ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা ও সাহিত্য চর্চা
ফরিদা বেগম/’15/9/2021
প্রাক ইসলামী যুগে আরবে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা ও সাংষ্কৃতি না থাকলেও সাংস্কৃতি, জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না। এদের ভাষা এত উন্নত ছিল যে আধুনিক ইউরোপের ,উন্নত ভাষাগুলির সাথে তুলনা করা যায়। লিখন পদ্ধতি উন্নত না থাকায় তারা রচনায় বিষয়বস্তু মুখস্থ করে রাখত। তাদের স্মরণ শক্তি ছিল প্রখর, তারা মুখে মুখে কবিতা পাঠ করে শোনাতো। কবিতার মাধ্যমে তাদের সাহিত্য প্রতিভা প্রকাশ পেত। লোক মুখের উপর নির্ভর করে গাঁথা, জনশ্রুতি,পরবর্তীকালে আরবের ইতিহাস লেখা হয়েছে। তাদের কাব্যের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল বেদুইন জীবন (উট, ঘোড়া, মরুদ্দ্যান) গোত্র কলহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সর্বোপরি বংশ বৃত্তান্ত (বংশের স্তুতি) বংশগৌরব, বীরত্বপূর্ণ কাহিনী, যুদ্ধ-বিগ্রহ ,যুদ্ধের বিবরণ ,আতিথিয়তা, উটের গুণাবলী, নারী, যৌনতা ,প্রেম ,আদিম রস সম্পর্কিত। প্রাক ইসলামী যুগে আরবদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের বাগ্নিতা ,জিহ্বার অফুরন্ত বাচন শক্তির অধিকারী। কবিদের মধ্যে ইমরুল কায়েস ছিলেন প্রধান। তাকে আরবের শেক্সপিয়ার বলা হত। এছাড়া উম্মে কুলসুম, যাহবর, সালমা, রাবিয়া, লাবিদ ,তারাফা, শাদ্দাদ, হিলজা, জুহাইর, আবদ,
আনতারা, হরিশ ছিল বিশিষ্ট কবি, তাদের কবিতা পাঠ সাহিত্য বিষয়ে সম্পর্কে আলোচনা ছিল স্বতস্ফূর্ত। নিয়মিত সাহিত্যচর্চার আসরে আয়োজন করা হতো। সাহিত্যচর্চার উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাকিব গোত্রের ইবনে সালামের নাম উল্লেখ যোগ্য। প্রতি সপ্তাহে তিনি একটি সাহিত্যের আসরের আয়োজন করতেন। পৃথিবীতে সম্ভবত অন্য কোন জাতি আরবদের মত সাহিত্যচর্চায় এত বেশি স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ প্রকাশ করেনি। কবিরা ছিল গোত্রের মুখপাত্র ও সংবাদমাধ্যম। তাদের সাহিত্য আসর, কবিতাপাঠ, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা ও সমালোচনা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আরবদের সাংস্কৃতিক জীবনের উজাক মেলা বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। প্রতিবছর মক্কায় উজাক নামক স্থানে এই মেলা বসতো। এখানে যে কাব্য প্রতিযোগিতা হত, কবিরা সেখানে তাদের কবিতা নিয়ে হাজির হতেন, এছাড়া এ মেলায় গান বাজনা নৃত্য, গীত, জুয়া ও মদের আসর, ভাগ্য পরীক্ষার বিভিন্ন খেলা, মেলাকে জমজমাট করে রাখত, মেলায় সাহিত্য মঞ্চ থেকে লোকাচার প্রবাদ-প্রবচনের ফোয়ারা ছুটত। তবে কাব্য প্রতিযোগিতায় কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট মান অতিক্রম করে মান উত্তীর্ণ হলে, সেই কবিতা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে।
১ Comment
সেই কবিতা স্বর্ণাক্ষরে লিখে কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হতো /এই কবিতাগুলি কে ঝুলন্ত সপ্তক নামে অবহিত করা হয়/ আরবের দীর্ঘ সময় মাত্র সাতটি কবিতা উল্লেখযোগ্য মান অর্জন করায় এগুলিকে কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়/ তাদের এই সকল কবিতা সুদূর অতীত কালের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান/
ধন্যবাদ প্রতিবিম্ব প্রকাশ ডটকম-এর সভাপতি লেখক আবুল খায়ের ভাই কে আমার লেখা প্রকাশের জন্য