প্রিয় প্রজন্ম।
(শিরিন হোসেন)
বৃথা যায়নি আত্মত্যাগ,
বিজয় এসেছে মাথা উঁচু করে। নতুন প্রজন্ম জানুক সেই সত্যিকারের গল্প।
প্রিয় প্রজন্ম,
আজকের প্রজন্ম ‘৭১ কে প্রাচীন ভাবো, যুদ্ধ তোমাদের কাছে রুপকথার গল্প। বিজয়কে উপলব্ধি করতে দ্বন্দ্বে পড়ে যাও। তোমাদের ভুল নয়, হয়তো আমরাই পারিনি তুলে ধরতে। প্রয়াস ছিল অপ্রতুল ।
তবে হ্যা, প্রতিবছর বিশেষ দিনগুলি পালনের আয়োজন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের চেতনা তোমাদের মাঝে জাগ্রত করে বৈকি!
‘৭১ এর সত্যি একটা গল্প শোনো। আমি একাত্তর দেখেছি। যদিও তখন আমি ছোট। এতো ছোট বয়সের স্মৃতি তখনই মনে থাকে যখন বিশেষ কোনো ঘটনা ছোট্ট ব্রেইনে দাগ কেটে যায়। মস্তিষ্কের নিউরণে নাড়া দিয়ে যায়। সেই সময়ে এরকমই একটি ঘটনার আমি প্রত্যক্ষদর্শী । আজ মনে পড়ছে ভীষণভাবে।
মুক্তিযুদ্ধের গল্প যেমন আমরা শুনেছি তেমনি রাজাকার দেশদ্রোহীদের গল্পও আমাদের অজানা নয়। এই জানা অজানার মাঝেও অনেক কিছুই আমরা জানিনা। রাজাকার দেশদ্রোহী বলতেই চোখে ভেসে ওঠে পুরুষ চরিত্র। কিন্তু কিছু নারী চরিত্রও ছিল যারা দেশদ্রোহী ছিল।
তখন ডিসেম্বর মাস। যুদ্ধ চলছে টানা নয় মাস। ঘরে ঘরে মুক্তুযোদ্ধা, গ্রামে গ্রামে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার, শহরে শহরে বৈপ্লবিক উচ্ছ্বাস। অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে, অনেক মায়ের সন্তান ফিরে এসেছে। কতো মহিলা বিধবা হলো ইয়ত্তা নেই। কতো সন্তান বাবা-হারা হলো।
বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসেও ১৪ ডিসেম্বর ধূর্ত পাকবাহিনী ভেঙে দিল দেশের মাথা । শহীদ হলেন অনেক বুদ্ধিজীবী।
এই সময়টাতে রুবি মেয়েটা নিরীহ চেহারা নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতো। পাকবাহিনী কে জানাতো কোন কোন বাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। কারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী। সূত্রমতে পাকবাহিনী হানা দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করতো তাদের। নিশ্চিত বিজয় সম্মুখে দেখেও বিজয়ীবেশী অনেকেই শেষ রক্ষা পায়নি, এই মেয়েটার শঠতায়। শুধুমাত্র রুবির মাধ্যমেই জলাঞ্জলি দিয়েছে বহু প্রাণ।
একসময় তার আসল চেহারা প্রকাশিত হলে জনগণ ক্রুব্ধ হয়ে মেয়েটিকে হত্যা করে। সেই সময়টা মনে পড়ে যখন রুবি প্রাণভিক্ষা চেয়ে বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়েছে অথচ আশ্রয় পায়নি। সে তার কৃতকর্মের ফল পেয়েছে। মৃত্যুর পরও মানুষ ওকে লাথি দিয়েই যাচ্ছিলো। কতোটা ক্ষোভ আর ঘৃণায় মানুষ তা পারে? পাপের পাল্লা বেশী ভারী হয়ে গেলে উপরওয়ালার বিচার অনিবার্য হয়ে যায়। রাস্তায় ফেলে মেয়েটিকে যখন মারা হয়েছিল , দিনটি ছিল
১৫ ই ডিসেম্বর ।
আমি হতবিহ্বল ছিলাম, তাই আজও ভুলতে পারিনি।
‘৭১ দিয়েছে মুক্তি, কেড়ে নিয়েছে প্রাণ তবু বৃথা যায়নি আপামর ত্যাগ।
নতুন দের বুকভরা স্বাধীন বাতাসে জন্মলাভের সুযোগ করে দিতে যেসকল মানুষ শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের জানাই প্রাণের মমত্ব, জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
শিরিন হোসেন
১৫/১২/২০২১
১ Comment
very good job; Congratulations.