নির্বোধ
কৃষ্ণজন (মো: মজনুর রহমান)
মনটা খুব ফুরফুরে হয়ে উঠল আসিফের! অবশেষে টাকাটা পাওয়া গেল। মক্কেলটা খুব যন্ত্রণা করছিল। এমন খচ্চর সে জীবনে দেখেনি; টাকাটা খসাতে প্রায় তিন মাস লেগে গেল। আসিফ হাউজিং-এ চাকরি করে। একজন যথার্থ ভদ্রলোক হিসেবে সবর্দা চলার চেষ্টা করে। তার একটাই আফসোস! এখনো ঢাকায় বাড়ি করতে পারেনি। উপরিটা যদি ঠিকমতো না কামাতো, না জানি কী হতো? আসিফ উপরিকে ঘুষ মনে করে না। এটা হক। এটাকে বলা যায় উৎসাহ মানি। এটা এখন স্বীকৃত ব্যাপর। তার মতে- কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেলে বেতনটা হল ঐ লোকের প্রতি প্রতিষ্ঠানের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ। আয়ের মূল উৎসই হল প্রতিষ্ঠানের সাথে দায়বদ্ধ মক্কেলদের থেকে যত পারা যায় উপরি আদায়। মক্কেল প্রতিদিন এসে কান্নাকাটি করত-
ভাই টাকা পামু কই? এই বাড়িটা ছাড়া আমার আর কিছু নাই! ইত্যাদি ইত্যাদি।
আসিফের একটাই কথা, টাকা না দিল মনে করবেন বাড়িটাও নাই।
ঈদটা ভালই হবে মনে হচ্ছে! ভাবতে ভাবতে পাঙ্খা হয়ে গেল মন। ব্যাগে দুই লাখ টাকা! একটাও সিএনজিও পেল না, মাথাটা গেল গরম হয়ে! রাত বাড়ছে, বাধ্য হয়ে বাসে উঠল। নেমেই রিক্সা পেল, মনটা ভাল হলো আবার। কিন্তু আজ বুঝি কুফার দিন! বাড়ির কাছে আসতেই রিকশার চেইন ছিঁড়ে গেল। সময় নষ্ট না করে সে হাঁটা শুরু করল।
একটা লোক ঝাপটে ধরেছে! বুঝতে বুঝতে অনেক দেরী হয়ে গেল। ছুরির আঘাতে কোঁকিয়ে উঠল ব্যাথায়। শক্তিশালী একটা হাত তার গলা চেপে ধরেছে, ব্যাগটা ছিনিয়ে নিল কেউ!
ছুরি আঘাত নিয়ে কোনরকমে ফার্মেসিতে, ড্রেসিং করেই থানায়। মামলার দায়িত্ব দেয়া হলো এস.আই মান্নানকে।
মান্নান আসিফকে বলল,
তাহলে খরচপাতি দেন কিছু।
আসিফ আকাশ থেকে পড়ল! খরচপাতি মানে?
মান্নান বলল, ভাই বোঝেন না কেন? সামনে ঈদ, টাকা-পয়সার দরকার, আপনার এতো টাকা উদ্ধার করে দিব, কিছু খরচপাতি করবেন না?
আসিফ একটা এক হাজার টাকার নোট বের করলো।
বলল, ভাই আমার কাছে আর নাই, টাকা উদ্ধার করতে পারলে আরো দেবো।
প্রচণ্ড বিতৃষ্ণা নিয়ে থানা থেকে বের হলো। ফিরতে ফিরতে ভাবলো, দেশটা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে? সবাই করাপ্টেড! একদিকে গুণ্ডা-সন্ত্রাসী ওপর দিকে পুলিশ! এদের কাছে মানুষ সব জিম্মী হয়ে পড়েছে! সব কুত্তার লেজ! কোনদিনই সোজা হবে না! উঠতে বসতে লাথির উপর রাখলে যদি কিছু হয়। কুকুরের বাচ্চগুলিকে গুলি করে না মারতে পারলে দেশে শান্তি আসবে না কখনোই।
১ Comment
Congratulations