পরী
শিপুন আখতার
লুৎফর রহমান খানকে পাগলাগারদে পাঠানো হলো। ডাক্তার খুব যত্ন করে লুৎফর রহমান খানকে কাছে ডেকে নিলেন। লুৎফর এর মুখ খুব গম্ভীর। ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, ‘যুবরাজ আপনার নাম কী?’
লুৎফর রহমান বললেন,’আমি দিন দুনিয়ার বাদশা।’ ডাক্তার আবার জিজ্ঞেস করলেন,
‘আপনার বাড়ি কোথায়?’
লুৎফর রহমান খান বললেন, ‘সোনারগাঁও।’
ডাক্তার বললেন,’বাহ বেশ।’
লুৎফর রহমান অট্টহাসি দিলেন,
ডাক্তার বললেন, ‘খুব ভালো আছেন আপনি, তাইনা?’ লুৎফর রহমান খান এবার নিজেকে দেখে নিলেন, তারপর বললেন, ‘আমি এখানে কেন?’
ডাক্তার বললেন, ‘আপনার চিকিৎসা দরকার তাই আপনার পরিবার আপনাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছে।’
লুৎফর রহমান খান বললেন, ‘তা বেশ আমার চিকিৎসা দিন।’
ডাক্তার একটা কুয়ো দেখিয়ে বললেন, ‘এক বালতি জল তুলতে পারবেন?’
লুৎফর রহমান খান ভ্রু চিকন করে ডাক্তারকে দেখে বললেন, ‘এটা কি চিকিৎসা?’
ডাক্তার বললেন, ‘তা হবে কেন? জল তুলতে পারেন কিনা সেটা দেখবো।’
লুৎফর রহমান খান উঠে দাঁড়ালেন। কুয়োর কাছে গিয়ে জল তোলার জন্য রশিতে লাগানো বালতি হাতে নিলেন। নামিয়ে দিলেন কুয়োর ভিতর বালতি। বালতি নেমেছে ঠিকই কিন্তু তোলার সময় খুব হালকা লাগছে তার তিনি নিচু হয়ে দেখলেন সমস্যাটা কি। সমস্যা বোঝার চেষ্টা করলেন। ডাক্তার বললেন, কি হলো লুৎফর সাহেব এক বালতি জলে এত সময় লাগছে যে?’
লুৎফর রহমান খান বালতি তুলে ডাক্তারকে এসে বললেন, ‘বালতিতে জল উঠবে কি করে? বালতির তো তলা নেই।’
ডাক্তার বললেন, ‘তাই নাকি?’
লুৎফর রহমান খান বললেন, ‘আপনি যে কি করে ডাক্তার হলেন সেটাই ভাবছি।’
ডাক্তার হেসে বললেন, ‘সেটাই কথা।’
ডাক্তার লুৎফর রহমান খানের সাথে আসা তার স্ত্রীকে বললেন, ‘উনি পাগল নন, যার এত চিন্তাশক্তি এখনো কাজ করে তাকে এখানে চিকিৎসা দেয়ার কিছুই নেই।’
লুৎফর রহমান খান কে সাথে নিয়ে তার স্ত্রী জরিমন বিবি বাড়ি ফিরে এলেন। লুৎফর রহমান খান রাতের অন্ধকারে বাইরে এসে বসলেন, জরিমন বিবি এসে বাতাস করা শুরু করলেন। লুৎফর রহমান খান স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি কাঁপছেন ভীষণ। জরিমন বিবি বললেন, আপনি কাঁপছেন কেন? লুৎফর রহমান তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। জরিমন বিবি অবাক হয়ে শুনতে লাগলেন। লুৎফর রহমান তখনো চিৎকার করে যাচ্ছেন।
