ফারহানা আহাসান-এর গুচ্ছকবিতা:
এক বৃষ্টিতে
যেখানে তোমার আকাশ ছোঁয়া শেষ হবে
সেখানেই আমার রবির উদিত হবে।
ও প্রিয় তোমার পিন্জরে আমি
থাকতে চাই জীবন মাঝে।
নব সাঁজে রংধনু
সাজবে আবার রঙের খেলায়।
আমরা দুজন মিলবো তখন
আকাশ বৃষ্টির আঁধো আলোয়।
মেঘের পালা দূরে সরে যাবে
ধূসর রঙের ছায়ায়
সোনালী আভায় বরণ করবে,
তোমার হৃদয়ের মাঝে॥
হয়তো হেটে হেটে বহুদূর
হাতে হাত থাকবে
তবু থাকবে না কো ক্লান্তির ছাপ
শুধু থাকবো দুজনের দুজন।
সাদর সম্ভাষণ
তুমি আমার জীবনে শুভ সুচনা
তুমি শিশির ভেঁজার আলতো ছোঁয়া
তোমায় জানাই আমি
সাদর সম্ভাষণ।
ভোরের ঝিরি ঝিরি হাওয়া তরঙ্গে
ভেবেছিলাম আসবে বলে
তোমায় জানাই আমি
সাদর সম্ভাষণ।
গোঁধুলীর আভায় দোলা দিয়ে যায় চেনা অচেনা পথে
ঐ বাঁকে বাঁকে।
তুমি আমার জীবনের প্রথম ফুটন্ত অঙ্কুর
তোমায় জানাই আমি
সাদর সম্ভাষণ।
আলোর মাঝে স্বপ্ন যেমন সত্যি হয়না
তুমি আমার সাঁজের ডুবন্ত উষ্ণ হবেনা
জ্বালিয়ে দ্বীপ শিখা
তোমায় পেয়েছি খুঁজে
তোমায় জানাই আমি
সাদর সম্ভাষণ।
রবি তুমি
উষা হতে উদীয়মান রবি তুমি
জাগালে প্রেমের প্রদ্বীপ,
ওষ্ঠ কাঁপিয়া
নিমন্ত্রণ জানাই
দুয়ারে দাও কড়া।
তোমায় মনে রবে জীবন মাঝে
উঠিয়া রই জাগ্রত আঁখি মেলে
নিভৃত নির্জনে তোমারে সুধাই
গেঁথে আছ মোর সিদ্ধি জুড়ে।
জগৎ সংসার মিছে সব
যদি একবার দেখা পাই।
এসো তবে দুয়ার কুলে
তুমি রবী ঠাকুর।
তুই কি আমার শরৎ হবি??
তুই কি আমার শরৎ হবি?
শরৎ কালের শরৎ মাখা দিন
শরৎ আকাশের মত হবে তোর মন
যেখানে তোর মনটা হবে নীল আর বিশাদ
যেখানে কাঁশ ফুলের ছোয়ায়
মিষ্টি হাওয়ায় দোলবে ।
তুই কি আমার শরৎ হবি?
শরৎ আকাশে যেমন ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘ
তেমন করে আমি ভাসবো তোর ভালোবাসায়।
তোর আকাশে আমি
সাদা মেঘের ভেলা।
তুই কি আমার শরৎ হবি?
ঘন বর্ষার পর যখন শরৎ আসে
সিন্গ্ধতায় আর উজ্জলতায় ভরে থাকে চারিদিক
সবুজ গাছের পাতার মত সজিবতা নিয়ে
তুই আসিস আমার জীবনে।
তুই কি আমার শরৎ হবি?
নদীর পাশচেয়ে কাঁশ ফুল যেমন
সাদা মেঘে মিশে আছে
তুই আমায় এমনটি রাখিস।
তুই কি আমার শরৎ হবি?
ভোরের শুভ্রতায় শিউলী সুবাসে
আমার হাতে তুলে দিবি।
আমি খোপায় জড়িয়ে রাখবো তোর শিউলী ফুল
তুই কি আমার শরৎ হবি?
আলতো সুরে বাঁধবো গান
শুনবি বসে বাহু কোলে।
ভিজবো দুজন শরৎ বৃষ্টিতে।
তুই আমার শরৎ হবি?
