প্রতিদান
নাজমা জামাল ফেরদৌসী
নিশাত এবছর মাস্টার্স পাশ করেছে। অনেক ইন্টারভিউ দিয়েও কোথাও চাকরি পেল না সে। মা প্রতিদিন বিয়ের জন্য প্রেশার দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু মাকে সে বোঝাতে পারবেনা, নিজের পায়ে শক্তভাবে না দাড়িঁয়ে সে বিয়ে করতে চায় না। বাবা সামান্য দোকান চালিয়ে মোটামুটি সংসারটা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিশাত বড়। তাই মা বাবার নিশাতের উপরই সমস্ত আশা ভরসা। ছোট দুই ভাই একজন কলেজে আর আরেকজন স্কুলে পড়ে। মায়ের একটাই কথা কষ্ট করে তোর বাপ মাস্টার্স পযর্ন্ত পড়িয়েছে। চাকরি না পেলেও ভালো বিয়ে দিয়ে মেয়ের জামাই যদি একটু ভরসা দেয়। নিশাত জানে, এ ধরনের চিন্তা ভাবনা অনেক সেকেলে। কিন্তু মাকে কিছুই বলে না, মা বলে বলুক। মা হয়ত সংসারের চিন্তা থেকে বলে। নিশাত পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু সামাজিক কাজ করত। এই পাড়ার অসচ্ছল কিছু বাচ্চাকে পড়াতো আর পাড়ার কুকুর বিড়ালকে খাবার দেয়া। দুইটা আহত বিড়ালকে নিশাত বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য মায়ের বকুনিও খেয়ে চলেছে। কিন্তু নিশাত এগুলো ভালোবেসে করে। একদিন একটি বড় কোম্পানি থেকে নিশাতের ইন্টারভিউ এর ডাক আসে। নিশাত যথারীতি প্রস্তুতি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু যাওয়ার পথে দেখে একটা বিড়ালছানাকে একটা গাড়ি ধাক্কা দিয়ে চলে গেছে। আহত বিড়ালছানাটিকে কোলে নিয়ে দৌড়ে একটা ওষুধের দোকানে নিয়ে তার সমস্ত যাতায়াত ভাড়া খরচ করে ব্যান্ডেজ আর ওষুধ পত্র কিনে বাড়ি ফিরে আসে। সেদিন আর তার ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া হয় না। মায়ের সেকি রাগ। নিশাতের এরকম অবস্থা দেখে মা বার বার বলেই চলেছে “তুই এতবড় চাকরির ইন্টারভিউ না দিয়ে চলে এলি? তোর আর চাকরি হবে না”। মায়ের কথার উত্তরে নিশাত বলে” মা একটা প্রানীর জীবন আমার কাছে চাকরির থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারভিউ আমি আরো দিতে পারব কিন্তু বাচ্চাটার চিকিৎসা না করলে ও মারা যেত মা “।
একসপ্তাহ পরের ঘটনা… একটি জরুরি ফোন এল নিশাতের কাছে। যে ইন্টারভিউটি নিশাত সেদিন দিতে পারেনি সেটা সেদিন একটা দূর্ঘটনা জনিত কারনে অনুষ্ঠিত হয়নি। আবার ইন্টারভিউটি হবে তারিখ জানিয়ে ফোন দিয়েছে। নিশাত ঠিক করেছে সে এবার যেয়েই সত্যি কথা বলবে যে সে ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারেনি। পরদিন সে সেই অফিসে ইন্টারভিউ দিল এবং সত্যি কথা বলল এবং কেন আসতে পারেনি তাও বলল। আশ্চর্য ব্যাপার হলো,নিশাতের চাকরিটা হয়ে গেল। বাড়ীতে এসেই নিশাত মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করল আর বলল ” মা দেখেছো?আমার এই চাকরিটাই হলো। সেদিন পুচিকে (সেই বিড়ালছানা) বাচাঁনোর উত্তম প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা আমায় দিলেন। বিধাতা চাইলে কিনা হয়! মানবতার জয় হবেই।