ব্রাজিলের লেখক পাওলো কোয়েলহো-এর
বই আলোচনা: তসলিমা হাসান
বই: ইলেভেন মিনিটস
লেখক: পাওলো কোয়েলহো
এই প্রথম বই সমালোচনার মত কঠিন একটি কাজ করছি আমি! #পাওলো কোয়েলহো নাকি ব্রাজিলের হুমায়ূন আহমেদ তাই তার বই পড়া শুরু করলাম, আর হুমায়ূন আহমেদ স্যারের আমি অন্ধভক্ত! আমি মনে করি #ইলেভেন-মিনিটস পাওলো কোয়েলহোর সেরা বই! তবে এটি পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক উপন্যাস!
মারিয়া নামের এক সুন্দরী তরুণীর গল্প ‘ইলেভেন মিনিটস’। সে বাস করত ব্রাজিলের এক গাঁয়ে। জীবনের প্রথম প্রেমেই ছ্যাকা খায় মারিয়া। কৈশোরে তার ধারণা হয় সে কখনোই প্রকৃত ভালোবাসার সন্ধান পাবে না। সে বিশ্বাস করত, ভালোবাসা এক ভয়ঙ্কর জিনিস-যা শুধুই কষ্ট দেয়।’ হঠাৎ করেই একটি সুযোগ পেয়ে জেনেভা চলে যায় মারিয়া। যেখানে সে পতিতা হিসেবে শুরু করে তার জীবন। স্বপ্ন দেখে অর্থ ও খ্যাতি কামাবে।
জেনেভাতেও ভালোবাসার সন্ধান মিলে না, শুধু সেক্স ছাড়া। এক তরুণ চিত্রকরের সঙ্গে পরিচয় হয় মারিয়ার। মারিয়াকে এখন অন্ধকারের রাস্তা এবং যৌন আনন্দের মধ্যে যে কোন একটি বেছে নিতে হবে।
এই শ্বাসরুদ্ধকর নতুন উপন্যাসে পাওলো কোয়েলহো সেক্স এবং প্রেমের প্রকৃতি তুলে এনেছেন নিখুঁতভাবে।
দ্যা টাইমস মন্তব্য করেছেন পাওলো কোয়েলহোর বই লাখ লাখ পাঠকের ওপর বিস্তার লাভ করে গভীরভাবে।
ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহো’র “ইলেভেন মিনিটস” বইয়ের ভালো লাগা কিছু কথা।
“কিছু কিছু জিনিস কখনও ফিরে পাওয়া যায় না”
“যারা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে, তারা আমার শরীর জাগিয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। আর যারা আমার দেহ উত্তপ্ত করতে পেরেছে, তারা আমার অন্তর ছুঁতে পারেনি।”
“সুইসরা মিথ্যা কথা বলে না। তারা চুপ করে থাকে। আর নীরবতাই তাদের সাহায্য করে।”
“রুপ বাতাসের মত দ্রুত বদলে যায়”
“এগারো মিনিট। গোটা পৃথিবী ঘুরছে এই এগারো মিনিটের জন্য। এগারো মিনিটের আনন্দ পেতে পুরুষ কত কিছুই না করছে! এগারো মিনিট শেষ, মামলা খতম। পয়সা হজম।”
“কেউ কাউকে হারায় না। কারণ, কেউ কারও নয়।”
“প্রতিটি মানুষের মূল লক্ষ্য হল ভালোবাসার পরিপূর্ণ অর্থ বুঝতে পারা। ভালোবাসার দেখা যেখানে সেখানে মেলে না। ভালোবাসা পাওয়া যায় আমাদের মাঝে; আমরা এটাকে জাগিয়ে তুলি। কিন্তু এ কাজটা করার জন্য আরেকজনকে দরকার। পৃথিবী তখনই অর্থবহ হয়ে ওঠে যখন আমরা পরস্পরের সাথে আবেগ অনুভূতি ভাগ করে নিতে পারি।”
” সর্গ থেকে বিতারিত হবার পর থেকে আমরা হয় কষ্ট সয়ে আসছি অথবা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছি কিংবা অন্যের কষ্ট দেখছি। এ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।”
“মানুষ সবসময়ই যন্ত্রণা পেতে ভালোবাসে, একে জীবনের অংশ করে নেয়।”
