আমি থাকবো আমার আমিত্বে
–/ তসলিমা হাসান
তোমার আঙিনায় ভোর হবে
কোকিল গাইবে গান,
আমি থাকবো না ৷
তোমার বাগানে ফুল ফুটবে
ঝরে যাবে প্রত্যহ,
ভ্রমরের হবে আনাগোনা
আমি থাকবো না ৷
তোমার কেশ বাতাসে উড়বে
দক্ষিণা হাওয়া দিবে দোলা।
তোমার শরীরে কম্পন
জাগাবে মৃত্তিকার ঘুম,
আমি থাকবো না ৷
তোমার প্রেম,
তোমার কাম,
তোমার হৃদয়
একাকার করে দেবে
ভিনদেশী কোন আগন্তুক,
আমি থাকবো না ৷
তুমি খেলে বেড়াবে
পৃথিবীর মাতানো রঙে,
তাতেই শুকোবে আমার অন্তিম মাটি ৷
আমি থাকবো না।
আমি থাকবো না তোমার গানে
তোমার রাগিণীভরা প্রাণে
রাগভরা ভ্রুকুটি চক্ষুতে,
আমি থাকবো শুধু আমার আমিত্বে ৷
অনুভব
–/ তসলিমা হাসান
মাঝে-মাঝে ইচ্ছে করে তোমার সাথে আমার হৃদয়টা পাল্টাপাল্টি করি যাতে তুমি বুঝতে পারো,
“আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি”।
ধরো, এইবার তুমি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করলে,
আর আমি তোমাকে অবহেলা করতে শুরু করলাম।
অনেক অভিমান ভেঙে আমি যেভাবে তোমাকে প্রতিবার বেহায়ার মতো অনলাইনে মেসেজ দিতাম,
ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতাম তুমি কেমন আছো?
এইবার না হয় তুমি সেই কাজটা একটু করলে,
দিনে অন্তত একবার হলেও খবর নিলে আমার।
আমার ভালোবাসাটা না হয় তুমি বুঝলে না।
কতটুকু কষ্ট দিয়েছো ঐটা না হয় একটু হলেও বুঝলে।
যাদের আমরা ভালোবাসি তাদের নাকি কষ্ট দিতে নেই,
তাহলে যারা আমাদের ভালোবাসে তাদেরকেও কষ্ট দেওয়ার অধিকার ঠিক আমাদেরও নেই।
ভালোবাসা কোন প্রতিশোধ গ্রহণ বা মল্লযুদ্ধ নয়।
ভালোবাসা হলো দুই জোড়া চোখ,হাত আর মনের মিল
ভালোবাসার মানুষের আবেগ নিয়ে খেলতে নেয়।
এই আবেগ একসময় সারাজীবনের কান্না হয়ে রয়।
৬০ এ সাতকাহন
–/ তসলিমা হাসান
ফিরে আসা বন্ধু
কালো চা হাতে বসা আমার সামনে,
ইংরেজিতে একে বলে
ব্ল্যাক টি,নো সুগার!
রক্ত আজ বেশী মিষ্টি
খাবারে বাদ পড়েছে চিনি তাই।
মৃদু হেসে বললাম
এককালে চায়ে তোমার এক চামচ চিনি বেশি লাগতো।
মনে আছে, লিটনের দোকানে বসে আড্ডা জমত!
আমি, নীলা, সিমু আর রীতা
তোমরাও ছিলে সংখ্যায় পাঁচ কি ছয়!
ছাই রঙের স্যুট, চোখেতে চশমা
দেওয়ালে ঝুলানো পরিবারের অন্তরঙ্গ
ছবিটির দিকে তাকিয়ে তপু বললো,
সেই সময়ের আমি আর নেই রে, দীপা!
পছন্দের তালিকাটাও বদলেছে আগেই।
তুইও বদলেছিস অনেক!
