প্রিয় কবিতা
ছোবল। অসীম সাহা।
গোখরোর ফণা ছোবল মেরেছে
ছড়িয়ে পড়ছে বিষ
দুই কোটি বুক জ্বলছে, পুড়ছে,
লু-হাওয়ার কিশমিশ
মাথার ভেতরে পাথরের মতো
বিঁধছে অহর্নিশ
গোখরোর ফণা ছোবল মেরেছে
ছড়িয়ে পড়ছে বিষ
ষোলো বসন্ত একটি বাগানে
ফুটেছিলো নানা ফুল
শিকড় উপড়ে ভেঙেচুরে তারে
বাধালো হুলুস্থুল
দাঁত ও নখের হিংস্র আচড়ে
বিক্ষত নার্গিস
আগুনের তাপে মাথার ভেতরে
উঠছে প্রবল শীষ
গোখরোর ফণা ছোবল মেরেছে
ছড়িয়ে পড়ছে বিষ।
দুই কোটি বুক পায় না শাস্তি
কৃত্রিম কার্নিশে
বুকের ভেতর জ্বলছে-পুড়ছে
গোখরোর নীল বিষে।
বদ্ধ ঘরের কার্নিশ হ’তে
বাগানের এলোচুলে
হৃদয় চাইছে হৃদয়ের মতো
শান্তির দ্বার খুলে
দাঁড়াতে আবার উদ্ধৃত হাতে
দুরন্ত একিলিস
গোখরোর ফণা ছোবল মেরেছে
ছড়িয়ে পড়েছে বিষ
গোখরোর ফণা ছোবল মেরেছে
ছড়িয় পড়েছে বিষ
দুই কোটি বুক জ্বলছে-পুড়ছে
কখনো কি ভেবেছিস?
লেজেই যখন আগুন লেগেছে
তখন কিসের ভয়
স্বর্ণলংকা পুড়িয়ে হলেও
ছিনিয়ে আনতে জয়
দুই কোটি বুক আট কোটি বুকে
প্রয়োজনে বেঁধে নিস;
গোখরোর ফণা ছোবল মেরেছে
ছড়িয়ে পড়েছে বিষ…
কবিতার জন্মস্মৃতি
হলে তার ‘হয়ে ওঠা’ বৃথা। তাই কবিতার পাটভূমি সম্পর্কে আমি অগ্রহী নই। তবু বলতে হবে, তাই বসা। রেডিও-র কয়েকটি চেক তামাদি হয়ে যাওয়ায় কিঞ্চিৎ তিরস্কৃত হই। কবিতাটি অব্যবহিত পরেই লেখা। কবিতাটিতে বোধকরি তাদের কথাই বলতে চেয়েছি যারা ‘যারে যায় না পাওয়া তাই হাওয়া’ শিল্প বা বিপ্লব, অর্থাৎ যে কোন ফাঁকে ঘরে বাইরে আপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে, সৃষ্টিকর্ম ঝরাপাতার মতো তামাদি চেকে ভরে উঠতে পারে তার জাগতিক ভাঁড়ার। সকল শিল্পী এবং স্রষ্টার ভেতরে এই মানুষটি আছে। এর জন্য কিছুটা মুক্তি দরকার, ফাঁক দরকার, দরকার একটি মুক্ত সম্পর্ক, সমাজের সাথে এক ধরনের উদার বিবাহ। এই বিবাহ শিল্পীর সাথে পৃথিবীর, বিপ্লবীর সাথে সমাজের। একটি বাসযোগ্য পৃথিবীর আশা করে আমি এই ঘটকালির কথা ভেবেছি।
‘৯০-এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে মতামত:
১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ ও বাঙালির অগ্রযাত্রায় একটি গৌরবময় পথ-ফলক। এই আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজের সাহসী ভূমিকা এ কথাই প্রমাণ করে যে, মানুষের শুভাশুভ বোধ কোন ক্রমেই বিনষ্ট হবার নয়। আমাদের তরুণেরা যে সাহসী ও দ্বিধাহীন আন্দোলন গড়ে তুলেছেন তা আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে জমে ওঠা হতাশা ও অবক্ষয় কাটিয়ে দিয়েছে। এবারের এই আন্দোলনে ছাত্র, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ও সকল স্তরের জনমানুষের এই সক্রিয় অংশগ্রহণ এ কথাই প্রমাণ করে যে মানুষের প্রকৃত অধিকার ও দাবীকে কোনো ক্রমেই অবদমিত করা সম্ভব নয়। এই আন্দোলন আমাদের হীনমন্যতাবোধ দূর করতেও সহায়ক হবে। এই বাঙালি বায়ান্নতে ভাষা আন্দোলন করেছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্ত করেছে। পনেরো বছর শ্বাসরুদ্ধকর ভূখণ্ডে বেড়ে উঠবার পর এ দেশের তরুণেরাই স্বৈরশাসন উৎখাত করবার জন্য প্রাণ দিতে দ্বিধা করেনি। এ জাতিকে যারা ভীরু বলে, অলস বলে তারা নিজেদের শক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নয়। এ দেশের মানুষই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সফল করে তুলবে। হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু সফল হবে তাতে সন্দেহ নেই। এবং তরুণ প্রজন্মই এই অভিযাত্রার পথিকৃৎ হবে।