১৪৫ বার পড়া হয়েছে
মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ (২৭ নভেম্বর ১৯০০ – ২০ আগস্ট ১৯৮৬)
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর। শনিবার। বেলা একটা ১০ মিনিট। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পার্লামেন্ট। তুমুল হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্যে পাশ হলো বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এই শাসনতন্ত্র পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিষদ কক্ষ খুশির আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো যেন। ১১ এপ্রিল ১৯৭২ খ্রিঃ ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে গঠিত ৩৪ সদস্যের সংবিধান প্রণয়ন কমিটি প্রথমবার অধিবেশনে বসেন ১৭ এপ্রিল ১৯৭২ খ্রিঃ এবং ৬ মাস ২৮ দিনে ৭২ টি কার্য্ দিবসে ৭২টি সংশোধনী প্রস্তাব বিবেচনা করে ৭২ পৃষ্ঠায় একটি হাতে লেখা সংবিধান গনপরিষদে ১৭ তম অধিবেশনে দাখিল করেন যা গৃহিত হয় ৪ নভেম্বর ১৯৭২, কার্য্করের তারিখ নির্ধারিত হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ খ্রিঃ। এর পূর্বদিন ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭২ খ্রিঃ রাত ১০.৫০ ঘটিকায় বঙ্গবন্ধু সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নুতন একটি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন । হাতেলেখা সংবিধানটি আজও যাদুঘরে সংরক্ষিত হয় । আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ৩০লক্ষ শহিদ ও দুইলক্ষ মা বোনের সভ্রমহানি হোয়েছে।
গণপরিষদের খসড়া সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর তাদের আত্মার মাগফেরাত ও জাতির সুখ সমৃদ্ধি কামনা করে সংসদে মোনাজাত পরিচালনা করার জন্যে বঙ্গবন্ধু যাকে মনোনিত করেছিলেন তিনিই সংসদ সদস্য মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ। আজ ২৭ নভেম্বর তার জন্মদিন এবং ১২১বছর পূর্তি।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২খ্রিঃ পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস আর গুলিবর্ষনে কয়েক শত ছাত্রছাত্রি আহত এবং রফিক জব্বারসহ কয়েকজন মারা গেলেন। বিকাল ৩টায় পূর্ববঙ্গ বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন চলছিলো। এ সময় সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা, ঘটণাস্হল পরিদর্শন ও সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবীতে দাড়িয়ে গেলেন মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিসসহ কয়েকজন। কিন্তু না স্পিকার আব্দুল করিম ও সংসদনেতা নুরুল আমীন তাদের কথায় কর্ণপাতই করলেন না।
পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২খ্রিঃ হরতাল এবং বিকেলে ঢাকা মেডিকেলের সামনে ছাত্র পুলিশ সংঘর্ষ, সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত ৪, আহত কয়েকশত। দৈনিক আযাদ সম্পাদক ও সাংসদ আবুর কালাম শামসুদ্দিন সদস্য পদে ইস্তাফা দিলেন।
এদিন বিকেলে ৪.৪৫ মিনিটে সংসদে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ। দাবী করলেন শোক প্রস্তাব গ্রহনের। কিন্তু স্পিকার ও সংসদনেতা মূখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীনের ঘোরতর বিরোধীতায় সেটিও সম্ভব হলো না। কিন্তু যেটি সম্ভব হোয়েছিলো সেটি করতে তিনি একদিনও বিলম্ব করেন নাই। তিনি ১৯৫২ সালে ২২শে ফেব্রুয়ারি মুসলীম লীগ ত্যাগ করে প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দল গঠন করেন এবং নুরুল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। পরের দিন তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
মাওলানা তর্কবাগীশ ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আশির দশকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অবধি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন৷ পরবর্তীকালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগে যোগ দেন। মাওলানা তর্কবাগীশ পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯২২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী ঐতিহাসিক ‘সলংগা আন্দোলন’-এ নেতৃত্ব দান করেন, যার জন্য তাকে কারাভোগ করতে হয়। ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত বাংলার এম.এল.এ হিসেবে তৎকালীন ব্যবস্থাপক পরিষদে পতিতাবৃত্তি নিরোধ, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও বিনা ক্ষতি পূরেনে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
জাতীয় ইতিহাসের এই ব্যক্তিত্ব ১৯৮৬ সালের ২০শে আগস্ট ইন্তেকাল করেন। আজ ২৭ নভেম্বর ওনার জন্মদিন এবং ১২১বছর পূর্ন হলো। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে তার গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ মরহুম মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে “স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০০” (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। ওনার জন্যে আমাদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা প্রগারতরও হবে বাংলাদেশের ইতিহাস যতই গড়াতে থাকবে। রেজাউল করিম মুকুল, ২৭ নভেম্বর, ২০২১খ্রিঃ।
১ Comment
very good job;