প্রাক্তন
ড. নজরুল ইসলাম খান
আমারও একজন প্রাক্তন ছিল!
প্রাক্তন-এর সাথে সবার কি যোগাযোগ থাকে? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে-নাকি যোগাযোগ হয় হৃদয়ে হদয়ে!
তাকে কি ভুলে থাকা যায়? নাকি সে থাকে পরানে পরানে!
তাকে কি চিঠি লেখা যায়? নাকি তাকে নিয়ে কাব্য লেখা হয়!
প্রাক্তন কে নিয়ে কেউ আলোচনা করে কেউ বা করে গোপন
যাকে ভালোবেসে কবিতা লেখা যায় উপন্যাস রচনা হয় সেই-তো আপন।
আমারও একজন প্রাক্তন ছিল!
যে থাকে হাজার মাইল দূরে অথচ প্রতিক্ষণ আছে মনের আনাচে-কানাচে
কোনো যোগাযোগ নেই তবুও কেন জানি তার সবকিছু জানা থাকে
সারাদিন কখন কি করে তাও বলে দেয়া যায়-
ঈদ-পার্বনে কি ড্রেস পরে তাও যেন মনটা দেখতে পায়।
অন্তর চোখে দেখা না হলেও স্বপ্নযোগে দেখা দেয়-
সময় পেলেই প্রাক্তন ডাকে আয় বন্ধু আবার আয়!
আমারও একজন প্রাক্তন ছিল!
যখন ছিল তখন বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে কতো ঝগড়া হতো
এখন কোনো যোগাযোগ নেই অথচ বিশ্বাস আছে অবিরত।
একমুহূর্ত কথা না হলে মনটা ছটফট করত
এখন প্রয়োজনটা আগের মত নাই আর হয়তো।
কখনও ভাবিনি সে আমার প্রাক্তন হবে। কত স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে। জীবনের নানা রঙের দিনগুলো কেটেছে তার সাথে। যৌবনের বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মর্মকথা তাকেই শুধিয়েছি আমি।
আমারও একজন প্রাক্তন ছিল!
এখনও সে করে আমায় আগমন
হৃদয়টা তখন বেঁজে ওঠে ঝন ঝনা ঝন।
সে ছিল আমার মনেরই মতন
করিত আমায় অনেক যতন
আমারও ছিল একজন প্রাক্তন।
তার কথা নাহি করি গোপন
সে ছিল আমার অতি আপন
যে ছিল আমার প্রাক্তন।
বেহিসাবি করি তার স্মৃতি রোমন্থন
স্বপ্নযোগে করি তারে স্পর্শ-আলিঙ্গন
সে ছিল আমার প্রাক্তন।
এখন তো মনে হয় তুমি বড়োই কৃপন
কেন হয় না ফোনে সময়ের আলাপন
ওহে আমার প্রাক্তন!
সময়ে সময়ে কত করেছি জ্বালাতন
এখন ভাবি এসব ছিল শুধুই সনাতন
কি করে বলি হে আমার প্রাক্তন!
আমি যখন গোছলে যাই আমি দেখি আমার প্রাক্তন সাবান টাওয়েল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ালের পাশে-
পড়ার টেবিলে চায়ের পেয়ালা নিয়ে আজও আমায় একলা নীরবে ডাকে।
একদিন কবিতা না লিখলে কবিতা লিখতে বলে-
ঈদের সময় মনে হয় সাথে থেকেই মার্কেটে সে হাঁটে!
আজও মনে হয় গলার টাই-টা আমি বাঁধি না আমার প্রাক্তন বেঁধে দেয়-
কোনো কিছু অপরাধ মনে হলে আজও ঝারি মারে নাহি পায় ভয়।
এখনো ভাবি ফোন না দিলে বড্ড অভিমান করবে-
বাজারের লিস্টটা নিয়ে আমার পিছুপিছু ঘুরবে।
নতুন কাপড় পরার ত্রুটিগুলো আজও কেন ধরিয়ে দেয়?
পান্ডুলিপির ভুলগুলো এখনও শুধরায় যখন যেভাবে সময় পায়!
আজও দেখি প্রাক্তন অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে আমার দরজায়
হাজারো উপদেশ দিয়ে যায় মোরে অসীমের কৃপায়।
রমজানের সাহরির সময়ে যেন প্রাক্তন ঘুম থেকে তুলে দেয়
অসুস্থ হলে বিছানার পাশে থেকে আজও মাথাটা ছুঁয়ে দিয়ে যায়।
অসুখে-বিসুখে আনন্দ-বেদনায় সদা পাশে ছিল
কখন যেন সুখ পাখিটাকে চিরতরে উড়িয়ে নিয়ে গেল!
একটা সময় সবাই আমরা প্রাক্তন-কেই খুঁজি
সময় থাকতে আমরা যেন একটু হলেও বুঝি।
সবকিছু ঠিকঠাক তারপরও সব এলোমেলো
অগোচরে নয় প্রাণখুলে বলি-
আমারও একজন প্রাক্তন ছিল!
১ Comment
অসাধারণ!শুধুই মুগ্ধতা।
ভালো লাগলো।
প্রাক্তন কবিতাটি।