“তুমি যদি মনে কর দুঃখ-কষ্ট ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে, সেটা তো বিরাট ব্যপার। তবে ভেবো না অন্য মানুষ তোমাকে বুঝতে পারবে। এ কথা সত্যি সেধে কেউ কষ্ট বা যন্ত্রণা পেতে চায় না। তবু প্রায় প্রত্যেকেই বেদনা খুজে বেড়ায়।”
বইটি পড়ার সময় বারবার মনে হচ্ছিলো এরকম বই আমি কখনো পড়িনি আগে৷ আমাদের সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে যৌনতা এখনো একটি নিষিদ্ধ এবং গোপন বিষয় তবে ইউরোপ আমেরিকার মত দেশে এটা খুব সহজলভ্য এবং খোলামেলা।
অন্যান্য পাঠকদের মতো আমিও ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহোকে চিনি তাঁর বিখ্যাত বই “দ্যা অ্যালকেমিস্ট” এর মাধ্যমে। লেখকের গল্প বলার ঢঙ দর্শনের সাথে এমনভাবে মিলে যায় যে ইচ্ছে করে পরের পাতায় কী আছে সেটা জানতে, বুঝতে, পড়তে।
#সারসংক্ষেপঃ- “ইলেভেন মিনিটস” বইটিতে লেখক ব্রাজিলিয়ান এক পতিতা মারিয়ার বাস্তব জীবনের গল্পকে তাঁর লেখার জাদুকরীতে অনিন্দ্যরূপে উপস্থাপন করেছেন।
গল্পের নায়িকা মারিয়া অন্য সব মেয়ের মত উচ্চবিলাসী স্বপ্ন নিয়ে মধ্যবিত্ত এক পরিবার থেকে উঠে আসে যাদের ভালো স্কুলে পড়ার মতো, দামি জামা- জুতো পরার মত, দামী রেস্টুরেন্টে যাবার মত সামর্থ্য নেই। তবুও মারিয়া সত্যিকার ভালোবাসা পেতে এবং বিলাসী জীবন পেতে অন্য সব মেয়েদের মতই আগ্রহী। বিলাসী জীবনকে উপভোগ করার রাস্তা খুঁজতে মারিয়া একদিন পাড়ি দেয় রিও ডি জেনিরো তে যেখানে যাবার ভাড়া যোগাড় করতে তাকে অনেকদিন কাজ করতে হয়েছে।
নিজের দৈহিক সৌন্দর্য নিয়ে মডেল হতে চেয়ে মারিয়া পড়ে যায় এক কঠিন ফাঁদে! টিকে থাকার জন্য তাকে পতিতাবৃত্তি কে বেছে নিতে হয় পেশা হিসেবে এবং সে উপভোগ করতে থাকে তার স্বাধীনতা, খুঁজে পেতে থাকে দুঃখ, আনন্দ এবং যন্ত্রণার মিশ্র উপায়। একসময় ভালোবাসা তার জীবনে আসে৷ কিন্তু সে ধরা দেবে কি দেবে না সে ইতস্ততভাব তাকে বিক্ষিপ্ত রাখে শেষ পর্যন্ত৷
কিন্তু মারিয়ার জীবনের পরিণতি কেমন হয়?
সে কি পতিতাবৃত্তি কে উপেক্ষা করে সাংসারিক জীবনে ফিরে আসে? সে কি তার ভালোবাসার মানুষটিকে কাছো পায়?
জানতে হলে বইটি পড়তে হবে৷
#প্রতিক্রিয়াঃ বইটির কিছু অংশ খুব অশ্লীল এবং রগরগে বর্ণনা মনে হয়েছে। এমন সব বিষয় পড়েছি যা আমি কখনো শুনিনি বা দেখিনি। ভয়ে শিউরে উঠেছি পড়তে গিয়ে। দুনিয়াতে এমন কিছুও তাহলে ঘটে! মজার কিছু বিষয় জেনেছি বইটি পড়ে তার মধ্যে দু একটি হলো-
সুইসরা কখনো কারো সাথে সেধে সেধে কথা বলতে যায় না।
ব্রাজিলিয়ানরা কারো বাড়িতে প্রথম গিয়ে ফিরে আসার সময় নিজেরা কখনো দরজা খুলে না কারণ এতে করে ঐ বাড়িতে পুনর্বার আসবার সুযোগ ঘটে না।
ব্রাজিলিয়ানরা একটি ম্যাচের কাঠি দিয়ে তিনটির বেশি জিনিস প্রজ্বলিত করে না। ইত্যাদি।
২ Comments
Wonderful.Thanks Taslima Hasan
Very good responce,