অহম-অবনীর পিতা-মাতাকে নিয়ে কিছু কথা:
দিলারা হাফিজ
যে আমার অব্বসোনা, সে এখন পিতৃদেবের
ভূমিকায় অচল পাহাড়।
বৌমা ফারজানা আজাদ তুলি,
অহম অবনীর মা হিসেবে ‘স্বর্গাদপি গরিয়সী’।
গতকাল ছিলো অব্যয়ের সিটিজেনশিপের পরীক্ষা।মাল্টিপুল চয়েসের এসব পরীক্ষা তো ওদের কাছে কিচ্ছুটি নয়, বুঝি।
কিন্তু বঙ্গ মায়ের কাছে পুলসেরাত পার হবার মতো ঘটনা পরম্পরা।
যাক,বেশ ভালোভাবেই তরী ভিড়েছে ঘাটে।মা তুলি তো ২০১৮ সাল থেকে সিটিজেন।
তাদের প্রথম সন্তান অহমসোনা ২৫ দিন বয়সে এদেশের কানাডিয়ান নাগরিক।
আমার আলস্যপ্রবণ সন্তানটির সন্তান অহমসোনা শেষ পর্যন্ত কেক কেটে বাবাকে কানাডিয়ান নাগরিক হিসেবে উইশ করলো, পাশে ছিলাম আমিও।সেসব নিয়ে উড়াল দিগন্তে অতীতচারী হয়ে পড়লাম কিছুক্ষণ।
***কবি রফিক আজাদের মতো হুবহু মেদুর ও মধুর এক আদল নিয়ে জন্মেছে আমাদের সর্বশেষ সন্তান অব্যয় আজাদ।
কবি পিতার অনেক বৈশিষ্ট্য যেমন পেয়েছে তেমনি মায়েরও কিছু কোমল অনুভূতির সংস্পর্শে ছোট এই সন্তানটি আমাদের বড়ই স্নিগ্ধ ও গীতিময়।
বাবার মতোই সে বন্ধু বৎসল ও গীতল।দুধভাত ছাড়বে তো বন্ধু ছাড়বে না।
কত দ্রুত বন্ধুদের দিকে সাহায্য ও সেবার হাত বাড়ানো যায়,কেবলি সেসব চিন্তায় মস্তিষ্ক তার ভারানত, হৃদয় উৎসারিত সহমর্মিতার শত ধারায়।
রফিক আজাদের মতোই বন্ধুদের আড্ডার সে মধ্যমনি।তাকে ছাড়া আড্ডা জমে না। বাবার মতো উইটি কথাবার্তায় পটু।
বাবার মতোই দক্ষ সংগঠক।
কিছুদিন আগেই স্বনামধন্য একটি আইটি কোম্পানীর ম্যানেজার হলো,এক/দেড় বছরের ব্যবধানে এবার সে হলো ডিরেক্টর।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোম্পানীর পক্ষে সে এখন চাকুরির নিয়োগকর্তা।সে যখন চাকুরি প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেয়, বিস্ময়ের সঙ্গে অপলক তাকিয়ে থাকি, তার কথাবার্তা শুনি নিবিড় শ্রবণে—আমার সেদিনের ছোট্ট অব্যয় কত বড় হয়ে গেলো দেখতে দেখতে।
তারও সংসারে দু’জন সন্তান, পরিবারকে এত মমতা আর যত্নে লালন পালন করে যে,দেখে অভিভূত হয়ে যাই।নিজ হাতে কত কাজ করে সে। কিছুতে ‘না’ নেই।
কোমল চোখে তাকায় এই পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী,জীব ও প্রকৃতির প্রতি।
তৃতীয় শ্রেণীতে পড়বার সময় থেকে ভালো ছড়া লিখতো।
সে সময়ে লুৎফর রহমান রিটন স্বতপ্রণোদিত হয়ে তার পত্রিকায় ছেপেছে তার বেশ ক’টি ছড়া।
হাতে লিখে পত্রিকা বের করেছিলো কয়েকটি সংখ্যা।
কিন্তু সেই সময়ে কবি পিতার নিরুৎসাহের কারণে ছড়া লেখার হাতটি গুটিয়ে নিয়েছে। তবে ‘সিনোফসিস’নামে বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্র্যান্ডের দল গঠন করেছিলো, সেই দলের জন্যে গান লিখতো সে নিজেও।
লেখালেখির চর্চা বন্ধ হয়ে গেলো বলে বায়না ধরলো—-মা, আমাকে ড্রাম কিনে দিতে হবে।
সৃজনশীলতার কোনো না কোন দিক খোলা রাখতে হবে তো। কাজেই কিনে দিলাম তাই।
চমৎকার বাজাতো সে।রবীন্দ্রসঙ্গীতেও দীক্ষা নিলো কিছুদিন।
‘সিনোফসিস’এর ব্যানারে বেশ ক’টি শো করেছে স্কলাসটিকার ছাত্রবস্থায়।
ওদের স্কুলের এক শিক্ষক ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তার জন্যে সিনোফসিসের ব্যানারে বড় একটা শো এ্যারেঞ্জ করে স্যারের সুচিকিৎসার জন্যে টাকা তুলে দিয়েছিলো বেশ বড় অঙ্কের।
আর্তের সেবা, নিরন্নের প্রতি দয়া,
মানবিকতার এই অঙ্গীকারের শিক্ষা পরিবার থেকে পেলেও আপনগুণে সে তাকে হৃদয়স্থ করেছে অতি অল্প বয়স থেকে।
এজন্যে পরমময়ের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ থাকি সব সময়।
এদেশে এসেও স্কলাসটিকার ক’জন বন্ধু নিয়ে সঙ্গীতের চর্চাটি অব্যাহত রেখেছে, তবে আপাতত ম্রিয়মান অবস্থায় আছে বৈশ্বিক করোনার কারণে।
নিজের চাকুরি-সংসার-সন্তানদের নিয়ে নানা কাজের পরে এদেশে প্রায় সকলেরই ত্রাহি অবস্থা।তারপরেও মা, ভাই,
বন্ধু,পাড়া প্রতিবেশি—সকলের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যে সে অনড়, অচল।
অব্যয়ের মর্মসহচরী আমাদের বৌমা তুলি টরন্টো ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করেছে। বর্তমানে সিআইবিসি ব্যাঙ্কে চাকুরিরত।
অতীতেও বাংলাদেশে তারা দু’জনেই ছিলো একই স্কুলের শিক্ষার্থী।
প্রেম-পরিণয়ে চমৎকার বোঝাপড়ার সংসার ওদের।
দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে, বোঝে—পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতায় বিশ্বস্ত অসাধারণ জুটি তারা।
এটাই সবচেয়ে বড় শান্তি আমার।
অহম অবনীর মা হিসেবে ‘স্বর্গাদপি গরিয়সী’ বটে।
আজ আমাদের অবনীসোনার বয়সেও চল্লিশদিন পূর্ণ হলো।অহমসোনাও ৩বছর ৪মাসের বিজ্ঞজন।
মা-বাবা তাদেরকে নিয়ে নায়াগ্রা প্রপাতের আনন্দ -উচ্ছ্বল জলের নাচন দেখাতে নিয়ে গেছে।
ওদের জন্যে আপনাদের আশির্বাদ কামনা করছি, বন্ধুরা।
আপনারা ভালো থাকুন,
নিরাপদে থাকুন।
২/১০/২১
নেভী ওয়ার্ফ, স্প্যাডাইনা
টরন্টো, কানাডা
১ Comment
very good job; congratulations.