বাবার নামে খোলা চিঠি।
(হোস্নেয়ারা বকুল)
আজ বাবা দিবস। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমাকে চিঠিটা লিখছি ।
তোমাকে আমি সম্বোধনটা করতে পারছি না। কারণ জীবনে তো কখনও ঐ ডাকটা ডাকাই হলো না। তুমিকি আর কারো বাবা হতে পেরেছো? কেউ কি তোমাকে ঐ নামে ডাকে ? সে যদি তোমাকে ঐ নামে ডাকে তবে আমি পারিনি কেন? কি অপরাধ ছিলো আমার।
মায়ের মুখে শুনেছি সেই সাত মাস বয়সে আমাকে আর মা-কে ফেলে চলে গেছো। আর কখনো খবরও নাওনি । আমার নানা মামারা চেষ্টা করেও তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি । কেন এমন করেছিলে? মা বলতো আমি যখন কথা বলা শিখলাম, বাবা ডাকতে শিখলাম । জানতে চাইতাম, আমার বাবা কোথায়, আসে না কেন ? দুঃখীনি মা চোখ মুছতো আর বলতো, তুমি যখন লেখা পড়া শিখে বড় হবে তখন তোমার বাবা তোমার কাছে আসবে ।
আমি তখনই মায়ের কাছে পড়তে চাইতাম, বই চাইতাম। তাহলে যে তুমি ফিরে আসবে ।
নানা মারা গেল, মামা খালারা ছোট। আমি আর মা কতটা বোঝা ছিলাম তাদের কাছে কখনও কি চিন্তা করেছিলে?
কিছু কিছু মনে পড়ে, তোমার গ্রাম থেকে কেউ এলে খুব অনুরোধ করতো তোমাকে বলার জন্য যাতে তুমি এসে আমাদের নিয়ে যাও। আজও মনে প্রস্ন সে কথা কি কখনও তোমার কান পযন্ত পৌঁছাতো না?
যখন. ক্লাস ওয়ানে পড়ি, পাশের বাসায় রিপার বাবা এসেছে ঢাকা থেকে ওর জন্য কত কিছু নিয়ে । জামা, জুতা, চকলেট, পাকা পেঁপে আরও কত কি!
জানাে আমার সেদিন পেঁপে দেখে ভীষণ খেতে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু কাকে বলবো? মায়ের হাতে তো টাকা থাকতো না।
বাসায় এসে মাকে যে কতবার প্রশ্ন করেছি, কেন আমাট বাবা আসেনা মা? আবার ও সেই একই কথাই বলেছিল, যেদিন লেখাপড়া করে বড় কিছু হবে সেদিন আসবে। আরও বলেছিল, তুমি এস.এস.সি পাশ করলে একবার তার গ্রামে নিয়ে যাব। তার পর থেকে আর কখনাে আমাকে পড়ার কথা বলতে হয়নি। আমি লেখাপড়ায় অনেক ভালো ছিলাম। তুমি থাকলে বাবা হিসাবে গর্ব করতে পারতে। কিন্তুু তুমি নিজেই সেটা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছো।
আললাহর দয়া, মায়ের কষ্ট, আমার নিদারুন চেষ্টা সব মিলিয়ে নিজেকে একটা অবস্থানে নিয়ে যাই।
মায়ের দেওয়া কথা আর নিজের কৌতুহল মেটাতে, এস.এস.সি-এর পর একবার তোমার গ্রামে গিয়েছিলাম।
তুমি তো সেখানে থাকতেনা অনেক বিষয় আশয় আছে । মাঝে মাঝে সেগুলোর হিসাব নিকাশ করতে যেতে।
এত সমপওি থাকতেও আমি কিনা মানুষ হয়েছি অন্যের বাসায় বোঝা হয়ে। তোমার প্রতিবেশীরা অনেক আফসোস করেছিল তোমার বোকামোর জন্য । (এমন বউ /সন্তানের কেউ খোঁজ রাখে না।)
ততদিনে তোমার প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা জন্মেছিল। কখনও ভাবতাম উকিল হবো, কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো। আবার যখন দেখতাম কোন বৃদ্ধ ফকির দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবতাম, হয়তো একদিন ফকির হয়ে আমার কাছে সাহায্য চাইতে আসবে ।
যাক সে সব কথা, আমার মায়ের অপরিসীম ভালোবাসা, নিরলস চেষ্টা আর দোয়ায় আমি ভালো আছি ।
আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি, মা, স্বামী, সন্তান নিয়ে। সব আছে আমার।
তোমার কি আছে ?
যৌবনের সেই শক্তি? হেঁটে চলার ক্ষমতা ? দায়িত্বে উদাসীনতা?
কি? কি আছে তোমার ?
নাকি আছে শুধু কৃতকর্মের আফসোস, হাহাকার।
আমার কম শিক্ষিত মা হয়তো তোমাকে খুঁজে বের করতে পারেনি। আমি কিন্তুু ঠিকই পারতাম ।
কিন্তুু কখনও সে ইচ্ছা আর ভিতরে তৈরিই হয়নি। আর মনে হয়নি ঘৃণা ভরা মুখটি দেখি।
আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।
আমি—–
১ Comment
Good people do good works in silence