সৈয়দা রুখসানা জামান শানুর গল্পের বইয়ের আলোচনা: মো.নজরুল ইসলাম।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে শিশু-কিশোর উপযোগী রচনা নিত্যান্তই কম নয় ।
তবে এর মধ্যে প্রতিশ্রুতিশীল কবি-লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্য-গবেষক সৈয়দা রুখসানা জামান শানুর রচিত ‘মহানায়ক মুজিব ভাইয়ের গল্প’ বইটি ব্যতিক্রম।
বিষয়বস্তুর উপস্হাপনায় ভিন্নতা, চমৎকার পৃষ্ঠা সজ্জা ও বর্ণিল একাধিক দূর্লভ আলোক চিত্রের সংযোজনের ফলে বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। সাধারণত শিশু-কিশোরা ইতিহাসের বই পড়ার চাইতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে গল্পের বই পড়তে। রুখসানা জামান শানু’র বইটি ইতিহাসনির্ভর হলেও এটিকে নানন্দনিকতায় সাজিয়ে গল্পের মত করে শিশু-কিশোরদের পাঠ উপযোগী করে লেখা হয়েছে।
বইটি প্রকাশ করেছে মৃদুল প্রকাশন। গত অমর একুশে বই মেলায় প্রথম সংস্করণের সব বই শেষ হয়েছে। বইটির ব্যাপক চাহিদা থাকায় একই বছরের জুন’ এ দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপা হয় ।
লেখক শানু জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের কাছে বইটি ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। তাই প্রকাশনা সংস্হাটি আগামী অমর একুশে গ্রন্থ মেলা-২০২২ ‘র জন্য তৃতীয় সংস্করণ ছাপার কাজ শুরু করেছে। লেখক তাঁর বইটির নাম ‘মহানায়ক মুজিব ভাইয়ের গল্প’ রাখলেও মূলতঃ বইটি ইতিহাস নির্ভর। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এ দেশের শিশু-কিশোরদের মাঝে বিস্তৃতভাবে তুলে ধরতে ইতিহাসের সহজ পাঠ হলো এই বইটি।
এতে বিধৃত আছে, বাংলাদেশের আর পাঁচটি জনপদের মত অতি সাধারণ একটি জনপদ টুঙ্গিপাড়া। এই টুঙ্গিপাড়ার এক নিভৃত গ্রামে জন্ম নেয়া ছোট্ট ‘খোকা’ কীভাবে পর্যায়ক্রমে সবার প্রিয় মুজিব ভাই, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতার স্হপতি, জাতিরজনক’ হয়ে উঠলেন তারই সবিস্তার বর্ণনা রয়েছে বইটিতে। লেখক এসব তথ্য তুলে ধরেছেন সহজ-সরল ও সাবলিল ভাষায় ৷ এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে বইটির পাতায় -পাতায়। সে বিবেচনায় এটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গল্পের বই নয়, রয়েছে তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) জীবন ও কর্মের ইতিহাসের ধারাবাহিক বর্ণনা। যার প্রতিটি অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছেন স্মরণীয়-বরণীয় বঙ্গবন্ধু।
বইটির প্রথম মলাট কাভারে নব্বইটি গ্রন্থ প্রণেতা বিশিষ্ট কবি,সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও গবেষক মফিদা আকবর লিখেছেন, -আমি ছোটদের জন্য বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশ ক’টি বই লিখেছি। অথচ মুগ্ধ হলাম, একই বিষয়ে সৈয়দা রুখসানা জামান শানুর লেখার ধরণ দেখে। তাঁর বইটি সম্পূর্ণ ভিন্নমাত্রীক। এতো দরদ মাখানো এবং ইতিহাসনির্ভর লেখা যা বঙ্গবন্ধুকে জানতে,তাঁকে উপলব্ধি করতে শিশু মস্তিষ্কে অনায়াসে গেঁথে যাবে। বইটি পাড়ে শিশুরা খুব সহজে বঙ্গবন্ধুকে অনুকরণ-অনুসরণ করতে শিখবে। কারণ শিশুরা সহজাত অনুকরণ প্রিয়। তাই বঙ্গবন্ধুকে যে শিশুরা অনুসরণ বা অনুকরণ করবে সেই দেশপ্রেমে উদ্ভূদ্ধ হবে। ওই শিশু ভবিষ্যতে একজন সুনাগরিক তথা সৎ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে। তার ভাষায় (মফিদা আকবর), বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইটি শিশু-কিশোরদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত বা স্কুল লাইব্রেরিতে স্হান পাওয়ার যোগ্য। এ বই থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে আরও নিবিড়ভাবে জানতে ও উপলব্ধি করে নিজেদের মেধা-মনন সমৃদ্ধ করতে পারবে।
বইটির লেখক সৈয়দা রুখসানা জামান শানু নানা গুনে গুণান্বিত। তিনি একাধারে কবি,লেখক, বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও নিপিড়ীত-বঞ্চিত নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য এ যাবৎ শানু একাধিক দেশিয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন। তার সাহিত্যের সীমা দেশিয় গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসীমায় বিস্তৃত। এরই মধ্যে তিনি অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
শানুর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে শিশুতোষ গ্রন্থ:
বর্ষা যখন রঙিন
ছোটদের ইসলাম
মহানায়ক মুজিব ভাইয়ের গল্প
কাব্যগ্রন্থের মধ্যে:
ভালোবাসা
আস্হার অহংবোধ
বৈষম্য
আতশী
বন্ধুদের জন্য
নানা রঙের প্রণয়লীলা
ও
জেনে নাও নজরুলকে।
তার রচিত একমাত্র উপন্যাস ‘রেশমি চূড়ি’ সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে।
তার প্রবন্ধগ্রন্থ, চৈতিফসলে বিভাজন।
এক কথায় বলা যায় সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে শানু’র হাতের ছোঁয়া পরেনি। অবিরাম দু’হাতে তিনি লিখে চলেছেন ক্লান্তিহীন।
নিয়মিত সাহিত্য চর্চায় তাঁর রয়েছে একাধিক গবেষণা পত্র।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:-ফোক লিটারেচার অব বাংলাদেশ (ইংরেজিতে),
আলিয়া ও কওমী মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে গবেষণা, গ্রামীণ নিরীক্ষা,
নিম্ন-আয়ের মানুষের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যস্হার ওপর গবেষণা,
৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের পারস্পরিক শিখন নিয়ে গবেষণা।
এছাড়াও অসংখ্য ছড়া ও কাব্য এবং গল্পগ্রন্থ, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, চিঠি ও উপন্যাস অপ্রকাশিত রয়েছে তাঁর।
বর্তমানে পল্লিকবি জসীম উদদীন কে নিয়ে একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লেখক।
গবেষণাধর্মী এ গ্রন্থটি প্রকাশিত হবে ২০২২’র অমর একুশে গ্রন্থ মেলায়।
এরই মধ্যে পাঠকপ্রিয়তা লাভ করায় ‘মহানায়ক মুজিব ভাইয়ের গল্প’ বইটি বজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট প্রকাশনী সংস্হা এর তৃতীয় সংস্করণ ছাপার কাজ করছে। এ বইটি পাওয়া যাবে আগামী একুশে গ্রন্থ মেলায় মৃদুল প্রকাশন স্টলে।
লেখক: সৈয়দপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সাফ জবাব পত্রিকার নিবার্হী সম্পাদক ও দৈনিক সময়ের আলো, সৈয়দপুর প্রতিনিধি।
১ Comment
congratulations.