শিমুল ফুলের বাসি মালা
[ নার্গিস পারভীন ]
পর্ব– ০১
২৩/১০/২০২২
রথীন শোভার বিয়েটা বুঝি আর টিকলো না– এক বুক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন পরেশ কাকা।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম – কেন, কি হয়েছে ওদের আবার?
পরেশ কাকা ঠোঁট দুটো বিস্তার করে মাথা নাড়লেন। আমি পুনরায় জানতে চাইলাম, কি সমস্যা বলুন তো কাকা?
–হুম, বলতে তো হবেই। আর কতকাল চেপে রাখা যায় বলো! অবশ্য আমি নিজেই আগে এসব কথা শুনিনি। জানো তো শোভা কত মুখচোরা; নিজের কষ্টে ভেঙ্গে যাবে তবু মুখ খুলবে না। এতদিন জানতাম মেয়েটা আমার বড়ো ভাগ্যবতী–রথীনের মতো এমন একটা জামাই আমার, রুপে গুনে বংশ মর্যাদায় একেবারে পারফেক্ট, অনন্য–
পরেশ কাকার কথা থামিয়ে বললাম– আমিও তো সেটাই জানি, কাকা। বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে ওর। জামাই তো খুবই বিনয়ী আর সজ্জন বলে মনে হয়।
কথাটা শেষ করে আরো কিছু জানার অপেক্ষায় উৎসুক নয়নে তাকিয়ে রইলাম পরেশ কাকার মুখের দিকে।
কাকা অন্যমনস্কের মতো বললেন, চলছিল তো বেশ ভালোই। তবে আজকাল ওরা যেন কেমন হয়ে গেছে! মেয়েটার একটার পর একটা অসুস্থতা যেন লেগেই আছে। জানতে চাইলেই বলে– চিকিৎসা চলছে, ঠিক হয়ে যাবে–
কিছুটা থেমে পরেশ কাকা আবার শুরু করলেন। ইদানিং মেয়েটার শরীরের কথা জানতে চাইলে ও যেন চুপচাপ হয়ে যায়, নিরবে কাঁদে বুঝতে পারি।
কাকার চাপা দীর্ঘশ্বাস যে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ উত্তপ্ত ও কষ্ট মিশ্রিত উপলব্ধি করে কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকলাম। তারপর জিজ্ঞাসা করলাম– রথীন তো বেশ ভালো ছেলে। যতটুকু দেখেছি ওদের সম্পর্ক বেশ মধুর মনে হতো–
বিনয় কাকা বললেন,– হুম, কিন্তু সেদিন রথীনের ফোন আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। পরক্ষণে শোভা মাকে ফোন দিলাম। ও বিশেষ কিছু বলল না। তবে চাপা কান্নাটা আন্দাজ করতে পারছিলাম।
আমি বললাম,– কাকা, আমরা দুজনে শোভার শ্বশুরবাড়িতে যাই। ওখানে দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে কথা বললে হয়তো সমস্যার সমাধান হতে পারে।
সেইমতো পরের দিন শোভা শ্বশুরবাড়ি কেশবপুর হাজির হলাম। শোভাকে স্বাভাবিক মনে হলেও রথীনকে বেশ স্বাভাবিক মনে হলো না। যেন এড়িয়ে চলে যেতে চাইলো। সেভাবে আমাদের সাথে বাক বিনিময়ও হলোনা।
রথীন ঘরে শুয়ে আছে দেখে আমি বিনা অনুমোদনে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। রথীন উঠে বসলো। আমি কিছুই জানিনা এমন ভাবখানা করে বললাম,– জামাইবাবু, আপনি চুপচাপ কেন, মন খারাপ মনে হচ্ছে?
রথীন আমার দিকে না তাকিয়েই একটা চাপা শ্বাস ছেড়ে মাথা নাড়লো–না সূচক।
অগত্যা শোভা দিদি ভাইকে ডাক দিলাম। শোভা এলোনা, আসছি বলে নিজের কাজে ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করল।
এভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেল চুপচাপ বসে।
এদিকে শোভার মেয়েটাও মাঝে মাঝে এসে উঁকি মেরে আবার বাইরে চলে যাচ্ছিল। অগত্যা শিমুকে কোলে তুলে বিছানায় পুনরায় এসে বসলাম।
চলবে…
________________________________
লেখক পরিচিতি:
জন্মস্থান : শ্যামনগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ভারত।
বর্তমান নিবাস : হাটুদেওয়ান, পূর্ব বর্ধমান, ভারত।
১ Comment
very good job; congratulations