বৃদ্ধাশ্রম
ছেলে আমায় বললো এসে
চাকরীতে পেয়েছি প্রমোশন,
সাথে পেয়েছি একটা ফ্ল্যাট
জানো,
চোখ জুড়ানো তার লোকেশন!
সময় পেয়েছি মাত্র দুদিন
গোছাতে হবে সব মালপত্র;
একা বাড়িতে তোমায় আমি
কিভাবে রেখে যায় বলো তো?
তোমার জন্যেও দেখে এসেছি
দারুণ একটা বৃদ্ধাশ্রম;
কতদিন আর করবে বলোতো
এই অক্লান্ত পরিশ্রম?
এই বাড়িতে একলা তুমি
কখন, কোথায় কী হবে!
তুমি জানো ব্যস্ত আমি
আসার সময় পাবো কবে!
দেখো বাবা ওখানে তুমি
ভীষণ ভালো থাকবে;
প্রতি সপ্তাহে তোমার বৌমা
তোমায় দেখতে আসবে।
নির্বাক হয়ে দেখছিলাম আমি
ছেলে নিয়েছে আমার দায়িত্ব,
চোখের জলটা আড়াল করতে
নিজেকে প্রাণপণে করছিলাম শক্ত।
পরের দিনই জায়গা হলো
অজানা এক বৃদ্ধাশ্রম,
অভিমানী মন বললো কেবল
ঠাকুর তুমি এত নির্মম?
ছেলে আমার চলে গেলো
দামী গাড়ি চড়ে;
নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম
পিতৃস্নেহকে আঁকড়ে ধরে।
সপ্তাহান্তে আবেগী চোখ দুটো
তাকিয়ে থাকে পথের পানে,
দিন গড়ায়, আঁধার নামে
ফিরি আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে।
মাস ছয় পরে আজ আমার
ছেলে এসেছে আমায় দেখতে;
মনটা অভিমানী, তবুও চাইছে
বুকে জড়িয়ে ওকে একবার ধরতে!
কিন্তু আমার ব্যস্ত ছেলের
সময়ের অনেক দাম,
হিসেবের খরচ মিটিয়ে দিয়ে
বললো এসে
সময় নেই, আজ চললাম।
ইচ্ছেটা বোধহয় আর কখনো
পূরণ করা হবে না;
প্রার্থনা করি ঈশ্বর তুমি
ওকে আমার এদিন দিয়ো না।
তসলিমা হাসান
কানাডা,২৮-০৮-২০২১
১ Comment
তীব্র কষ্টজড়ানো কবিতা। কবি অনাড়ম্বর ভাষায় একজন পিতার অসহায়ত্ব তুলে ধরেছেন। তাসলিমা হাসানের কবিতা সবসময়ই ভালো লাগে, কারন, প্রথমত, তাঁর কবিতায় বিষয়বৈচিত্র রয়েছে, দ্বিতীয়ত, তাঁর কবিতার ভাষা যেকোনো সাধারণ পাঠকের কাছেই বোধগম্য। কবিকে এবং প্রতিবম্বপ্রকাশকে ধন্যবাদ।