জরিমন বিবি বললেন, কোথাও কেউ নেই, আপনি শান্ত হোন। কেউ আপনাকে নিয়ে যাবে না, যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি। লুৎফর রহমানের কাঁপুনি বেড়ে গেলো। জরিমন লাঠি নিয়ে আশেপাশে হিসহিস করে কাউকে তাড়াতে লাগলেন। তার লাঠির আঘাত মাটিতে পড়ে মাটি ফেটে যাচ্ছে কিন্তু লুৎফর রহমানের শরীরের কাঁপুনি আরো বেড়েই চলেছে। একটা লাঠির আঘাত লুৎফর রহমানের গায়ে লাগলে তিনি দাঁত চেপে পড়ে গেলেন। এতক্ষণে পাশের বাড়ির লোকজন ভীড় জমিয়েছে। হুজুর চলে এসেছেন। ঝাড়ফুঁক শুরু হয়ে গেলো। জরিমন লুৎফর রহমানের হাত চেপে ধরে আছে। লুৎফর রহমান আস্তে আস্তে চোখ খুললেন। এত মানুষ দেখে তিনি জরিমনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ও জরি এত মানুষ কেন? কার কি হইছে?’ জরিমন বিবি চোখ মুছলেন, বললেন,’আপনি অসুস্থ তাই সবাই এসেছে আপনাকে দেখতে।’
লুৎফর রহমান খান বললেন, ‘কই কই, আমি তো ঠিক আছি, সাবাইকে যেতে বলেন।’ জরিমন বিবি সবাইকে ইশারা করে যেতে বললেন। সবাই আস্তে আস্তে চলে গেলেন শুধু হুজুর নসিয়তউল্লা চারপাশে কিছু খুঁজতে লাগলেন। এতো বেশি মনোযোগ দিয়ে খুঁজতে লাগলেন যে বাতাসে পাতা উড়ে যেতে দেখে তিনি লাফিয়ে পাতা ধরতে গিয়ে পড়ে গেলেন। লুৎফর রহমান খান খিলখিল করে হেসে উঠলেন। বললেন, ‘ও হুজুর কি খোঁজেন? কারে খোঁজেন?’ থতমত খেয়ে হুজুর নসিয়তউল্লা বললেন,’কই কই, কিছু না তো?’ লুৎফর রহমান খান আবার হেসে গড়িয়ে পড়লেন।
লুৎফর রহমান খানের বাবা নিয়াজ উদ্দিন খান বিশাল সম্পদশালী ব্যক্তি। তাঁর একটি ঘোড়া আছে। তিনি সেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে তাঁর নিজ জমি দিয়ে হেঁটে বেড়ান।
অন্যের জমিতে তিনি কখনো পা দেন না। জমিদারি প্রথার মানুষজনের মতোই তাঁর আচরণ। যাঁর এত জমিজমা তাঁকে সবাই জমিদার নিয়াজ উদ্দিন খান বলেই ডাকেন।
ছেলের এমন অসুস্থতার খবর শুনে নিয়াজ উদ্দিন ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছেলেকে দেখতে এলেন। ছেলেকে সুস্থ দেখে তাঁর ভালো লাগলো। তিনি লুৎফর রহমান খান কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবাজি আপনার কি হয়েছে?’
লুৎফর রহমান খান জবাব দিলেন, ‘কিছু হয়নি আব্বাজান। আপনি চিন্তিত হবেন না। তাছাড়া জরিমন আছেন আমারকে দেখভাল করার জন্য। জরিমন আপনার পুত্রবধু, যাকে আমি পৃথিবীর সবচাইতে বেশি ভালোবাসি। ভালোবাসি কথাটা উচ্চারিত হবার সাথে সাথে ঘোড়াটি দুই পা উঁচু করে হুংকার দিলো। নিয়াজ উদ্দিন ভয় পেলেন। তিনি তার ঘোড়াকে এভাবে কখনো হুংকার দিতে দেখেননি। তিনি ঘোড়াটির কাঁধে হাত রেখে আস্তে আস্তে বুলিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলেন। লুৎফর রহমান হেসে বললেন, ‘ঘোড়ার চোখ পড়েছে অন্য জায়গায় আব্বাজান তাই সে অস্থিরতা দেখাচ্ছে।’ নিয়াজ উদ্দিন ছেলের কথা বুঝতে চেষ্টা করলেন। বললেন, ‘তুমি যা দেখো তা কি আমার ঘোড়াটাও দেখছে?’ লুৎফর রহমান বললেন, ‘আমি কি দেখি আব্বা?’ নিয়াজ উদ্দিন বললেন, ‘শুনেছি তুমি অন্য জগতে চলে যাও।’ লুৎফর রহমান বললেন, ‘কে বলেছে আব্বা?’ নিয়াজ উদ্দিন বললেন, যেই বলুক, ‘কথা না ঘুরিয়ে সঠিক জবাব দাও।’
