ভয়ংকর স্বপ্নগুলো
তাসরীনা শিখা।
কাল ভোরে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। স্বপ্ন আধিকাংশ সময়ই দুঃস্বপ্ন হয় আমার। গর্তে পা ঢুকে যায় বের করতে পারিনা। বাতাসে দরজা জানালা খুলে গেছে কিছুতেই বন্ধ করতে পারছি না। রাস্তা হারিয়ে সারা শহর গাড়ী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। এ ধরনের স্বপ্ন মোটামুটি অনেক সময়ই দেখি। স্বপ্ন আমি প্রতি রাতেই দেখি। যে রাতে আমি স্বপ্ন দেখি না আমি ধরে নেই আমার রাতে ভালো ঘুম হয়নি। কাল রাতের স্বপ্নটা ছিলো একদম অন্য রকম। স্বপ্নটা দেখে যখন ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার বুকের মাঝে একটা পাথর চেপে আছে মনে হোল, আর একটা ভয় আমাকে এমন ভাবে চেপে ধরলো মনে হোল আমার সারা শরীর অবশ হয়ে গেছে। এই ভাবটা নিয়ে আমার সারাটা দিন কেটে গেলো।
একদম ভোর তখন। ঠিক মতো আলো ফুটে নি তখনো আকাশে। আমি স্বপ্ন দেখলাম আমি আমাদের বাড়ীতে। যদিও বাস্তবে এটা আমাদের বাড়ি না কিন্তু স্বপ্নে মনে হচ্ছিল এটাই আমাদের বাড়ি। বিশাল খোলা মাঠের মাঝে পুরনো একটা কাঠের বাড়ি। সে বাড়ীতে কেউ নেই আমি একা। সবাই আমাকে রেখে কোথায় যেনো চলে গেছে। পুরানো মটমট করা দরজা। দরজা বন্ধ করতে গেলাম কিন্তু কিছুতেই ছিটকানি লাগাতে পারলাম না। পূরানো জঙ ধরা ছিটকানি । বারান্দাতে এসে দাঁড়ালাম। রেলিঙে হাত দিতেই রেলিঙটা এমন ভাবে নড়বড় করে উঠলো যেনো এখনি ভেঙ্গে পরবে।বাড়ীর পেছনে আমাদের যে জলপাই গাছটা ছিলো সেটা থেকে প্রচুর জলপাই নীচে পচে গলে গেছে। হরবরই গাছে মাকড়সার জাল ঘিরে আছে।বুঝা যাচ্ছে এ এলাকাতে বহুদিন কেউ আসেনি। খুবই অবহলিত অবস্থাতে পড়ে আছে আমাদের বাড়ীর পুরো এলাকাটা। বারান্দাতে দাঁড়িয়ে দেখলাম বিশাল গেট দিয়ে অনেক লোক ঢুকছে।গেটের পাশে বসে একজন লোক বিরাট একটা ফাইলে সবার নাম লিখছে যারা ভেতরে ঢুকছে। তখনি দেখলাম আমার আব্বাকে, সাদা ধপধপে পাঞ্জাবি পরা চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা , ব্যাক ব্রাশ করা চুল। যে ভাবে আব্বাকে জীবিত অবস্থাতে দেখেছি ঠিক সে রকম। এত স্পষ্ট এত কাছ থেকে আমি আব্বাকে বহু বছর দেখিনি। আব্বা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। উল্টো দিক থেকে আসছে আমার স্বামী। আব্বা কি যেনো বললেন আমার স্বামীকে । স্বপ্নে শুনতে পেয়েছিলাম কথাটা। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গার পরে কিছুতেই মনে করতে পারলাম না। সারাদিন এই ভাবনা নিয়ে থাকলাম আব্বা কি বলে গেলো আমার স্বামীকে। আবার আমার ভাই পিয়াসকে দেখলাম আমার পিঠ থেকে খুঁটে খুঁটে কাঁদা মাটি পরিস্কার করছে। খুব ভয় পেলাম কেন স্বপ্নে আব্বাও পিয়াস আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষদের দেখলাম?