আঁধারে আলো
আকাশে এক রোদেলা দুপুর
হঠাৎ যেন বৃষ্টির আলিঙ্গন।
তোমার আমার প্রেম যেন
চাইছে আঁধারে আলো।
তুমি হাতটা ধরো
আমি রবো তোমার মত
শ্রাবন মেঘে ছুঁয়েছে আঁকাশ
রং এর তুলিতে মিলেছে ক্যানভাস
তোমার আমার প্রেম যেন
চাইছে আঁধারে আলো।
সাগর পারে ভেঁজাবো পা
তোমার হাতটি ধরে।।
জোছনা সাক্ষী হবে
তাঁরা জাগা রাতে।
তোমার আমার প্রেম যেন
চাইছে আঁধারে আলো।
শূন্য আমি তুমি ছাড়া
চোখ বুজলে তোমার ছায়া
তোমার আমার প্রেম যেন
চাইছে আঁধারে আলো
আশা
চারদেয়ালে কাব্য আঁকি
মনের যত বাঁধা বুণি
তরুণদয় দিনের প্রায়
হাজার খানা মালা গাঁথি
হরেকরকম বাদ্যে বাজি
আমায় করো না কেউ আজ নিকৃতি।
ভুমিষ্ট যত শত আবর্তন
কোননা কোন অগচরে
চলে যাবে নিভৃতে।
উদয় হবে নতুন সূর্য
আসিবে ফিরে নতুন দিগন্ত
সেদিন মোরে ঠাঁই দিও
তোমার হৃদয়ের মাঝে।
আরেকবার ছুঁয়ে দাও
তোমার দেওয়া প্রশ্নগুলো জমিয়ে রেখেছি
হয়তো রোদেলা প্রহরের মুর্ছনায় আমি বললাম
চলো আরেকবার অচেনা মানুষ হয়ে পরি।
তুমি হয়তো অবাক চাহনিতে মনে মনে হেসে উঠবে
আমি বললাম চলো দুজনের শুরুটা প্রথম হতে করি
তুমি এবার হতচকিত হয়ে বললে
তুমি ঠিক আছো?
আমি আমার দর্শন শক্তির তীক্ষ্নতায়
তোমায় গ্রেপ্তার করলাম বুক পাঁজরে।
তুমি এবার বিস্ময়কর ঠাহর করে দেখলে
আমি খানিক ঠান্ডা লঘু স্বরে
দ্বীপ্রহের আলিঙ্গন কামনা করলাম।
এবার তোমায়ে একযুগ সংসারে তাক লাগিয়ে দিয়েছি
তুমি ভাবছো সৃষ্টিকর্তা আজ
আমার নিউরোনের ছেড়া অংশে কিছু সংযোজন করেছেন।
পার্থিব জীবনের সুখ সমৃদ্ধি কখনো চাইনি তোমার কাছে
চাইবার কালে আঁচরের বোয়োমে বন্দি করা সময় চেয়ছি।
পার্থিব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভালোবাসা চেয়েছি।
টুকরো টুকরো বেঁধে রাখা স্বপ্ন চেয়েছি।
দিন শেষে দুজনে বসে এক কাপ কফি কিংবা চায়ের মগে নৈসর্গিক সুখ খুঁজে বেরাবো।
এইটুকু দু’হাত তুলে প্রার্থনা যোপেছি।
চাইবার কালে তোমার কাছে সুগন্ধি যুক্ত একটা গোলাপ চেয়েছি।
সারাদিনের শেষে অফিস থেকে ফিরে দরজাটা খুলতেই এক পলকে চোখের ক্লান্তি টের পেয়ে যাওয়া অনুভুতির দৃষ্টি চেয়েছি।
আমার না বলা কথাগুলো টের পেয়ে যাওয়া মানুষটার বাম পাশটাতে কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে গুনগুনিয়ে রাত পার করার অভিলাষী আমি।
শুধু একটুকরো ভালোবাসা চেয়েছি।
একটি কুসুমিত পুস্পের তরে।
হৃদয় বাঁকে রোদন প্রসূন করি দিনরাত্রি
এই বুঝি কুসুমিত পাখা মেলে,
তোর হৃদয়ে কি এখনো যৌগিক আকারে আবদ্ধতা নিয়ে
