ভোয়া’-খ্যাত নায়ক-সাংবাদিক কাফি খানের প্রয়াণ:
# যিনি জিয়াকে দিয়ে বলিয়েছিলেন >> শেখ মুজিব মহান জাতীয় নেতা…..♦ সালেম সুলেরী
মিডিয়াব্যক্তিত্ব কাফি খান এক স্মৃতিময় মেধাসিক্তজন। সাংবাদিকতা, সংস্কৃতিচর্চায় প্রগলভ্ ছিলেন ৯০ বছর বয়েসেও। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়া, বীর-উত্তমের প্রেস সচিব ছিলেন। মিডিয়াবন্ধব সুহৃদ হিসেবে সাংবাদিকদের সুনাম কুড়ান। নায়ক, বেতার-টিভির সংবাদ পাঠক, আবৃত্তিকারকও ছিলেন।
চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের অনুরোধে অভিনয়েও ফেরেন। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে নাটক-সিনেমার নায়ক ছিলেন। ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবিতে নায়িকা জয়শ্রী কবিরের বাবা হন। আলোড়িন হন জয়শ্রী কবিবের বান্ধবীকে বিয়ে করে। সে কথা দিয়ে কৌতুক করেছিলাম ২০১০-এ। নিউইয়র্কে বিশাল বপুর ‘এবিসি সম্মেলনে’ আমন্ত্রিত ছিলেন। আমিও আমন্ত্রিত ছিলাম সাহিত্য ও আলোচনায়। ঠিকানা’র তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাঈদ-উর-রব নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। কাফি ভাই-এর সাক্ষাৎ পেতে সাহায্য করেন ‘দেশ’ প্রকাশক মনজুর হোসেন।
একটা দুর্লভ সাক্ষাৎকার সেদিন নিতে পেরেছিলাম। বলেছিলেন নেপথ্যের অনেক না বলা কথা। বিশেষ করে সাংবাদিক আশরাফ খান কর্তৃক জিয়ার সাক্ষাৎকার। ১৯৭৮-এ দৈনিক সংবাদ-এর সেই সাক্ষাৎকার বিপদাপন্নও করেছিলো। প্রেসিডেন্ট জিয়া বলেছিলেন >> ‘শেখ মুজিব মহান জাতীয় নেতা। আমি ক্ষমতার আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছি।”
কাফি খান বলেছিলেন >> তখন বঙ্গবন্ধুর নাম কেউ নিতো না। কিন্তু সুহৃদ প্রেসিডেন্ট জিয়া নতুন ইতিহাস গড়লেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে সবার আগে বঙ্গবন্ধুর নাম নিলেন। এ বিষয়ে আমাদের সাথে পূর্বে আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু বক্তব্যটিতে নিজের বলয়েই শত্রু তৈরি হয়। ফলাফলে ১৯৮১-তে চট্টগ্রামে নির্মম হত্যার শিকার হন তিনি।
আরও কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব স্বাক্ষী কাফি খান। তথ্যের কী যে বিশাল ভান্ডার ছিলেন বহুমাত্রিক কাফি ভাই…। প্রবাসের ‘বোকারাম মিডিয়াগুলো’ তা কাজে লাগাতে পারেনি। ভয়েস অব অ্যামেরিকা’র হয়েও দীর্ঘদিন ছিলেন নিভৃতিতে। ২০২১-এর পয়লা জুলাই ত্যাগ করলেন শেষ শ্বাসটুকু। মৃত্যকালে বয়েস দাঁড়িয়েছিলো প্রায় ৯৩ বছর।
জন্ম ১৯২৮-এর পয়লা মে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার মুখে ঢাকায় স্থায়ী হন ১৯৪৬-এ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নাট্য ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ। আবৃত্তিশিল্পেও রেখেছেন সুকন্ঠের সুকৃতি। ভয়েস অব অ্যামেরিকায় যোগদান ১৯৬৬-এর সেপ্টেম্বরে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে অ্যামেরিকায় জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। ‘বাংলাদেশ লীগ অব অ্যামেরিকা’ গঠিত হয় ওনার মেরিল্যান্ডের বাসায়। এই সংগঠনটিই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মার্কিন মুল্লুকে ঝড় তোলে। সদ্যপ্রয়াত কাফি খানের সংসারে স্ত্রী কামরুন্নাহার, চার সন্তান। ৯০ বছর বয়েসে জন্মদিন পালন করেন ভার্জিনিয়ার বাড়িতে।
বন্ধু-সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরনকে সবিশেষ ধন্যবাদ। অতিদ্রুত প্রয়াণবার্তাটি প্রযুক্তিপ্রধান পাঠকদের পৌঁছিয়ে দিলেন। কাফি খানের পরলোকগমনে ইতি ঘটলো একটি অধ্যায়ের। বিদেহী আত্মা স্বর্গীয় প্রশান্তি পাক। নিকটজনদের জন্যে শোক, সমবেদনা, শুভকামনা। ♠
♦নিউইয়র্ক, জুলাই ২০২১
# salemsuleri.ss@gmail.com