লুৎফর রহমান মাথা নিচু করলেন, মাটির দিকে তাকিয়ে তিনি একটা গর্ত দেখিয়ে বললেন, ‘আব্বা এখানে কি কিছু দেখতে পাচ্ছেন?’ নিয়াজ উদ্দিন খান ঘোড়া থেকে ঝুলে দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। তিনি ঘোড়া থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গেলেন। জরিমন দৌড়ে কাছে আসলে তিনি হাত তুলে মানা করলেন। তাঁর সাথে আসা দু’জন পাহারাদার বাইরে অপেক্ষা করছিলো, তিনি তাদের কাছে ডাকলেন এবং তাঁকে তোলার অনুমতি দিলেন। তাঁকে তোলার সময় অচমকা একটা বাতাস উঠলে পাহারাদার দু’জন ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। অগত্যা তিনি একাই উঠে পড়লেন। জরিমনের উদ্দ্যেশ নিয়াজ উদ্দিন বললেন, ‘বৌমা একে বাড়ির বাইরে বের হতে দিও না। আমার অনেক শত্রু। আমার অবর্তমানে আমার সব সম্পত্তির মালিক লুৎফর রহমান খান কাজেই তোমাদের চোখ, কান খোলা রাখতে হবে।’ জরিমন বিবি মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালে তিনি ঘোড়ার পিঠে চাবুক মেরে স্থান ত্যাগ করলেন। যাবার আগে লুৎফর রহমান এর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমার মুখ চাঁদের ন্যায় তাই তোমার ওপর পরীর ভর করা অসম্ভব কিছু নয়।’ লুৎফর রহমান তার বাবার কথা শুনে জরিমনের দিকে তাকালেন। জরিমন ততক্ষণে মাথা নিচু করেছে। তার চোখ থেকে এক ফোটা মুক্তদানা গড়িয়ে মাটিতে পড়লো। লুৎফর রহমান তার বাবার কথায় লজ্জা পেয়েছে কিনা বোঝা গেলো না। তিনি বাইরে যাবার জন্য জরিমনের কাছে তার কাঁধে নেয়া ব্যাগটি চাইলেন। জরিমন বিবি দ্রুত ঘরে ঢুকে তার ব্যাগটি বের করে আনলেন। লুৎফর রহমান বেড়িয়ে পড়লেন।
লুৎফর রহমান তার বিশাল ডানটাওয়ালা ছাতা খুললেন। তীব্র রোদে তিনি ঘামছেন। হেঁটে চলেছেন পথ ধরে। ব্রীজের ওপর বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে নিতে তিনি সেখানে শুয়ে পড়লেন। আশেপাশে লোকজন তার কাছ দিয়ে ঘেঁষে না। দূর থেকে তারা তার ব্যাগ দেখে ভয়ে থাকেন। লুৎফর রহমান চোখে রঙিন চশমা দিলেন। ব্যাগ থেকে বাঁশি বের করলেন। অনেক চেষ্টা করে সুর তুলতে চেষ্টা করলেন। সুর মিলিয়ে গেলো। লুৎফর রহমান খান গাইতে লাগলেন। গুনগুন করে। সুর আসলেও গানের কথা আসছে না। তিনি কাঁদলেন। আর গাইতে লাগলেন,
‘মিলন হবে কতো দিনে…… সনে।’ তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, ‘আহা পৃথিবী।’ পাশ দিয়ে কলিম মিয়ার রিক্সা যাচ্ছিলো। কলিম জোরে চিৎকার করে বললেন, ‘লুৎফর ভাই, ওঠেন আমার রিক্সায় বাড়ি নিয়া যাই।’ লুৎফর রহমান বললেন,’বাড়ি? কার বাড়ি? কোথায় বাড়ি?’