ঘুরে তাকালো নিরুত্তাপ উদাসীন দৃষ্টিতে,
আটপৌরে শাড়ী আর সাদা চুলের প্রলেপ লুকিয়ে রেখে বললাম
বাবুর বাবা চলে গেলো না ফেরার দেশে
রঙহীন পোশাকে সাচ্ছন্দ্য আজ
নিজের চিন্তা বাদ দিয়েছি কবেই।
কলেজে তুই যখন লাল ওড়নার সেই জামাটা পড়ে আসতিস,
কত ছেলে পেছনে পড়ত ভুলিনি আমি।
বুকের ভেতর জ্বালা ধরত
অম্ব হয়েছে বলে এড়িয়ে যেতাম
বুঝতে দেয়নি কখনো,
কত ভালোবাসতাম তোকে।
আজও সেই নগরে বেঁচে আছি মোরা
নিঃসঙ্গ দু’জনে তবু বাঁধা পাহাড়ঘেরা।
মনের ভেতর দুজনেরই না বলা কথা
মুখে আছে ভালো থাকার মিথ্যে ব্যাকুলতা।
জিদের বসে বিয়ে করে পনের বছরের ছোট মেয়ে,
পঞ্চাশে এসে চলে যায় সে অন্যের হাত ধরে।
অপু তাই আজও আমার ঠিকানা খোঁজে
কথার ফাঁকে জানতে চায়
সত্যি কি সুখী ছিলি
বিদেশী বিয়ে করে?
আবার দেখা হবে
–/ তসলিমা হাসান
আমাদের আবার দেখা হবে,
সবুজ ঘেরা পাহাড়ের নিচে
অথবা সমুদ্র সৈকতে
দেখা আমাদের হবেই।
যতটা কাছে এসেছিলে
তার থেকেও দূরে চলে গিয়েছো,
কিন্তু মনের মনিকোঠায়
আছি মোরা সেই আগের মতোই।
ভেজা চোখে আবৃত্তি করি
তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো,
ফেলা আসা স্মৃতিগুলো
কেবলই বিচরণ করে মানসপটে।
ভালোবাসার আদরে শিহরিত ক্ষণ
কড়া নেড়ে যায় আমার দূয়ারে
তবু জানি আমি
আমাদের এই দূরত্ব মিটিয়ে
দেখা হবে একদিন
ঘোর বর্ষার দিনে
তুমি নীল শার্ট আর
আমি নীল শাড়ী পড়নে।
অপ্রকাশিত আখ্যান
–/ তসলিমা হাসান
বহুকাল ধরে বয়ে চলছি আমি
তোমার দেওয়া উপেক্ষা,মিথ্যে প্রতিশ্রুতি,আর ছলনা।
তবু পারলাম না
প্রতিশোধ নিতে।
পারলাম না পৃথিবীর কাউকে
তোমাকে দেওয়া বুকের ভেতর জায়গাটায়,
অন্য কাউকে বসিয়ে দিতে।
তোমার দেওয়া কষ্টগুলোকেই
মূল্য দিলাম আজীবন,
তবুও পারলাম না
সেই কষ্ট ভাগ করে নিতে
অন্য কারো বুকে শুয়ে।
তোমার তুচ্ছতাচ্ছিল্য সহ্য করলাম প্রতিনিয়ত,
তবু পারলাম না
অন্য কারো হাত ধরে চলে যেতে।
কত রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিলাম,
তবু পারলাম না তোমাকে ভুলে
অন্য কারো চিন্তায় মগ্ন হতে।
জীবনের সব সুখ, আনন্দ
বিনা দ্বিধায় বিসর্জন দিয়েও
পারলাম না তোমার কাছ থেকে পাওয়া
কষ্টগুলোকে কারো কাছে প্রকাশ করতে।
বয়ে চলেছি সব অপ্রকাশিত আখ্যান
বুকে করে।
আমি একজন নারী
–/ তসলিমা হাসান
দশ মাস দশ দিন আমি
গর্ভ ধারণ করি।
একই হাতে আবার আমি
সন্তান লালন পালনে
শক্ত হাতে গড়ি।
সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা
বলতে শেখাই।
জীবন চলার দৃঢ় পথে
সঙ্গীকে আত্মবিশ্বাসী করি।
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমি
তারই সাথে চলি।
আমি একজন নারী,
সাথে আমি একজন যোদ্ধা।
জীবন যুদ্ধে আমাকে ছাড়া
সবাই অচল!
যেনো কোন বৈঠা বিহীন নৌকা।
আমি অনেক দামী,
সম্পত্তি না, হয়েছি সম্পদ
আগাগোড়া সংসার বা বাহির
সবই এই হাতে গড়ি।
মুক্ত আকাশে নির্মল বাতাসে
স্ব গৌরবে এগিয়ে যাওয়া
একজন আর্দশ নারী।
জীবনযাপন
–/ তসলিমা হাসান
একাকীত্ব আমার রপ্ত হয়েছে
একাই ভালো থাকি!
কেউ এলে বিরক্ত হই
নির্জনতা কেটে গেলে।
খোলা আকাশে মনের মধ্যে
নিজেকে মুক্ত করি,
স্বপ্ন বুনি, স্বপ্ন সাজাই
অদৃশ্য রঙিন প্রজাপতি।
বন্ধ দুয়ারে কড়া নেড়ে নেড়ে
কতজন এসে শুধায়,
কেমন করে একা থাকো তুমি,
আমাকে নেও না ডাকি!
মিষ্টি হেসে মনে মনে বলি
দেখলাম কত জীবনে,
এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয়
সবই মিথ্যে কারসাজি।
নিজের জন্য তাই নিজে বাঁচি
নিজেকেই ভালোবাসি।
প্রত্যাবর্তন
–/ তসলিমা হাসান
মাঝে একবার সে এসেছিলো,
সেদিন ছিলো ঘোর বর্ষার দিন।
টুপটুপ করে বৃষ্টি ঝরছিলো,
বিকেল সন্ধ্যা ভোর।
আমার অবসর নেওয়া সময়টাতে
চা হাতে দাঁড়িয়ে বারান্দায়,
পাশে এসে দাঁড়ালো সে
কিছু একটা বলার ছলনায়!
চুপচাপ কেটে গেলো বেশ কতক্ষণ,
হঠাৎ মনে পড়ে মোদের
ফেলে আসা দিন।
কলেজ ক্যাম্পাসে ছিলাম আমরা যুগল
রোজ রোজ কত কথা
তবুও জুটতো না অবসর।
চোখে চোখ রেখে বিস্ময়ে ভালোবাসা,
আজ শুধুই তা কেবল স্মৃতিকথা।
বইয়ের পাতায় রাখা ছিলো
তার দেওয়া শুকনো গোলাপ,
চিঠিতে লিখে যেতো হৃদয়ের আলাপ।
কত পথ গিয়েছিলাম মোরা হাতে হাত রেখে
হঠাৎ ঝড়ে হারিয়ে কোথাও
পথ গেলো বেঁকে।
আজ তাই মনে মনে দু’জনেই বুঝি
ফিরে এলেও আমরা দুজন
দু’পথের পথিক।
আজও তোমায় ভালোবাসি
–/ তসলিমা হাসান
কত দিন তোমার সাথে হয়নি আমার দেখা,
আর কত দিন থাকবো আমি পথ চেয়ে বসে একা-একা,
তুমি প্রিয় ভুলে গেছো।
করেছ আমায় পর,
আমার স্বপ্ন ভেঁঙ্গে চুড়ে,
আছ মহা সুখে ,
তুমিতো আজ খুঁজে নিয়েছ আপন পথ,
তাই আজও চেনার মাঝে,
আমি এতোটা অচেনা।
নিমিষেই আজ করলে আমায় পর,
আর অচেনাকে করলে আপন।
ভুলে যদি সুখি হও,
পেয়ে নতুন সাথী,
তুমি যেও সুখের নিদ্রায়,
আমি থাকিব জাঁগি সারা রাতি,,
তুমিহীনা কেমন আছি,
দেখে যাও গো আসি,
এতো কিছুর পরেও আজও শুধু তোমায় ভালোবাসি।
৫ Comments
দারুন দারুন প্রেম বিরহের কবিতা কবি কে অসংখ্য ধন্যবাদ
বারন্য কবি তসলিমা হাসানের গুচ্ছ কবিতাগুলি অত্যন্ত সুন্দর
It’s good.Your writing is very beautiful.
খুব সুন্দর কবিতাগুলো। দু’একটি ক্ষেত্রে বানানের ব্যাপারে আরেকটু যত্ন আশা করি প্রিয় কবির কাছে।
খুব ভালো হয়েছে।