প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা
দিল আরা বেগম
অভ্যাস গঠন, শৃংখলা শিখন ,সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির, প্রাথমিক বিকাশ, নান্দনিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, কৌতুহলের বিকাশ, শারীরিক বিকাশ সহ শিশু কে আনন্দময় পরিবেশে লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহী করা, এ সকল বিষয়কে সমন্বিত করেই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
জন্মের পর থেকে শিশু পরিবারের মধ্যে প্রথম শিক্ষা পায়। পরিবার থেকেই শিশু তার আচরণ, চালচলন, কথা বার্তা শেখে। কিন্তু বর্তমানে সমাজ ও বিশ্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী শিশুকে শিক্ষালয় কেন্দ্রিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্ৰহনে অভ্যস্থ করা হয়। এ জন্য সকল শিখন শিক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে, আনন্দময় পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে, যে ধরনের আয়োজন করে শিক্ষা দেওয়া হয়, তাকে বলা হয় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। ৩ – ৫/৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু একটি কাঠামোর মধ্যে থেকে শিক্ষা লাভ করে। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার আগে ১/২বছর মেয়াদী যে শিক্ষা স্তরের আয়োজন করা হয়ে থাকে, সেটিকেই প্রিস্কুল বা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা বলা হয়। আধুনিক যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে শিক্ষার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ৩-৫/৬ বয়সী শিশুদের শিশু বান্ধব পরিবেশে বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের শারীরিক, মানসিক, ভাষাবৃত্তীয়, বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগিক, দৃষ্টি ভঙ্গি ও আচরণগত তথা সার্বিক বিকাশ ও সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সারা জীবনের শিখনের ভিত্তি রচনা করা এবং পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক ভাবে শক্তিশালী প্রস্ত্তুতি সহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনন্দ পূর্ণ ও স্বতস্ফূর্ত অভিষেক ঘটানো।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সাহায্যে শৈশবকাল থেকেই শিশুর মধ্যে কতকগুলি সু-অভ্যাস গঠন করার মাধ্যমে পরবর্তীকালে তার চরিত্র গঠনে সহায়তা করা।
শেখার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সহায়তা করা
অঙ্গ সঞ্চালন ও অংশগ্রহণ, প্রতিযোগিতা মূলক কাজের মাধ্যমে শিশুর দৈহিক বিকাশ ঘটানো।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি প্রভৃতি গুণাবলী ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানো
প্রকৃতির রূপ, রস উপলব্ধির মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে সৌন্দর্য বোধের বিকাশ ঘটে
শৈশবে শিশুর অসংযত ও বিশৃঙ্খল আচরণকে সংযত ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে ,শৃঙ্খলা বোধের বিকাশ ঘটানো তোলা
আত্মপ্রত্যয় বা আত্মবিশ্বাস গঠন : এই শিক্ষার অপর গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিশুর আত্মসক্রিয়তা ও আত্মপ্রচেষ্টার , সক্রিয় অংশগ্রহণ উপর গুরুত্ব দিয়ে তাদের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা
রেগে না মেয়ে আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে সকলের সাথে সঠিক সময়ে সঠিক ও সুন্দর ব্যবহারের অভ্যস্থ করা
শিশুরা নিজস্ব চিন্তাধারা বা অনুভূতি যাতে যথাযথ প্রকাশ করতে পারে, তাই ভাষার প্রয়োগ ও প্রকাশ ,যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশের উপর গুরুত্ব দিয়ে ভাষা বৃত্তীয় দক্ষতা চর্চা করা
(৯) শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য নানা ধরনের ছবি আঁকা, গান, গল্প বলা, কবিতা বলা অভিনয় ইত্যাদি বিষয়ের চর্চা করা
শিশু কে পারিবারিক, সামাজিক ওপ্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করা ।
প্রারম্ভিক গানিতিক ধারণা যৌক্তিক চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন করা ।
নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে সচেতন করা
শিশু কে সৃজনশীল ও বিজ্ঞান মনস্ক করে গড়ে তোলা
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কে আনন্দ ময় , আকর্ষণীয় , অংশগ্রহণ মূলক করার জন্য বিভিন্ন উপকরণ ও পদ্ধতির ব্যবহার ও চর্চা করা হয় । এ শিখন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার এর জন্য শ্রেণিকক্ষে মোট চারটি কর্ণার নির্দিষ্ট করা হয় নির্দিষ্ট কাজের জন্য ।
কল্পনার কর্ণার,
ব্লক ও নাড়াচাড়ার কর্ণার,
বই ও আঁকার কর্ণার,
বালি ও পানির কর্ণার ৷
এসব কর্ণার বাবহার করে শিশু শারীর বৃত্তীয় শিক্ষা,শরীর চর্চা, নাচ, গানের অনুশীলন মাধ্যমে শিশু শারীরিক সক্ষমতা অর্জন হয়। কায়িক শ্রমের করানো মাধ্যমে শিশুকে পরিশ্রমী হতে শেখায় সংবেদনশীল কার্যাবলীর মাধ্যমে অক্ষর চেনা ,লিখতে শেখা, বলতে পারা কম বেশি ধারনা, দূরত্ব ও সময় সম্পর্কে জানা মুখস্থ বলা, এ গুলো করতে পারে। হস্ত শিল্প ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে শিশুর ভিতরের চাহিদা সৌন্দর্যবোধের বিকাশ হয় ।বই ও আঁকার কর্ণারে শিখন মূলক কার্যাবলী মাধ্যমে শিশুদের নানা ধরনের আকৃতি চেনানোর, রং চেনানো, আঁকা শেখানো, কাগজ কেটে ছবি বানানো, পিচবোর্ডের জিনিস তৈরি ইত্যাদি শেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।
আত্মনির্ভরশীল কার্যাবলীর মাধ্যমে শিশুরা যাতে তাদের নিজেদের কাজ নিজেরাই করে নিতে পারে, তার জন্য তাদেরকে স্বনির্ভর করে তোলা অর্থাৎ শিশুরা বাড়িতে ও বিদ্যালয়ে কীভাবে খাবে, কীভাবে শৌচাগার ব্যবহার করবে, কীভাবে মুখ-হাত-পা-ধুয়ে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখবে ইত্যাদি কাজের কথা এ শিক্ষণ শিখন প্রক্রিয়ায় থাকে।
এ ছাড়া সৌন্দর্যবোধের বিকাশের জন্য বিদ্যালয় গৃহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, খেলার মাঠ, বিদ্যালয়ের চারপাশে ফুলের গাছ ইত্যাদি যেন রাখা হয়। যাতে চারপাশের পরিবেশ— সৌন্দর্য দেখে শিশুদের মনে সৌন্দর্য বোধের বিকাশ ঘটে।
সর্বোপরি চারটি কর্নারে যে সহ পাঠ উপকরণ থাকে সেগুলো দিয়েই শিশুরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করে স্বতস্ফূর্ত ভাবে পাঠে গ্ৰহন করে। এছাড়াও শিশুর শারীরিক পুষ্টির পাশাপাশি শারীরিক গঠন ঠিক মতো হচ্ছে কি না সেদিকে লক্ষ রাখে এ শিক্ষা স্তরে।
সবশেষে একথা বলা যায় যে, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায় ।
১ Comment
very good articles; congratulations