আমার ব্যস্ত যাপিত জীবনে সাহিত্য চর্চার সুখ:
পারভীন আকতার
দীর্ঘ বিশ বছর ধরে আমি সাহিত্যের আনাচকানাচে ডুব সাঁতার কাটছি।শুধুই পড়েছি কেবল।আমার পড়া বইয়ের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। হাতের কাছে যে বই পেয়েছি, গোগ্রাসে গিলেছি।বই দেখলেই আমার অটোমেটিক তৃষ্ণায় মন ছটফট করে।মাঝেমাঝে আমার কাছে এটি মানসিক বইরোগও মনে হয়।যাহোক আমি মনের ইতিবাচক সাড়াকে খুব মেনে চলি।কারণ মন যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে কাজটা করতে চাইবে তা খুবই ভাল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
গত পাঁচ বছর ধরে টুকটাক লিখছি।পড়ার ধাঁচে পড়ে এমন বই আজো লিখতে পারিনি আমার মনে হয়।তবে অপূর্ণতা থাকা ভাল লেখার ক্ষেত্রে।ভাল লিখতে তা যথার্থ সহায়ক । ভাল বই, ভাল লেখক হওয়া অনেক সাধনার বিষয়।আলসেমি ঝেড়ে এখন সেই পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
আমার অফিসের সম্মানিত উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার বই হাতে পেলেই প্রথমে খুব মায়া স্নেহ করে জিজ্ঞেস করেন,”এই আপনি সময় কোথায় পান এত ভাবার?অনেক দূরে গিয়ে চাকরী করেন।সংসার, বাচ্চাদের সামলিয়ে এ কীভাবে সম্ভব?”শুভ সংবাদ হল আমি সাহিত্য সংস্কৃতির মানুষ।যদিও আমার রক্ষণশীল পরিবার এসবে নির্লিপ্ত অবদান রাখে।আমি একক প্রচেষ্টায় প্রগাঢ় সদিচ্ছায় সাহিত্য চর্চা করছি।ঠিক যেমন খিদে পেলে খাবার খেতেই হয় তেমন।আর দশটা স্বাভাবিক কাজের মত আমার দৈনন্দিন রুটিনে একটি সময় আমি সেটিং করে রাখি নিজের জন্য। এটা আমার নিজস্ব পৃথিবী একান্ত মনে লেখার জগৎ। এই সময়টা আমি দুনিয়ার কিছুর সাথে সম্পৃক্ত থাকি না।তখন কেবল আমি অবিনশ্বর খোদাকে নিয়ে থাকি।তিনি বলেন আর আমি লিপিবদ্ধ করি সারি সারি কলাম।তিনি যখন চুপ হয়ে যান তখন আমিও অটোমেটিক চুপ মেরে যাই।এতে আমার কোন একক কৃতিত্ব নেই।সব উপরওয়ালার অপার দানের ফসল আমার লেখা প্রবন্ধ, গান,কবিতা,গল্প, ছড়া আর উপন্যাস।সাহিত্যের অন্তঃপুরে ঢুকে আমি রসদ জোগাড়ে চেষ্টারত।হয়তো একদিন পৃথিবী স্বীকৃতি দেবে।খোদাতা’লা চাইলে সব সম্ভব।আমি জগৎ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া নই।আমি খোদাতুষ্টি,আত্মতুষ্টি আর জনকল্যাণকর লেখায় নিবিষ্ট থাকি।বাড়তি কোনকিছুই আশা করি না।
হ্যাঁ,মাঝেমাঝে মাঝ রাতেও লিখি।হঠাৎ একটি কবিতা বা কোন থিম মাথায় আসলে সাথে সাথেই লিখে ফেলতে হয়।পরে হাজার চেষ্টা করলেও তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না।এটা সাহিত্য সাধনার একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।সারাদিন শরীর মনে জবর দখল নেয় চাকরী,সংসার আর নানাবিধ পেরেশানি। এর মাঝে আবার রাত জেগে সাহিত্য সাধনা করা সত্যিই খুব কঠিন ব্যাপার।তবে এতে আমি পরম আনন্দ লাভ করি।মন মেজাজ অজানা খুশিতে ভরে যায় যদি লেখাটা মন মতো হয়।সবার্গ্রে আমাদের কাজে মনোযোগ,পরিশ্রম করার মানসিকতা তৈরি করা প্রয়োজন।অল্পসময়ই তো আছি পৃথিবীতে। এই সময়টুকু অর্থবহ করতে আমরা শুধু বাহ্যিক কাজকর্ম নিয়ে যতই ব্যতিব্যস্ত থাকি;পরে অবশ্যই নিজে পৃথিবীতে আসার হেতু হিসেবে কিছু প্রমাণপত্রতো রেখে যাওয়াই লাগে।