কলিম মিয়া জোর করে তাকে রিক্সায় তুলে নিলেন। রিক্সার আওয়াজ পেয়ে জরিমন বিবি ঘোমটা টেনে বের হলেন। ঠিক যা ভেবেছিলেন তাই, কলিমের রিক্সার বেল তিনি চিনেন তাই তার ভুল হলো না। তিনি কলিমকে ধন্যবাদ দিয়ে লুৎফর রহমান কে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন। স্বামীর পায়ে জল ঢেকে পরিস্কার করে দিলেন। হাত মুখ পরিস্কার করে ধুয়ে পোশাক বদলিয়ে দিলেন।
যখন লুৎফর রহমান এর পাঞ্জাবি খুললেন তখন তার পিঠে তিনি তার কপোল ছোঁয়ালেন। লুৎফর রহমানের পিঠে হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলেন আর বললেন, ‘আপনি এত সুন্দর কেন?’ লুৎফর রহমান কিছু বললেন না, এক দৃষ্টিতে বাইরে চেয়ে আছেন। কি যেন ভাবছেন। জরিমন তাকে ঝাকি দিলেন। তিনি সম্মিত ফিরে বললেন, ‘খেতে দিন ক্ষুধা পেয়েছে।’ লুৎফর রহমান খেতে বসেছেন। জরিমন বিবি পাখা দিয়ে বাতাস করা শুরু করলেন। লুৎফর রহমান এক গাল ভাত জরিমনের সামনে তুলে ধরে বললেন, ‘হাঁ করেন।’
জরিমন হাঁ করলেন। জরিমনের মনে হলো অমৃত। জরিমন চোখ বন্ধ করে ভালোবাসার রেশটুকু উপলব্ধি করলেন, মনে মনে বললেন, ‘আল্লাহ আপনি আমার স্বামীর এই ভালোবাসাটুকু শুধুই আমার জন্য রেখে দিয়েন।’ খাওয়া শেষ করে লুৎফর রহমান বিছানায় শুতে গেলেন। জরিমন বাতি কমিয়ে, মশারী টানিয়ে দিলেন। এরপর লুৎফর রহমানের পাশে শুয়ে পড়লেন। গভীর রাত নিস্তব্ধ চারদিক। জরিমন ঘুমিয়ে আছে। লুৎফর রহমান হাসছেন। হাসির শব্দে জরিমনের ঘুম ভেঙে গেলো। তিনি লুৎফর রহমানের পাশে একটা কিছু দেখলেন। অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারলেন না। তিনি চুপ করে রইলেন। লুৎফর রহমান খেলছেন খুব আনন্দ নিয়ে। জরিমন বিবি ভয় পেলেন। তিনি দেখলেন একটা সাপ লুৎফর রহমানের পাশে শুয়ে আছে আর তার সাথে লুৎফর রহমান খেলা করছেন। ভয়ে জরিমনের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো। তিনি চোখ বন্ধ করলেন। তিনি চুমুর শব্দ শুনলেন এরপর আরও অন্যকিছু বুঝলেন। তিনি স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি লুৎফর রহমান কে ধাক্কা দিলেন। লুৎফর রহমান পাশ থেকে সাপটি সরে গেলো। লুৎফর রহমান বললেন, ‘কি হয়েছে? আমাকে ঠেলে দিলেন কেন?’ জরিমন বললেন,’আপনি কার সাথে হাসাহাসি করছেন? খেলছেন? চুমু দিচ্ছেন?’
