ফরিদ আহমেদ দুলাল সম্পাদিত প্রিয় কবিতা ও কবিতার জন্মস্মৃতি কাব্যগ্রন্থের আলোচনা: মতিন বৈরাগী।
প্রিয় কবিতা, আমার বিপন্ন অস্তিত্ব।
আর আমি বসে থাকি
যখন কোনো সন্ধ্যা তার শেষ আলোটুকু ছড়িয়ে দিয়ে আশপাশে
বৃক্ষদের কচিপাতায় তোলে শিহরণ
গুটিয়ে আনে বর্ণালি রঙের লীলা
আমি বসে থাকি
একটা সমাপ্তির দিকে আমার দু’চোখ স্থির হয়ে থাকে—
আমি জানি ওরা আর ফিরে আসবে না শরতের কাশফুলের দোলায়
ওরা ফিরে আসবে না সেই দিনগুলোর কোলাহল মুখরতায়
ওরা হারিয়ে গেলো
আর সমুদ্রের গাঙচিলগুলো ডানা মেলে চিৎকারে চিৎকারে ঝরায় পালক
আমি বসে থাকি একা
আমার চারদিকে তৃণগুল্ম দীর্ঘশ্বাস ফেলে হরপ্পার পোড়া ইটের মতো
আর একটা রাত্রি শিঙ উঁচিয়ে হেঁচকি তোলে
আমি জানি যারা চলে গেছে তারা রয়ে গেছে ওখানেই
যে রকম তখনও ছিলো
কারণ তারা ভালোবেসেছিলো দেশ আর স্বাধীনতা
আর তারা চিনতেই পারছে না এ কেমন দেশ যা তারা চেয়েছিলো!
আমি বসে থাকি একা
আমার বিপন্ন অস্তিত্ব ছায়া হয়ে হাঁটে।
কবিতার জন্মস্মৃতি
প্রিয় একটি কবিতা এবং কবিতাটি লিখবার প্রেরণা প্রসঙ্গে দু’কথা বলতে হবে। আমার মনে পড়ছে সম্রাট শাহজাহান-এর করুণতম অবস্থার কথা। যা ছিলো অপ্রত্যাশিত এবং প্রেরণাবিহীন। প্রিয়পুত্র দারাশুকোর খণ্ডিত মস্তক দেখে ক্ষমতাচ্যুত সম্রাট কী ভেবেছিলেন তখন, যখন তাঁর আরেকপুত্রই এই কর্তিত মস্তক পিতার কাছে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিল? নিশ্চয়ই রাজ্যহারা সম্রাট তাঁর সেই পুত্রকেও অভিশাপ দিতে পারেননি, কারণ সে-ও যে পুত্র। আর ঘটনার সূত্রপাতেরও তো একটা কারণ ছিল, যা ক্ষমতা দখলের এবং সাম্রাজ্য দখলের। প্রকৃত কবিরা মূলত সমাজের সংবেদনশীল মানুষ, আর তাদের অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হবার কারণে দৃশ্যমান বস্তু, ঘটনা এবং তার অবস্থান ইত্যাদি তার মনোজগতে যে বার্তা দেয়, যে সংবেদনার সৃষ্টি করে, কবি তা থেকেই প্রকাশ্য হয়ে পড়েন ভাবে-বিষয়ে-রূপে এবং তা হুবহু তাই নয় যা ছিল তার প্রেরণা। কল্পনা কবিকে শিল্পীকে নতুন ভাবে নির্মাণ করে এবং ভাষায় সেই ভাষ্যগুলো নতুন অর্থদ্যোতনা নিয়ে অন্যের সংগে সংযোগ স্থাপন করে। ফলে ভাষ্যগুলোতে তা বিস্তার নেয় সীমিত অথবা বৃহৎ পরিসরে আর তাতে প্রেরণার বিষয়, বস্তু, ঘটনা তা সীমিত হয়ে যেতেও পারে কিংবা তার সামান্য আলোকস্পর্শ থেকেও যেতে পারে সৃষ্টিতে। ফলে বস্তুসত্য এবং কাব্যসত্যের একটা বিস্তর দূরত্ব তৈরি হয়। একারণেই কবিতা মূল নয়, নকলের নকল এবং প্রেরণা দৈবও নয় বস্তুলগ্ন।
কল্পনা কেবল শিল্পীর কবির মৌলিক নয় বরং জগৎ বদলানোর সকল জীবন কর্মের অনুষঙ্গ। একজন বিজ্ঞানী একজন সফল ব্যবসায়ী, একজন কৃষক, কিংবা একজন রাজনীতিবিদ, অথবা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর এই কল্পনা শক্তি না থাকলে সে যেমন প্রেরণাকে সফলতা দিতে পারে না জীবন দিতেও লাফিয়ে পড়তে পারে না। তেমনি জীবন জয়েও কোনো অবদান রাখতে পারে না।
আমার এই কবিতাটি খুব প্রিয় কিনা তা আমি বলতে পারি না। যেমন সম্রাট অভিশাপ দিতে পারলেন না তার প্রিয়পুত্র হত্যাকারীকেও। আসলে সেওতো পুত্র। তেমনি সব কবিতা আমার খুবপ্রিয় নাও হতে পারে, কিন্তু সকল লেখা কবিতায়ই যে কিছু না কিছু প্রিয়তা আছে, সে সময়ের, সে প্রেরণার, অনুভবের তারতম্যসহ তাকে অস্বীকারই বা করি কি ভাবে। তবুও লিখতে হবে এবং কবিতাও দিতে হবে, তাই এই বাছাই।
১ Comment
THIS IS A GREAT WORK. EXTRAORDINARY EFFORTS BEHIND THIS MASTER PIECE.
BEST WISHES.