ভালোবাসার ছাড়পত্র।
সুরমা খন্দকার
বড় আপার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল দুপুরে।শুভ্র সেই কাক ডাকা ভোরে বের হয়েছে। প্রতিদিন সকালটা শুভ্র কে নতুন উদ্যোমে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন দেখায়। শুভ্র মনে করে প্রতি টি সকাল কত মিষ্টি বায়ু স্নিগ্ধ আলো নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়। প্রত্যেকটি সকাল বেঁচে থাকার কত হাজার উপাদান দিয়ে, রাশি রাশি অক্সিজেন দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে কৃতজ্ঞ করছে।
ভোরে উঠে শুভ্র প্রাতঃকালীন কাজ কর্ম সেরে হেঁটে হেঁটে উপাসনালয়ে যায়।
ভোরের নির্মল বাতাস শীতল করে দেয় শুভ্রর মন প্রাণ। স্রষ্টার প্রতি সীমাহীন কৃতজ্ঞতায় শুভ্র ভরে উঠে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে, শুভ্র এই এলো বলে বড় আফার বাসায়।
কি রে এই সময় হলো তোর?
বড়ো আফা বললো শুভ্র কে।
সত্যি আপু আজ টাইমলি আসতে চেয়েছিলাম।
তাও পারিনি অকর্মন্যের যতো কাজ।
সকালে যখন হাঁটছিলাম রাস্তায়, এক অসুস্থ লোককে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখলাম।সবাই দেখছে, কিন্তু লোকটাকে ইমিডিয়েট হাসপাতাল নেয়া দরকার তা কেউ করছেনা।
এগিয়ে গিয়ে দেখলাম লোকটির গা প্রচন্ড জ্বরে পুড়ছে।কাছে গিয়ে দেখলাম লোকটি আমারও পরিচিত।
অনেক বছর পর সাদাত ভাইকে এ অবস্থায় দেখে চিনতেই পারছিলাম না।চেহারায় দাঁড়ি গজিয়ে কাঁচা পাকা দাঁড়ি।
কি মলিন হয়ে গেছে মুখটা।
আপু ভ্রু কুচকে বললো সাদাত?
কোথায় দেখেছিস তাকে, কেমন আছে সে?
হাসপাতাল ভর্তি করে এলাম। জ্ঞান ফিরেছে।
আমাকে চিনতে পেরেছে তারপর আসলাম। শুভ্র এক নিমিষে বললো।
বিশ বছর পর আবার সাদাত নীলিমার আবার দেখা হওয়ার পরিস্থিতি। সময়ের সাথে কত কিছু পাল্টে গেছে।
নীলিমার বিয়ে হয়েছে, একটা ছেলে আছে। বড়ো হয়েছে।
বিয়ের দু’বছরের মাথায় স্বামী মারা গেছেন দুর্ঘটনায়, বিধবা হয়েছেন।
আজও সাদাত নিপুনভাবে রহস্য ময় ভাবে নীলিমার মনে স্পট। আরো ৫বছর আগে সাদাতের এক কাজিন থেকে জানে যে সাদাত আর বিয়ে করেনি, দেশান্তরি হয়েছেন। আজ এত বছর পর তাই আর দুরত্বের পরিপ্রেক্ষিত খুঁজে না। বৈরাগী পাতাগুলোর ও মেয়াদ ফুরিয়েছে তার মতো। ফুলগুলো মরে গিয়েও কাঁটা ডালে আকড়ে থাকে।
শুভ্র, এই শুভ্র নীলিমা ডাকলো।
তুই হাসপাতাল যাওয়ার সময় আমিও যাবো সাদাতকে দেখতে।
যাবা নাকি ভেবে দেখো।
কেন যাবোনা? কি হয়েছে?
না এমনি বলছি,কত ছোট বড় বিধি- নিষেধের গ্রন্থি এ সমাজে, তাই বললাম।
মানুষের চেয়ে কোন কিছু বড়ে হতে পারে না। যেহেতু সাদাত বলেছে,আর কার কি সমস্যা হবে?
দু’দিন পর যখন নীলিমা আর শুভ হসপিটালে গেল।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা গোধূলিতখন।
সাদাত আর নীলিমার জীবনের ও গোধূলি সন্ধ্যা।
বুকের ভিতর শুধু ভালোবাসার অনির্বাণ শিখা।
প্রিয় সাদাত,
অগভীর অখ্যাত ক্ষতরাও হঠাৎ ফুসে ওঠে মরা নদীর জোয়ারের মত।আমি থাকতে চেয়েছিলাম খুব শক্ত করে। কিন্তু বাবা ছোট চাকরি করেন বলে পরিবারের কথা ভেবে আমি শেষ তক হাসতে পারিনি। অসংখ্য কান্নাদের সাথী করে আমি বেঁচে আছি।
অন্তহীন ভালোবাসার অভিশাপ নিয়ে আমি আমাকে ক্ষমা করতে পারিনি।তাই দিন কাটে অসংখ্য ট্রমায়।
এসব আর বলে কি হবে। এক জীবন আর কত পোড়াবে? আমার জিজ্ঞাসু মন প্রতি মুহূর্তে তোমাকে জানতে চাইতো।তাই আজ আর কোনো অভিমান নয়।
এই শহরে অবলম্বন ছাড়া একা বাঁচতে বাঁচতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। কখনো কখনো খুব ছায়ার দরকার হয়।তুমি কি আমার ছায়া হবে এই অবেলায়? এখনো আমাদের মেয়েরা এতোটা স্বাধীন করতে পারেনি নিজেকে। তাই সেদিন বলতে পারিনি।
আজ আমাদের এই অনামী সম্পর্কটার নাম দিবো “ভালোবাসার ছাড়পত্র”।