কাল কি আব্বা আর পিয়াসের দেখা হয়েছিলো । ওপাড়ের মানুষদের কি এপারের মানুষদের মতো দেখা সাক্ষাৎ হয়? কি জানি ওপার থেকে কেউ এসেতো খবর দেয়নি। গত ১৩ই অক্টোবর ছিলো আমার ভাই পিয়াস করিমের আমাদের ছেড়ে চলে যাবার দিন। আব্বা কি সেটা বলতে এসেছিলেন? আব্বা কি ভেবেছিলেন আমরা কথাটা ভুলে গেছি ?
আমি কখনো মিষ্টি ঝর ঝরে রোমান্টিক স্বপ্ন দেখি না। সব অস্বাভাবিক স্বপ্ন এসে আমার সামনে দাঁড়ায় । কখনো মৃত ব্যক্তি বা কারো খারাপ কিছু হবে সে সংকেত অথাবা আজরাইল সাহেব আমাকে নিতে এসেছেন এধরনের অদ্ভুত ভীতিকর স্বপ্ন আমার রাতের বেলার সাথী । কখনো কখনো এই স্বপ্ন গুলো কাঁকতলিও ভাবে সত্যি হয়ে যায় , তখন নিজেকে নিজের ভয় লাগতে থাকে। ভাবি আমি তো এই স্বপ্নগুলো দেখতে চাই না তাহলে কেনো দেখিবে জানিনা ।
বেশ কয়েক বছর আগের কথা আমি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। রাতে একদিন স্বপ্ন দেখলাম কালো কাপড় পড়া দুজন লোক টেনে হিঁচড়ে আমাকে বিছানা থেকে নিয়ে যেতে যাচ্ছে , আমি চিৎকার করে বলছি না আমি যাবো না, যাবো না। আমার স্বামী আমার চিৎকারে ধড়ফড় করে বিছানা থেকে উঠলো কি হয়েছে কি হয়েছে বলতে বলতে। আমি কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলাম ওরা আমাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে । ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, কিছু না এটা স্বপ্ন ঘুমিয়ে পরো। যাহোক এই স্বপ্ন নিয়ে আমি কখনো আর মাথা ঘামাইনি। কিন্তু আমার স্বামীর উপর এই স্বপ্ন ভীষণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করলো। আমার অসুস্থতাও বেড়ে গেলো । ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। আমার চিন্তাতে তার কয়েক পাউন্ড ওজন কমে গেলো । কিন্তু আমি নির্বিকার। আমাকে কোন দুশ্চিন্তাই কাবু করলো না। দুই সাপ্তাহ হাসপাতালে থেকে বাই ওপ সি থেকে শুরু করে সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আমাকে একটা সার্জারিতে যেতে হলো। তারপর আমি দুর্বল কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলাম। সেবার কালো পোশাক ধারী দুজন মানুষ আমাকে নিয়ে যেতে পারে নি। হয়তো কেউ ছিলো আমার সাথে যে আমাকে রক্ষা করেছিলো।
সে আসে মাঝে মাঝে আমার কাছে ২ সেকেন্ডের জন্য। সে আসার আগে আমি বুঝতে পারি সে আসছে। ২ সেকেন্ডের জন্য এসে স্লাইড শোয়ের মতো চলে যায়। যখনি আমি তাকে দেখি মনে হয় আমার অনেক চেনা কিন্তু ২ সেকেন্ডে আমি তাকে চিনে উঠতে পারি না। আমার যে কোন খারাপ সময়ে আমি তাকে দেখতে চাই কিন্তু সবসময় সে আসে না। না আসলে বুঝে নেই আমার খারাপ সময় কাটতে সময় লাগবে।
আমার গল্পগুলো শুনতে খুব ভৌতিক মনে হচ্ছে। পাঠকরা নিশ্চয়ই ভাবছেন এগুলো আজগুবি ভৌতিক গল্প কিন্তু আমার জিবনে এটাই সত্যি গল্প।
১৭ ই অক্টোবর।
টরোন্ট , ক্যানাডা