নারী দিবসের স্বরূপ
তসলিমা হাসান
০৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এই উপলক্ষে পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উচ্চারিত এবং আলোচিত হচ্ছে এই বিশেষ দিনটির তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তা।
মূলত ফেমিনিজম-এর চেতনা থেকেই নারী দিবস প্রতিপালনের আবশ্যকীয়তা অনুভূত হয়।
নারীর প্রাপ্য সম্মান, যোগ্যতার মূল্যায়ন ও সমঅধিকার সুনিশ্চিত করার বিষয়ে সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা সৃষ্টি এই দিবসের মূল লক্ষ্য। দীর্ঘদিন বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও বাস্তব চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে , নারীর সকল অধিকার আদায় করার বিষয়টি এখনো খুব বেশি মসৃণ হয়নি। নারীর অধিকার সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হতে হবে তার পরিবারে । একজন কন্যা সন্তানের পরিপূর্ণ নারীরূপে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও প্রকাশে পরিবারের অভিভাবক ও অন্যান্য সদস্যদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি , স্নেহশীল ও যত্নশীল আচরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নারীরা প্রথমেই লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হয় তার মাতৃ জঠরে অবস্থানের সময় থেকেই। জন্মদাত্রী মা যখন পরম মমতায় ,সীমাহীন শারীরিক কষ্ট মেনে নিয়ে তিলে তিলে শিশুটিকে দেহের অভ্যন্তরে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে থাকেন তখন তার পরিবারের একটি অলিখিত দাবি সৃষ্টি হয় যে, মা যেন একটি পুত্র সন্তান জন্মদান করেন।
এমনকি অশিক্ষিত পরিবার তো বটেই অনেক তথাকথিত প্রগতিশীল সচ্ছল প্রতিষ্ঠিত পরিবারও এই সামন্তবাদী চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। কন্যাশিশু জন্ম নেয়ার পরেই শুরু হয় তার প্রতি বৈষম্য, অযত্ন ,অবহেলা। কিশোরী বেলায় সঠিক পরিচর্যা ও সহযোগিতার অভাবে অনেক মেধাবী, প্রতিভাময়ী মেয়ে তার স্বপ্ন কে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়।
পরবর্তীতে বাল্যবিবাহ, অসুস্থতা, নিরাপত্তাহীনতা ও পরনির্ভরশীলতার গ্লানিতে কাটে তার যাপিত জীবন। সুখ- শান্তি ,ইচ্ছা-অনিচ্ছা, বিনোদন এমনকি ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ও তাদের অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়।
ইদানিং কিছু পরিবর্তন হয়তো ঘটছে কিন্তু তা উল্লেখযোগ্য নয় বলা চলে।
নারীর পিছিয়ে পড়ার জন্য কোন ধর্মই মূলত দায়ী নয় , দায়ী হচ্ছে সমাজের মানুষগুলোর পশ্চাতপদ মানসিকতা।
পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র কে একত্রে নারীর উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক্ষেত্রে নারীদের নিজস্ব দায়িত্বও রয়েছে। পরিবারের পুত্র সন্তানদের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা শেখাতে পারেন কিভাবে নারীদের সম্মান করতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়। নারীরা অন্য নারীদের সাথে নিজেদের সম্পর্কের বন্ধন শক্তিশালী করতে পারেন।
পারস্পরিক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করতে পারেন। হয়তো এই শক্তি দিয়ে দূর করা যাবে যৌতুকের বলী, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি ও অন্যান্য সহিংসতা।
০৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের বেগুনি রং সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রতীক। এই রশ্মির মতই শক্তিশালী হয়ে উঠুক প্রতিটি নারীর পার্থিব অস্তিত্ব।
প্রকৃতির নিয়মে জীবনাবসানের পরও নারী অমর হোক তার ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তায়, ত্যাগে, ভালোবাসায় ও মমতায়।
বিশ্ব নারী দিবসে সকল নারীর জন্য রইল ভালোবাসা ও শুভকামনা।
তসলিমা হাসান
টরেন্টো, কানাডা।