু’জন হেঁটে ছিলাম, দু’জনার হাত ধরে
কত কথা কত কাহিনি বলা হতো
দু’জন দু’জনাকে……
বুকের পাঁজরে মাথা রেখে বলতে
বাঁচবে না তুমি আমাকে ছাড়া।
সেই তুমি কেমন করে
আজ যাচ্ছো অন্যের বঁধূ সেজে
মাথায় টিকলি পায়ে আলতা পড়ে।
আমার উঠোনে জ্বলছে চিতার আগুন
তোমার উঠোনে জ্বলছে যঙ্গের আগুন,
সুখে থেকো প্রিয়তম
ভালোবার প্রদীপ জ্বালিয়ে
নতুন বাড়িতে নতুন মানুষের সাথে।
অতৃপ্ত ভালোবাসা
নোংরা দেহখানা আজও চায়
তোমার মনের অতৃপ্তি ভালোবাসা,
তোমার দেয়া মিথ্যো
প্রতিশ্রুতি গুলো আজও
আমার চোখের মাঝে
অশ্রু ঝরায় গভীর রাতের
জোনাকি ডাকা অন্ধকার ঘরের মাঝে।
নোংরা স্মৃতিগুলো যতবার ভুলতে চেয়েছি
ততবার চোখের মাঝে ভেসে উঠেছে,
চোখের জল মুছতে চেয়েছিবার-বার
তবু চোখ দু’টো ভিজে উঠেছে বারংবার।
রাতের আঁধারে নাড়াদেয় হৃদয় মাজারে
তোমার দেয়া মিথ্যো আশার প্রতিশ্রুতি,
আজও কাঁদায় প্রতিরাতে ঘুমের ঘরে
অতৃপ্ত ভালোবাসারটানে।
আত্নবিশ্বাস
অনেক বিশ্বাস করে শপেছিলাম
এই দেহ-মন তোমাকে……
কত স্বপ্ন বুনেছিলাম তোমাকে নিয়ে।
কত না বাহানা করে
নিয়েছিলে আমার দেহটি দখল করে,
আবেগের মোহে পড়ে
এই দেহ-মন শপেছিলাম
তোমাকে………..
দু’দিন পরে সব ভুলে
ভাঙলে আমার অবুঝ মন….
কুমারী হয়েও আজ আমি জননী
লজ্জা ঢাকতে ছেড়েছি নিজ ঘর-বাড়ি
হয়েছি দেশান্তর………
তোমার স্পর্শে জীবন আমার
হয়েছে ধু-ধু বালুচর,
প্রায়শ্চিত্ত করবো আজ
দু:স্বপ্নের কালোরাত
ক্লান্তবুকে বিধেছে তীর
রক্তে ভরা দু’টো হাত।
গঙ্গার জলে ধুয়ে আজ
চলে যাবো অচিনপুর,
মুক্ত করবো সব
এই পৃথিবীর মায়াজাল!