উপলব্ধি
দিল আফরোজ রিমা
পর্ব-২
হাসপাতালের কষ্টদায়ক চিকিৎসা নির্ঝরের আর ভালো লাগে না। ভালো লাগে না রিমঝিম কে ছেড়ে যেতে। তবু্ও ছেড়ে যেতে হবে।
নির্ঝর খুব অসুস্থ হলেও হঠাৎ হঠাৎ শরীর টা ভালো ও লাগে। আজও শরীরটা একটু ভালো লাগছে। রিমঝিম পাশের বেডে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। নির্ঝর ধীর পায়ে মেয়ের কাছে যায়। তার পাশে বসে। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। অঘোরে ঘুমাচ্ছে মেয়েটি। নির্ঝর মনে মনে বলে, আহারে আমার মেয়ে টা কত শুকিয়ে গেছে। কোন যত্ন নেই। ঠিক মতো খাওয়া নেই। গোসল নেই। ঘুম ও নেই। লেখা পড়া তো কতদিন ধরে বন্ধ। সারাক্ষণ একটা ভয়ংকর চিন্তায় চুপসে থাকে মেয়েটা। কখন বাবা কে হারাতে হয়।
মেয়ের পাশে বসে ই পেছনের বারান্দায় দিকে চোখ পড়ে তার। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে কিছু সবুজ গাছ দেখা যাচ্ছে। গাছ গুলো দেখে কখন নিজেকে হারিয়ে ফেলে স্মৃতির অতলে তা নিজেও জানেনা।
মনে পড়ে, বাংলাদেশ থেকে প্রথম লেখা পড়ার উদ্দেশ্যে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতীয় ভু খন্ডে পা রেখেছিল নির্ঝর। সেদিন বাসে যেতে যেতে দেখা যাচ্ছিল সারি সারি মহিলা চালিত সাইকেল। স্কুল কলেজের মেয়েরা যাচ্ছিল সাইকেল চালিয়ে। সেই সময় ভারতীয় গ্রামের বাড়িগুলো কেমন যেন এলোমেলো ছিল। বাড়ির চারদিকে কোন বাউন্ডারি না থাকায় ভিতরে সবই দেখা যায়।
মনে পড়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির কথা। নিলাঞ্জনা সহ আরো কয়েকজন মিলে প্রথম ওখানে ই ঘুরতে গিয়েছিল। ররবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম মৃত্যু এই ঠাকুর বাড়িতেই। দোতলা একটি সাদা রঙের বিল্ডিং, চারিদিকে ঘর এবং মাঝাখানে একটা পাকা উঠুন। নিচতলা ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দোতলা মিউজিয়াম হিসাবে সংরক্ষিত। মিউজিয়াম দেখার জন্য রয়েছে টিকিটের ব্যবস্থা।
দোতলায় যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত চেয়ার টেবিল খাট, পারিবারিক ছবি এবং ব্যবহৃত আর কিছু জিনিস রাখা হয়েছে।
নীলাঞ্জনা ওসবের ভিডিও করছিলো।
সেদিনই ঠাকুর বাড়ি থেকে ওরা রওয়ানা হলো
ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল হল দেখার জন্য। নীলাঞ্জনারই খুব আগ্রহ ছিল ওখানে যাওয়ার। ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল হল দেখার জন্য লম্বা লাইন ধরে টিকিট কাটতে হল।
ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল হলটি ভিকটোরিয়া পার্কে অবস্থিত। ওখানে রানী ভিকটোরিয়ার স্মৃতি বিজড়িত কিছু জিনিস পত্র, ছবি, ভাস্কর্য রয়েছে।
কোন কোন যায়গায় কিছু তথ্য লিখা আছে। নিলাঞ্জনা তাঁর ডাইরিতে তথ্য গুলোকে লিখে নিল। এটা ছিল তার অভ্যাস। সে যেখানে যেতো সেখানকার ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করত।
পার্কের বাইরে ছিল কিছু ঘোড়ার গাড়ি। নিলাঞ্জনার ইচ্ছে হলো ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে চারিদিকটা ঘুরে দেখবে। একশত পঞ্চাশ রুপি দিয়ে ওরা তিনটি গাড়ি ঠিক করল।
উচু ঘোড়ার গাড়ি যখন পার্কের চারদিকে চক্কর দিচ্ছিল হালকা রোদেলা দুপুরের ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া এসে প্রাণের স্পন্ধন বাড়িয়ে দিল। বড়
নারকেল ও বকুল ফুলের গাছ দু’দিকে ছায়াবিস্তার করে আছে। সেদিন নির্ঝর মনে মনে অনেক স্বপ্ন রচনা করেছিল।
ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল পার্ক থেকে আসার কিছু দিন পরেই নিলাঞ্জনার বায়না, সবাই মিলে চলনা একবার বিরলা প্ল্যানেটোরিয়াম দেখে আসি।
এক ছুটির দিনে আরো কয়েক জন বন্ধু মিলে বিরলা প্ল্যানেটোরিয়াম দেখতে গেল ওরা। ইন্ডিয়ার সবচেয়ে পুরোনো এই মিউজিয়ামটি ভারতীয় ইতিহাসে ঐতিহ্যের ওক সমৃদ্ধ ভান্ডার। এখানে হিন্দু সংস্কৃতির বিভিন্ন পুরাকীর্তি সংরক্ষিত রয়েছে। কালো পাথরে খোদাইকৃত বিভিন্ন মুর্তি এবং প্রাণী সেকশনে বিভিন্ন প্রাণীর মডেল রয়েছে। রয়েছে মানুষের মমি। নির্ঝর নিলাঞ্জনা এবং আরো দশ বারোজন শিক্ষর্থী সেদিন অনেক তথ্য যোগার করতে পেরে খুব খুশি হয়েছিল।
ছাত্র জীবনের দিন মাস বছর পেরিয়ে পড়াশোনার শেষ সময়ে পা দিল ওরা। আর মাত্র কিছুদিন পরই বার এট ল কোর্স শেষ হবে। এর মধ্যেই নির্ঝর নিলাঞ্জনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়ে গেছে।
চলবে–
দিল আফরোজ রিমা