সম্রাট শাহাজাহানকে চাইলেই কেউ পৃথিবী থেকে মুছতে পারবে না।পারবে না সেক্সপিয়র,কার্ল মার্কস, কবি জসিম উদ্দীন,কবি নজরুল অথবা বহুমাত্রিক প্রতিভার লেখক কবি রবীন্দ্রনাথকে।পারবে না কেউ মুছে ফেলতে কবি নির্মলেন্দু গুণ বা তারাশংকর,সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দুকে।কাছের মানুষের সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য বা সাতকাহনের দীপাবলীকে কেউ মারতেও পারবে না।এমন কালজয়ী সব চরিত্র সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যিকগণ।ভাবা যায়!পড়া ছাড়া কোন গতি নাই।
পবিত্র কোরআন পড়ে বুঝতে হয়।না পড়ে অন্যের মুখে শুনে পুরোটা বুঝা যাবে না।তেমন রাসূল (সাঃ) হাদীস,বেধ,ত্রিপিটক, বাইবেল সবই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়।তাই সাহিত্য চর্চা আদিগন্ত চলতে থাকবে।মানুষ মনের কথা প্রকাশে ব্যাকুল সদা। কারণ স্রষ্টা এই ক্ষমতা দিয়েই মানুষ সৃষ্টি করেছেন।পড়া ছাড়া আছে কী আর?যেকোন বিষয় বুঝতে, গবেষণায়, আবিষ্কারে পড়া মাষ্ট।তো!আজ থেকে আপনিও দিন বা রাতের একটি সময় নিজের জন্য কোয়ালিটি টাইম রাখুন,ভাবুন।প্রকৃতি ও মানব কল্যাণে দু’কলম লিখুন।এ জন্মগতভাবেই আমার, আপনার সবার দায়িত্ব।পৃথিবী এগিয়ে নিতে আপনার চিন্তাধারা যে কাজে আসবে না তাতো নয়!মেধার স্ফুরণ ঘটাতে হবে আমাদের।সারাক্ষণ মোবাইলে সময় না দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে আমি লিখি।
বিশ্বাস করুন গাড়ী,বাড়ী অর্থ যশ কিছুই আমাদের কাজেই আসবে না মৃত্যুর সময় বা পরে।সদকায়ে জারিয়া হবে পরকালে আমাদের একটি ভাল কাজ।ভাল লেখা স্রষ্টার কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে।কারণ বিশ্বজগতের মঙ্গলের বার্তা আনায়ন করেছে আপনার,আমার রুচিশীল লেখাগুলো।লেখালেখিকে আমি ইবাদত মনে করি।জ্ঞানের ভান্ডারে পড়ে থাকি তাই দিন-রাত। আমার নিজেকে কখনোই আর একা মনে হয় না।এমন অলৌকিক শক্তি নিহিত আছে সাহিত্য চর্চায়।
যাঁরা আমার লেখা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করেন তাঁদের আমি ভালোবাসি। কারণ আমার লেখনীর পাঠক সৃষ্টি হয়েছে বিধায় আমার লেখা নিয়ে ভাল মন্দ বিশ্লেষণ চলে।খারাপ কী? এতে আমার লেখার মান আরো ভাল হয়।আমার চিন্তাধারা আরো প্রসারিত করে দেন বিধাতা।এ এক ঐশ্বরিক পাওয়া।তাই সাহিত্য চর্চাকে সযত্মে লালন পালন করতে হবে।গঠনমূলক ভাবনায় লেখাকে নিয়ে যেতে হবে।যে বিষয়ে আমরা লিখব তা নিজের ধারণা ও প্রাসঙ্গিকতা বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত, ঘটনা তত্ত্ব সন্নিবেশ করে।বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া সময় প্রবাহে আমাদের ফিরতেই হবে যদি উজ্জ্বল, টেকসই সমৃদ্ধ সাহিত্যে উন্নতি করতে হয়।আমাদের সাহিত্য চর্চাকে সন্তানের মত পরম যত্মে লালন পালন করতে হবে তবেই অমর সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব।পাওয়ার আশা না করে,স্বীকৃতির কথা না ভেবে আমরা যেন সাহিত্যে মেধা মনন জগতের কল্যাণে ঢেলে দেয়ার কথা ভাবি।
পারভীন আকতার
শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক।
চট্টগ্রাম।
১ Comment
very good job; congratulations.