মম তটে বারি ঝরে
জেবুন্নেছা সুইটি
(পর্ব এক)
চপলা এক হরিণী, নাম তার লাবণী। ঘরে থাকেনা মন, গ্রামের মেঠো পথে, বাগানে কিংবা পুকুর পাড়ে আনমনা হয়ে সেই মেয়েটি হাঁটতো সারাক্ষণ! কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাসী মনে গুনগুনিয়ে গান গাইত ! কখনো আবার বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মাটিতে কবিতা লিখতো। আবার দেখা যেত পুকুরে ভেসে উঠা পোনা মাছের গায়ে ঢিল ছুড়ে মারত।পুকুরপাড়ে বসে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা ছিল তার নেশা। কচু গাছ থেকে লতা ছেঁড়া তার শখের কাজ।
মা চিৎকার করে ডাকতো “লাবণী… কই তুই? পড়ার টেবিলেও তো নেই! সারাদিন কোথায় যে থাকে মেয়েটা! ” মায়ের ডাক লাবণী কর্ণপাত হতনা। কারণ লাবনী যে বড্ড আনমনা। সকাল থেকে দুপুর কাটে স্কুলে, বিকেল বনে-বাঁদরের, মাঠে-ঘাটে। এই বাড়ি ঐ বাড়ি আড্ডায়। ঠিক সন্ধ্যায় আযান শুনার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরা, যেনো এক দস্যি মেয়ে লাবনী।
মায়ের সামনে যখন আসতো, মায়ের বকাঝকা তেমন গায়েই মাখত না। মা রেগেমেগে বলত “সারাদিন কি করিস? কই থাকিস?এই বাড়ি ঐ বাড়ি ঘুরাঘুরি ছাড়া আর কাজ নেই তোর? তোর ছোট বোন শ্রাবণী সাথে থেকে সংসারের কাজে এটা-সেটা সহযোগিতা করে। ঘর গুছিয়ে দেয়, তোর বিছানা থেকে শুরু করে পড়ার টেবিল, বই-পুস্তক, কাপড়-চোপড় সব গুছিয়ে রাখে, তোর লজ্জা করেনা। খাওয়ার সময় হলে খেয়ে নিজের প্লেট টাও ধুয়ে রাখিসনা। বিয়ে দিলে শশুড় বাড়ি গিয়ে এই ভাবে চললে তোর শাশুড়ি কথা শুনাবে আমাকে। কি যে করি তোকে নিয়ে”। লাবণী চুপ করে থাকে।
মায়ের কথার কোনরকম উত্তর না করে, নিজের রুমে এসে ছোট বোনের উপর রাগ ঝাড়া তাঁর স্বভাব।
চুল টেনে চোখ রাঙিয়ে বোনকে বলে ” এই মুটকি, সারাদিন ঘরে থাকিস আর কাজ করিস, তোর জন্য মায়ের কাছে কথা শুনতে হয়।
ইস্ আমাকে বিয়ে দিবে! শশুড়বাড়ি পাঠাবে! কতো সখ! আমি বিয়ে করলে তো.. ! মাকে বলে দিস, আমি বিয়ে টিয়ে করবো না। পাত্র পক্ষ দেখতে আসলে, আমি তোকে দেখিয়ে দিবো। তুই তো আমার চেয়ে ভালো বুদ্ধিমতি, মোটাসোটা, তোকে আমার চেয়ে বড় লাগে দেখতে, তোকে আগে বিয়ে দেবো, আর আমি অনেক লেখা পড়া করবো।
(পর্ব দুই )
ছোট বোনটা ভীষণ চুপচাপ, দেখতে লাবণীর মত এতো সুন্দর না। কিন্তু চাল চলন কথাবার্তা অনেক গোছানো। কখনো কারো’র কথার উত্তর করে না। সব সময় চুপচাপ থাকে, নিজের মতো করে থাকে। ছোট বোন টার তেমন কোন ও বান্ধবীও নাই। বাড়ির কাজিনদের সঙ্গে লাবনী’র বেশ বন্ধুত্ব, ভীষন ভাব!!! সে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। ছোট বোন টাকে কেউ তেমন পাত্তা দেয় না। লাবনীকে সবাই পছন্দ করে, আদর করে, এমন কি ঘরের কাজের বুয়া টাও লাবনী’র ভক্ত। কাজের অমিল বা মতের অমিল থাকলেও হাজার রকম অভিযোগ থাকলেও তাদের দুই বোনের মধ্যে ভীষণ ভালোবাসা!!! মা, লাবনীকে বকাঝকা যেন না দেয়, সেই জন্য শ্রাবণী লাবনী’র সব কাজ গুছিয়ে দেয় । দুই বোন পিঠাপিঠি হলেও, দেখতে জমজ বোনের মতো মনে হয়। এক’দিন দুই বোনের মধ্যে এক মজার কান্ড ঘটলো । “কুতকুত খেলার” (চারা খেলা) ছলে দুই বোনের মধ্যে কথা কাটাকাটি চরমে পৌঁছে গেল। শ্রাবণী খেলায় বারবার জিতে যাচ্ছে দেখে, লাবনী ফাইজলামি শুরু করলো!
এক পর্যায়ে লাবনী শ্রাবনীর চুল ধরে হ্যাঁচকা টান দিলো। শ্রাবণী খুব ব্যাথা পেলো। বিরক্ত হয়ে লাবনীকে দুটো কিল ঘুষি দিলো শ্রাবণী! লাবনীর পাল্টা কিল ঘুষি খাওয়ার ভয়ে শ্রাবণী এক দৌড়ে পালানোর সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে সাংঘাতিক ভাবে ব্যাথা পেল। ব্যাথার চোটে শ্রাবণী কান্না জড়িত কন্ঠে মায়ের কাছে মিথ্যে নালিশ করলো লাননীর বিরুদ্ধে। বললো “আপু আমাকে ধাক্কা মেরেছে”। মা রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে বললো “তুই আজকে ঘরে আস তবে দেখাবো মজা, তোর পাড়া বেড়ানো বের করবো দস্যি মেয়ে একটা”। লাবণী মিথ্যা বানোয়াট কথার উত্তর না করে, বোন/মায়ের সঙ্গে অভিমান করে এবং মায়ের হাতের মাইর খাওয়ার ভয়ে, সারাদিন ঘরে ফিরলো না । সন্ধ্যা হ’য়ে রাত আট’টা.. ক্রমে রাত গভীর হতে লাগলো! মায়ের টেনশন বেড়ে গেলো। মা ভাবতে লাগলো “মেয়ে আমার কোথায় গেল”!
আজকাল আশেপাশে যে হারে মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে। আর বসে না থেকে লাবনীর মা লন্ঠন হাতে রাতের অন্ধকারে বের হয়ে গেছ। এবাড়ি-ওবাড়ি খুঁজতে লাগলো! মেয়ে কোথায়ও নেই। আশেপাশে কারো ঘরেই লাবনীকে পাওয়া গেল না। মা ভাবলো হয়তো মেয়ে তাঁর ফুপু’র বাড়ি চলে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে রওনা দিলো ফুপুর’র বাড়ির দিকে। ফুপু’র বাড়িটা অনেকটাই দূরেই তারপরেও মায়ের মন তো! ফুপুর বাড়ি যেয়ে দেখে লাবণী সেখানেও নেই।
২ Comments
Congratulations
টেনশন বেড়ে গেল কি হবে? কোথায় পাবে?
পরের পর্ব চাই।