সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
আজ আমি প্রমিত বাংলা বানানের কিছু নিয়ম নিয়ে কিছু আলোচনা করব। বাংলা বানানের নীতিমালা- আমরা বাঙালিরা বাংলার ঐতিহ্যের ধারক, একথা ভেবে গর্ব বোধ করি, আরও গর্ব বোধ করি বাংলা ভাষা নিয়ে । এসব কথা ভাবতে খুব ভাল লাগে কিন্তু ভাল লাগে না এই কথা ভেবে যে,আমরা অনেকেই বাংলা বানানের ব্যাপারে খুব উদাসীন। যত্র তত্র ভুল বানানের এবং শব্দের অপপ্রয়োগের ছড়াছড়ি। অনেক সময় বানান নিয়ে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হচ্ছে, এটা কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক এবং দৃষ্টিকটুও বটে। বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীদের জন্য এটা অত্যন্ত অসন্মানের এবং ভাষার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধেরও প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। অথচ আমরা সামান্যতম বেশি সতর্ক হলেই কিন্তু ভুল বানানের থেকে অনেটাই রেহাই পেতে পারি । পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি এখন বানানের ক্ষেত্রে অনেক ছাড় দিয়েছে, যুক্তাক্ষরেও এখন অনেক ছাড় ।বাংলা বানান এখন অনেকটাই সহজ। তবুও একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে এক একজন মানুষ এক এক ভাবে , অনেকটাই নিজের ইচ্ছেমত বানান লিখছেন। অর্থাৎ প্রকৃত নিয়মের ধার ধারেন না অনেকেই । এর ফলে বাংলা বানানের অপব্যবহার যে হচ্ছে সেটা বলাই বাহুল্য। আমি এই সব সোস্যাল মিডিয়ায় দেখেছি অনেক তথাকথিত নামিদামি লেখক দিব্যি বানানের ভুল ব্যবহার করে যাচ্ছেন। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকারক দিক। কারণ কম শিক্ষিত মানুষ তাঁদেরকে অনুকরণ করেন,যার ফলে দেখা দিচ্ছে ভুল বানানের ছড়াছড়ি। ভুল বানানের জন্য আমি অনেক সময় অনেক বন্ধুকে সতর্ক করতে চেষ্টাও করেছি, কিছু সংখ্যক বন্ধু এটা খুব ভাল ভাবে গ্রহণ করেছেন কিন্তু অনেকেই এই উপদেশ ভাল চোখে দেখেননি। অবশ্য তার একটা কারনও আছে। ইদানিং বহু গ্রুপ বা পাবলিশিং গ্রুপ হয়েছে যারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ লেখকদের থেকে লেখা নিয়ে সর্তানুযায়ী লেখা ছাপিয়ে দিচ্ছে, বানান বা শব্দ ব্যাবহারের সঠিক সংশোধন কিন্তু হচ্ছে না সব সময়। অনেকেই ভুলভ্রান্তি লেখার উপর বিভিন্ন সম্মাননা পত্র প্রদান করছেন। অনেক গ্রুপের সঙ্গে কোন প্রতিষ্ঠিত কবি বা সাহিত্যিক যুক্ত নেই, যে সব গ্রুপ এই সম্মাননা প্রদান করছে তাদের বিচারক মণ্ডলী দেখা যায় অতিব সাধারণ মানের এডমিন, অনেকেরই কাব্য বা সাহিত্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই অথচ তারা এই ব্যাপারে অনভিজ্ঞ হয়েও কাব্য, সাহিত্যের বিচার-বিশ্লেষণ করে পুরস্কার বিতরণ করছেন! এর ফলে— যিনি লিখছেন তিনি তার লেখার উপর আস্থা রাখছেন,বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাঁর বানান বা শব্দ গঠনে ভুল থাকতে পারে। এটাই এখন আমাদের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারে মূল কথায় ফিরে আসি। হ্যাঁ, আমরা বিশেষ করে যারা লেখালেখি করতে ভালবাসি তাদের বানানের সঠিক ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি, নচেৎ সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছবে। ইতিপূর্বে আমি বাংলা শব্দের বানান নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি, আজ আমি কয়েকটা বিশেষ ব্যাপারে আলোচনা করতে চাই। আমি কথা দিলাম আমার পর্বগুলি যারা অনুসরণ করবেন তাঁরা সাধারণ ভুলের চোরাবালিতে আর ডুববেন না। বানান ভুল প্রধানত যে সব কারণ হয়ে থাকে সেগুলি হল, উচ্চারণে ত্রুটি, শব্দ গঠনের ত্রুটি এবং শব্দের অন্তর্গত বিভ্রান্তিতে । আমরা অনেকেই সব সময় শব্দের সঠিক উচ্চারণ করি না বা করতে অভ্যস্ত নই , তাই বানানেও ভুল হয়ে যায়। আবার এমন এমন শব্দ আছে যেখানে উচ্চারণ অনুযায়ী বানান হয় না কিন্তু আমরা অনেকেই সেখানে উচ্চারণ অনুযায়ী বানান করে ফেলি, আর সেখানেই হয় ভুল। এই ব্যাবহার অনেকেই যথেচ্ছ ভাবে করে চলেছেন। যেমন- একটি শুদ্ধ শব্দ হচ্ছে ‘ভাল’, উচ্চারণের সময় ল এর সঙ্গে ও-কার উচ্চারিত হবে কিন্তু বানানের সময় ও-কারর থাকা নিয়ম বিরুদ্ধ। অর্থাৎ বানান কখনও ‘ভালো’ হবে না। হবে ‘ভাল’। তবে ভাল -এর সঙ্গে যদি আরও কিছু যুক্ত হয় তখন কিন্তু ওকার আসবে। যেমন- ভালোবাসা, ভালোমানুষ। কিন্তু দেখা যায় আমরা অনেকেই একক শব্দ হিসেবে ভাল কে ভালো, কাল কে কালো হামেশাই লিখে যাই। তেমনি – ‘দেখ ‘ একটি শুদ্ধ শব্দ। কিন্তু অনেকেই দেখছি লিখছেন ‘দ্যাখো’। তবে তো জ্যানো, ক্যানো, গ্যালো এভাবেই লিখতে হয়। কিন্তু সাহিত্য একাডেমি বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সেই নীতি নির্ধারণ করেনি। এসব ক্ষেত্রে লিখতে হবে- দেখ, গেল, কেন এভাবে। এসকল ক্রিয়া পদের শেষে ও-কার বসবে না। তবে বিদেশি শব্দ এবং কিছু তদ্ভব শব্দ আছে যেখানে অ্যা-কার বসবে। যেমন বিদেশি শব্দ- এ্যাণ্ড ,অ্যাসিড, ক্যামেরা, ক্যাসেট ইত্যাদি। দেশি কিছু বহুল প্রচলিত শব্দ রয়েছে- ব্যাঙ, চ্যাঙ, ল্যাঙ, ল্যাঠা ইত্যাদি। এছাড়াও ও-কার বসতে পারে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যেখানে শব্দের অর্থ বুঝতে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। যেমন- ধরো,চড়ো, বলো, শেখানো ইত্যাদি শব্দে। যেমন বল লিখলে তুই সম্বোধনও বোঝাতে পারে কিন্তু বলো লিখলে তুমি সম্বোধন বোঝায়। এছাড়া অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়াপদ বুঝাতে ( আদেশ, অনুরোধ, নিষেধ, উপদেশ বোঝাতে) -তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হলে হবে কর ( করো হবেনা),দেখ, শেখ, আন, এস,বস,হল। অনুজ্ঞা অর্থে- কোরো, লিখো হবে। এগুলো ভবিষ্যতে ঘটবে এমন শব্দ। কাজটি কোরো কিন্তু। আমাকে চিঠি লিখো কিন্তু। আমার বাড়িতে একদিন এসো কিন্তু (যদিও আস্ ধাতুর এই রূপটি বড্ড গোলমেলে, আস্ ধাতু থেকে আসো>এস>এসো কথ্য শব্দটি এসেছে, এখন ব্যবহার বিধি ভেঙে এর যত্র তত্র ব্যবহার হচ্ছে)। আরও কাছে আসো/এস/এসাে(?) -আরও কাছে আসাে (বর্তমান অনুজ্ঞা বােঝালে); আরও কাছে এসাে (ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা বােঝালে)। (অশোক মুখোপাধ্যায়ের সংসদ বানান অভিধানে অনুসারে)। ক্রিয়ার নিত্যবৃত্ত অতীত, শুদ্ধ অতীত আর ভবিষ্যৎ রূপের শেষে ও-কার দেবেন না- করত (করতাে নয়), করল (করলাে নয়), করব (করবাে নয়)উচ্চারণ অনুযায়ী বানান আমরা বিশেষ্য-বিশেষণে লিখি না যখন, ক্রিয়াতে অযথা লিখতে যাব কেন? সেগুলির ক্ষেত্রে কী করি দেখুন- যেমন চরকি (চোরকি লিখি না), মধু(মোধু লিখি না),কচু (কোচু লিখি না), পড়ুয়া (পােড়ুয়া লিখি না)। তা হলে কেন ক্রিয়াপদে— বলতাে, শুনতাে, হাসবাে, ভাসলাে লিখতে যাব কেন? এমনকি হােলাে হােতাে লেখারও দরকার নেই। মনে রাখতে হবে আপনি একটা সুন্দর কবিতা লিখলেন কিন্তু সেই কব