নারীর কর্মসংস্থান বেড়েছে:
গত ১১ বছরে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারীর সংখ্যা বেড়েছে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার জন। কর্মসংস্থানের সংখ্যাগত দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় বাড়ছে চার গুণেরও বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশে প্রতি বছর নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় ছয় শতাংশ হারে। আর পুরুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার দেড় শতাংশ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে নারী কর্মসংস্থান ছিল এক কোটি ১৩ লাখের মতো। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জরিপে এই সংখ্যাটি পাওয়া গেছে এক কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার জন।
৯০ দশকের পর থেকেই নারী অগ্রগতির শুরু বাংলাদেশে। পরের দশক থেকে গতিটা আরও বাড়ে। এরই মধ্যে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষায় মেয়েরা ছাড়িয়ে গেছে ছেলেদের আর উচ্চ মাধ্যমিকেও মেয়েরা ছেলেদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তবে চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েরা এখনও তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে যদিও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, এই খাতেও পার্থক্যটা কমে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের এক বিস্ময়ের নাম। রক্ষণশীল বাঙালি সমাজে তিন দশক আগে কল্পনা করা না গেলেও এখন বিচারক, সচিব, সেনা কর্মকর্তা, প্যারার্টুপার, বিজিবির সৈনিক, পুলিশের এসপি, ট্রাফিক সার্জেন্টসহ সব ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা রয়েছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন সারা বিশ্বই। জাতিসংঘও বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবেই মানে।
অবশ্য নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির এই হার প্রতিষ্ঠানিক খাতের তুলনায় অপ্রতিষ্ঠানিক খাতেই বেশি। কর্মসংস্থানের মধ্যে ৬০ শতাংশই আবার কৃষি ক্ষেত্রে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের মধ্যে দেশের পোশাক খাতে নারীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তবে সব খাতেই তাদের পদচারণা বাড়ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে বিপণিবিতান জুড়ে রয়েছে নারীরা। রাজধানীর কোনো কোনো বিপণিবিতানের কর্মচারীদের শতকরা ৭০ জনই নারী। নারীর কর্মসংস্থানের বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে কল সেন্টারগুলোতে।
আবার বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে ক্ষুদ্র শিল্পও গড়ে তুলেছেন অনেক নারী। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি এমন অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে রাজধানী জুড়ে। ই-কমার্স বা অনলাইন ভিত্তিক পণ্য বিক্রি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে অনেক নারীর। পাঁচ বছর আগেও যেসকল খাতে নারীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়নি, সেসব খাতে এখন নারীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
নারীদের কর্মসংস্থান হয়েছে গণপরিবহন খাতেও। বাস চালকের আসনে চলতি বছরই প্রথম নারীদের দেখা গেছে। পুরুষের চাইতে নারীদের ধৈর্য ক্ষমতা বেশি। নারীরা অনেক সময় ধরে কাজ করতে পারে বলে একজন নিয়োগকর্তা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘কাজের মধ্যে পুরুষের মনযোগ নষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকলেও সেদিক থেকে এগিয়ে আছে নারীরা।’ এছাড়া পুরুষের চেয়ে নারীদের চাহিদা কম। তুলনামূলক কম বেতনে নারী শ্রমিক পাওয়া যায়। এ সকল যুক্তিতেই নারী শ্রমিক বেশী নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে (এলএফএস) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এক তথ্যে বলা হয়েছে, দেশে মোট এক কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল এক কোটি ৭৮ লাখ। ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের উচ্চপদেও নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে চোখে পড়ার মতো। ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় সারাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ১১ হাজার ২৮২ জন। যার এক তৃতীয়াংশ নারী।
এর আগে ৩২ তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় পুরুষের তুলনায় এগিয়ে ছিল নারীরা। ৭৫২ জন পুরুষের বিপরীতে চূড়ান্ত সুপারিশ তালিকায় নারীর সংখ্যা ছিল ৯২৩ জন। যা শতকরা হিসেবে ৫৫.১০ শতাংশ। ৩৩ তম বিসিএসে চূড়ান্ত সুপারিশ তালিকায় নারীর সংখ্যা ছিল ৩৮.২৬ শতাংশ। ৩৪ তম বিসিএস এ ৩৫.৬২ এবং ৩৫ তম বিসিএস এ ২৭.৯২। কাজী রফিকুল ইসলাম