লুৎফর রহমান বললেন, ‘কেন আপনার সাথে।’ জরিমন বললেন, ‘আমি তো দেখছি অন্য কিছু ছিলো।’ বলে জরিমন বাতি বড়ো করে দিলেন। বিছানায় এসে খুঁজতে লাগলেন। কিছু পেলেন না। তারপর আবার বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে লুৎফর রহমান প্রতিদিনের মতো খেতে গেলেন জরিমনের রান্নাঘরে। জরিমন তার চকচকে রান্নাঘরটি খুব যত্নে সাজিয়ে রাখেন। রান্নাঘরে মাটি দিয়ে নকশা করে নিজ হাতে মুছে নেয়া তার অভ্যাস। পিড়ি পেতে দিলেন তার স্বামীকে। লুৎফর রহমান তার বউয়ের পাশে বসলেন। লুৎফর রহমানের বউকে এত ভালোবাসা নিয়ে পাড়ার লোকেরা অনেক দুষ্টুমি করে বলেন, ‘জাতে মাতাল, তালে ঠিক।’ লুৎফর রহমান এর অর্থ খোঁজেন না। তিনি শুধু তাকিয়ে থাকেন আকাশে। আজ খুব কাছাকাছি বসেছেন তিনি। তার বউকে তিনি ভাত তুলে মুখে দিলেন। জরিমনের এই অপেক্ষাটুকু সব সময় থাকে। কখন তিনি তুলে খাওয়াবেন। জরিমনের আনন্দে চোখ বন্ধ হয়ে এলো। চোখ খুলে তিনি দেখলেন বিশাল সাপ গর্ত করে ঢুকছে রান্নাঘরে। জরিমন চিৎকার দিলেন সাপ সাপ বলে। লুৎফর রহমান ভাতের প্লেট রেখে গর্ত থেকে টেনে টেনে বের করতে লাগলেন সাপটি। তারপর গলায় পেঁচিয়ে নিলেন। জরিমন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। লুৎফর রহমান সাপ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন। লোকজন তাকে দেখে দূরে সরে যাচ্ছেন। তিনি সাপের মাথা ধরে তার ঠোঁটের চারিদিকে চুমু খাওয়াচ্ছেন। তিনি একটা ব্যাগে ভরে নিলেন সাপটা। কি মনে করে বাড়ি ফিরলেন। এসে দেখলেন তার বাবা নিয়াজ উদ্দিন ঘোড়া নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছেন। তিনি জরিমন কে খুঁজে না পেয়ে বেরিয়ে আসছিলেন তখনই চোখাচোখি হলো পিতা-পুত্রের। ছেলে ব্যাগে কি ছিলো নিয়াজ উদ্দিন বুঝতে পেরে কিছুটা সরে দাঁড়ালেন। লুৎফর রহমান হেসে বললেন, ‘আব্বাজান ভয় পেয়েছেন?’ নিয়াজ উদ্দিনের চোখে মুখে আগুন। তিনি ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বৌমাকে পাওয়া যাচ্ছে না।’ লুৎফর রহমান ব্যাগ ফেলে রান্নাঘরের ভিতর ঢুকে জরিমনকে কোলে তুলে বারান্দায় জলচকিতে শুইয়ে দিলেন। মুখে জল ছিটিয়ে দিলেন। জরিমনের জ্ঞান ফিরেছে। চোখ খুলে জরিমন বাইরে পড়ে থাকা ব্যাগ থেকে সাপটি বের হওয়া দেখে আবার অজ্ঞান হয়ে গেলেন। লুৎফর রহমান তার বউকে আবার সেবা দিতে লাগলেন। জরিমনকে দেখতে তার শ্বাশুড়ি হাফিজন নেছা এসেছেন। শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরলেন জরিমন। নালিশের সুরে বললেন,’আম্মা আপনার ছেলে সাপের সাথে রাত কাটায়, সাপের সাথে তার সব প্রেম। আমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন আমি ভয়ে মরে যাবো আম্মা।হাফিজন বুঝলেন তার ছেলের সমস্যাটা অনেক প্রকট হয়েছে। তিনি বললেন, ‘সাপ হয়ে আসা সে সাপ নয়, হয়তো অন্য কিছু।’
লুৎফর রহমান তাদের কথা শুনে বললেন, ‘সত্যিই আম্মা সে সাপ নয় একজন রুপসী নারী যার রুপ দেখে আমি পাগল ছুটে হয়ে যাই তার কাছে। সে তার রাজ্যে আমাকে নিয়ে যায়।
হাফিজন নেছা ছেলেকে কাছে বসিয়ে ঝাড়ফুঁক করে যাচ্ছেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, তার বউয়ের ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তিনি বললেন, ‘এত টাকা পয়সা থেকেও আমার ছেলের চিকিৎসার যখন উন্নতি নেই তখন তোমাকে বুঝতে হবে বৌমা।’ তিনি ছেলের বউর উদ্দেশ্যে আবারও বললেন, ‘মেয়েদের ওপর জ্বীন ভর করে আর ছেলেদের ওপর ভর করে পরী।’