প্রেমের পরাজয়
আদ্রিতা মেয়েটা দেখতে শুনতে ভালোই, কিন্তু একটু ফাজিল টাইপের স্বভাব। যার তার সাথে মজা-মাস্তি করে বেড়ায়। আর যেকোনো স্মার্ট রসিক ছেলে দেখলেই তার হুট করে ভালো লেগে যায়। এই বিষয়টা তার ভার্সিটির কিছু শিক্ষক লক্ষ্য করে এবং তাকে অনেক বকা-ঝকা করে। এতে তার মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।কারণ সবসময় সে স্বাধীনতা নিয়ে চলতে চায়। কিন্তু সমাজে তা গ্রহণ যোগ্য নয়। সে এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখায় তেমন একটা ভালো না।
পড়ালেখায় অনিচ্ছার কারণে বাসা থেকেও অনেক বকা-ঝকা শুনে থাকে। তবুও পড়ালেখার প্রতি তেমন একটা গুরুত্ব নেই। সে কলেজে প্রতিদিন সবার আগে গিয়ে বসে থাকে। এবং বন্ধুদের সাথে মজা-মাস্তি করে। কই থেকে যেন হুট করে একটা স্মার্ট রসিক ছেলে বের হলো ক্যাম্পাসে। দেখেই মনে হচ্ছে ভদ্র আর মেধাবী। বয়স হয়তো ২৮ হবে। ছেলেটির উপর চোখ পড়ে আদ্রিতার। দেখেই তার মনে ধরে যায়। তার কাছে মনে হলো শত ছেলের মাঝে এই একজন—যে ভালো লাগার মতো। কিন্তু ছেলেটি যে এই ভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে নতুন জয়েন করেছে সেটা আদ্রিতা জানে না। আদ্রিতা সেই ছেলেটির পেছনে লেগে থাকে। এবং তাকে চোখে চোখে রাখতে চেষ্টা করে। আদ্রিতা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছেলেটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকে। কিন্তু ছেলেটি জানে না যে, আদ্রিতা তাকে এতটা ভালোবাসে। আদ্রিতা এখন অনেকটাই ভালো হয়ে গেছে। এখন আর বন্ধুদের সাথে তেমন আড্ডা দেয় না। সব সময় বই নিয়ে পড়তে থাকে। তার সহপাঠীরা দেখে অবাক যে, আদ্রিতা এত তাড়াতাড়ি কীভাবে পাল্টে গেলো! একদিন খুব সকালে ভার্সিটিতে আসে আদ্রিতা। ছেলেটিও আসে। আদ্রিতা আজ সুযোগ পায়—তার মনের কথাগুলো বলার। ছেলেটি একা দাঁড়িয়ে আছে একাডেমিক ভবনের বারান্দায়। আদ্রিতা চুপি চুপি তার কাছে গেলো। – এই যে ভাইয়া শুনছেন? – ইয়েস, বলো। – ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো, যদি কিছু মনে না করেন।
– আচ্ছা কী কথা বলো। – ভাইয়া আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে। – ও তাই নাকি। ভালো… তো কী বলতে চাও? – যেটা বলতে চাই সেটা কি আর আপনি মেনে নিবেন? – মানে? – মানে, অনেক দিন ধরে আপনাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করছি। ভালোও বেসে ফেলেছি। – তুমি ভালোবাসো আমাকে! (ছেলেটি হাসলো) হা হা হা….। তোমার মতো একটা অযোগ্য জড় পদার্থ ভালোবাসে আমাকে?..আমি তো এটা ভাবতেই পারছি না। আদ্রিতার ভীষণ মন খারাপ হয়। কারণ ছেলেটির কাছে বতর্মানে সে অবহেলার পাত্র। আদ্রিতা একটু নিচু কন্ঠ সুরে বলল, – ভালোবাসাটা কি কোনো অপরাধ? – অপরাধ নয়। কিন্তু তোমার মতো একজন অযোগ্য মেয়ে কখনোই আমার জীবনসঙ্গী হতে পারে না। আদ্রিতা মাথা নিচু করে তার সামনে থেকে সরে গেলো। চোখের পানি মুছতে মুছতে বাড়িতে চলে এলো।
পড়ার টেবিলে বসে সে ভীষণ ভেঙে পড়লো। কারণ এতটা অবহেলার সম্মুখীন সে কখনোই হয়নি। আদ্রিতার মনে ভীষণ ক্ষিপ্রতা জাগলো। সে প্রতিজ্ঞা করলো—আমি কোনো একদিন ছেলেটির সামনে যোগ্য হয়ে দাঁড়াবোই। সে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করবে। তার মা-বাবাকে অনেক অনুরোধ জানালো টাকা ম্যানেজ করে দেওয়ার জন্য। তার বাবা কিছু নিজস্ব জমি বিক্রি করে তাকে টাকা ম্যানেজ করে দিলো। অদ্রিতা পড়ালেখার জন্য চলে গেলো থাইল্যান্ডে। সেখানে পিএইচডি শেষ করে আবার দেশে ফিরে আসে সে। অদ্রিতা এখন সফলতার পথে। মাঝে কেটে গেছে অনেক বছর। দেশে এসে আদ্রিতা ওই ভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। এবং তার নিয়োগ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই সেই ছেলেটার কানে খবর এলো, আদ্রিতা নাকি এই ভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক। এ কথা শুনে ছেলেটি অবাক হলো। এটা কীভাবে সম্ভব! হঠাৎ ক্যাম্পাসে আদ্রিতার সাথে ছেলেটার দেখা। আর ঠিক তখনি ছেলেটির মনে পড়ে যায়—আদ্রিতাকে অবহেলা করার মুহূর্তগুলো। কিন্তু ছেলেটি আজ তার সাথে কথা বলার কোনো সাহসই পেলো না। ছেলেটি বুঝতে পারলো যে, ভালোবাসা সব সময় যোগ্যতার কাছে হার মেনে যায়।
লেখক: কবি ও কথা সাহিত্যিক, কানাডা প্রবাসী, ১৩-১০-২০২১
২ Comments
“ভালোবাসা সব সময় যোগ্যতার কাছে হার মেনে যায়”….প্রত্যাঘাতে ঘুরে দাঁড়াবার চমৎকার একটি প্রেরণাদায়ক গল্প। লেখককে অজস্র ধন্যবাদ।
congratulations.