বর্তুলের আজ অনাদ্র্র ছাড়া কিছুই নেই।
কেউ বৃষ্টি এনে দাও যেন
অনাদ্র আঁখি দুটি আজ বৃষ্টিস্নাত হোক
হৃদয়ে আজ হুংকার বয়ে যায়।
তোর এক টুকরো ছোঁয়ায় বদলে দিব
বিষাদের সুরের মূর্ছনা॥
তোর ফেলে রাখা শ্রান্ত হৃদয়ের প্রতিচ্ছায়া
বারে বারে আমায় অনুরক্তিতে পোড়ায়।
দুঃখ গুলোকে লুকিয়ে রাখি
চাঁদের আলোয় ও যেন টের না পায়
হৃদয়ের রোদন একাকি নির্জনতায়
হৃদয় বাঁকে রোদন প্রসূন করি দিনরাত্রি
একটি কুসুমিত পুস্পের তরে।
কপটতা
উষালগ্নে রোজ দেখি সৃষ্টির অভিযোগে
উদারতার একি মাখামাখি
যেন এ জীবের মহিমায়
আমার জীবন গাড়ি
কেন্দ্রীয় বিন্দু একটাই।
মুঢ় কি আর বোধের অপেক্ষায়
বিন্দু একটাই হোতে পারে
তাই তোমার কপটতা একটি নয়
দিনের লঘু যতক্ষণ শিহরনে
রাতের তিমির বদলে চলে
ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন আশায়
রতবদলের এই তরীতে
আমার সন্তরণ।
বিচক্ষণতার আড়ালে প্রায়
নিজের নামের একটি কবিতা
চলছে পোষ্টমর্টেম।।
হে কপট হৃদয়যন্ত্র
তোমার উগ্রপন্থী আচড়ণ
আজ আমার করে জলতরঙ্গ।
হারিয়ে_যাওয়া_প্রেম
ফেরানো মন কি ফেরানো যায়?
সুরগুলো সব এলোমেল আজ
একগুচ্ছ গোলাপও আজ মুর্ঝে পরে আছে, নন্দিনি
তুমি কি পেরেছো আমায় ভুলতে?
জানি তোমায় দেখার অধিকার নেই আমার
নন্দিনি, তুমি কি আগের চেয়ে ভালো আছো?
সুখ পাখি আজ শুধু তোমার ঘরে নিরবে।
আমার নিদ্রা বিহীন রজনী কাটে
শুধু ঐ দুর নীলিমায় দেখে,
নন্দিনি, তুমি কি পেরেছো
আমার ভালোবাসার অনুভূতিকে
চিলেকোঠায় আটকে রাখতে?
বরাবরের মতো আমি হার মেনেছি তোমার কাছে
তুমি রেখে চলে গেলে আমার সকল অনুভূতি, আমার আকাশে
নন্দিনি, মনে আছে আমাদের ভালোবাসায় প্রজাপতিও যেন সাক্ষী রেখেছিল
তুমি রোজ শিশু ন্যায় জিদ করতে
আজ এখানে যাবো কাল ওখানে যাবো
আমি যে তোমার প্রেমে মানবমূর্তি তখন
তোমার হতে প্রতিটি শব্দ যেন আমায় অমৃত এনে দিত
সেটা ছিল আমার পরম সুখের সময়।
ওহ! নন্দিনি, কেন এলে আবার এই অবিচলে।
খাঁচায় বন্ধি আর্তনাদ গুলো একে একে উড়ে উড়ে
বিস্তার করছে আমার মস্তিস্কের অগ্রভাগে।
আমি নিয়তির সাথে লুকুচুরি করি বারংবার
তুমি হৃদয় কোণে বসিয়ে নিয়েছো অন্য এক পোড়া বাঁশী।
যে সুরে এখন বেঁধেছ তোমার সংসার
সেখানে আমার তানপুরাটার কোনো ঠাঁই নেই।
চেনা সবকিছু একই সুতোয় আছে
শুধু আজ তুমি আমি যে যার মত বাঁধন ছাড়া গাঁটে।।
২ Comments
অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা অশেষ।
very nice response; Congratulations.