উপলব্ধি
দিল আফরোজ রিমা
পর্ব-৩
ওরা দু’ জনে ঘর বাধবে। এমন সময় একদিন নিলাঞ্জনা বলল, সবাই মিলে চলনা শেষ বারের মতো শান্তি নিকেতনে ঘুরে আসি।
সবাই রাজি হলো ওরা কলকাতা থেকে বাসে রওয়ানা হলো। শান্তি নিকেতনে পৌঁছাতে পাচ ঘন্টা সময় লেগে গেল। বীরভূম জেলার বোলপুরে হোটেল উৎসবে ওরা দুপুরের খাবার এবং অনেকে নামাজও সেরে নিল। তারপর বেরিয়ে পড়ল রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী দেখার জন্য। বিশাল এলাকা জুড়ে গাছপালা ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে এ বিশ্ব বিদ্যালয়।
এক পাশে শান্তি নিকেতন অন্য পাশে বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভবন সমুহ ও হোস্টেল। এখানে মালঞ্চ বাড়ি, বর্তমানে যা বিশ্বভারতী পাবলিকেশন অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্ব ভারতী ঘুরে দেখতেই সন্ধা ঘনিয়ে এলো।
পৌষ মাসের সাত তারিখে কবি রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ছাতিমতলায় ব্রাক্ষ্ম ধর্মে দীক্ষা লাভ করেছিলেন বলে এই দিনে পৌষ মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলা থেকে ওরা সবাই একে অপরকে কিছু কিনে দিয়েছিল।
শান্তি নিকেতনের আশেপাশেই ওদের এক বন্ধু শ্রাবণীর বাড়িতে সব মেয়েরা রাত্রি যাপন করে। আর ছেলেরা থাকে হোটেল উৎসবে।
পরদিন সকালে ওরা শান্তি নিকেতনের উদ্দেশ্যে বের হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা সেখানে উপস্থিত হয়। এখানে রয়েছে দুটি ছাতিম গাছ। এই অংশ টুকুকে ছাতিম তলা বলা হয়। রয়েছে কিছু বকুল ফুলের গাছ যা বকুল বীথি নামে পরিচিত।
দেবেন্দ্রনাথ প্রথমে যে বাড়িটা নির্মাণ করেছিলেন তার নামই শান্তি নিকেতন। সামনেই উপাসনা ঘর। আর একটু সামনে এগোলেও রবীন্দ্র ভবন। বর্তমানে এই খানে বিশ্ব কবির ব্যবহার্য জিনিস পত্র, তার সহস্তে আকা চিত্রকর্ম, গীতাঞ্জলি, কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রাপ্ত নোবেল প্রাইজটিও এখানে সংরক্ষিত আছে।
কবিগুরু খুব খেয়ালী মানুষ ছিলেন। তিনি একটা বাড়িতে বেশি দিন থাকতে পছন্দ করতেন না। শান্তি নিকেতনের এই এলাকায় তার দশটা বাড়ি আছে। আর এই রবীন্দ্র ভবন এলাকায় রয়েছে পাচটি বাড়ি। এক এক ঋতুতে তিনি এক এক বাড়িতে অবস্থান করতেন।
হোটেল উৎসবে দুপুরের খাবার শেষ করে রওয়ানা হলো কোপাই নদীর তীরে। কোপাইয়ের উৎপত্তি ভগীরথি নদী থেকে। নদীটি শহর থেকে বেশ দুরে গ্রাম এলাকায়। গাছপালায় ঘেরা এই কোপাই নদীর তীরে বসে রবীন্দ্রনাথ ভাবতেন। এই ভাবনাগুলোই পরে কবিতা গানে রুপান্তরিত হয়েছে।
নদীটির এক পারে শালবন। ওরা সবাই গাছের ছায়ার বসে। সবাই নিলাঞ্জনা কে কবিতা আবৃতি করার জন্য অনুরোধ করল। নিলাঞ্জনা শুরু করল কবি গুরুর কবিতা।
তোমারেই যেন ভালো বাসিয়াছি শতরূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
নির্ঝর মুচকি হেসে বলে, কাকে ভালো বাসো? রবীন্দ্রনাথকে? না আমাকে।
নিলাঞ্জনা বলল, রবীন্দ্রনাথকে।
স্মৃতির পাতায় বার বার ফিরে তাকায় নির্ঝর আর স্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় একাকার হয়ে। ফিরে পেতে চায় সেই মধুক্ষণ।
সময় ছুটে চলে, তার সাথে বদলায় জীবনের গতি প্রকৃতি। নির্ঝরের পড়াশোনার সমাপ্তি টেনে বিদায় দিতে হলো কলকাতাকে। বাংলাদেশেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিবে এটাই নির্ঝরের ইচ্ছে। নিলাঞ্জনার মা বাবা রাজি হলো ওদের দুজনের বিয়ের ব্যাপারে। নির্ঝরও মায়ের সাথে কথা বলে নিল। দুজনের বিয়ে হলো। নিলাঞ্জনা নির্ঝরের সাথে চলে এলো বাংলাদেশে।
চলবে-