১৮২ বার পড়া হয়েছে
দজ্জাল শ্বাশুড়ী
আফছানা খানম অথৈ
আবীর এম এ পাশ করেছে এখনো বেকার। চাকরীর জন্য বিভিন্ন পদে এক্সাম দিচ্ছে।কিন্তু চাকরী হচ্ছে না।বর্তমানে চাকরী হতে ঘুষ লাগে,হ্যালো হ্যালো লাগে। আবীরের এসব নেই বিধায় এখনো তাকে বেকার জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।এদিকে সংসারেও অভাব তাই সে টিউশনি করছে।কোন মতে দিনকাল যাপন করছে আবীর।একদিন আবীরের বাবাকে ঘটক হুজুত আলী বলল,
ভাইজান আমি সেই কখন থেকে আপনাকে খুঁজছি।
ক্যান হুজুত আলী?
আপনার ছেলের জন্য ভালো একটা সমন্ধ নিয়ে এসেছি।
কার মাইয়া?
মিয়া বাড়ির নজরুল মাস্টারের মেয়ে। বি এ পাশ চেহারা চুরুত ও খুব ভালো।
ওরা হলো বড় লোক।আমাগো মতো গরিবের লগে সমন্ধ করলে তাগো মান থাকব?তাছাড়া আবীর এখনো বেকার বিয়া কইরা বউরে কি খাওয়াইবো ?
ভাইজান আপনাকে এসব ভাবতে হবে না। আবীরের চাকরী, বিয়ের খরচ সব নজরুল মাস্টার দিবে।
হুজুত আলী আমি যৌতুক লইয়া ছেলের বিয়া করাইবো না।
ভাইজান এটা যৌতুক না।এসব তো খুশি হয়ে মেয়ের বাবা দিচ্ছে।আপনি তো আর চেয়ে নিচ্ছেন না।
তবুও হুজুত আলী আমার কাছে এসব অন্যায় বইলা মনে অয়।
ভাইজান নজরুল মাস্টারের খুব আগ্রহ আপনার সাথে সমন্ধ করার।আপনি রাজী হয়ে যান।মেয়েটা খুব ভালো। তাছাড়া আগ্রহের জিনিস ফেলে দেয়া ঠিক না।
আচ্ছা আমি ভাইভা দেহি।
ভাইজান যা বলার দুএক দিনের মধ্যে বলতে হবে। কারণ মেয়ের জন্য অনেক ছেলে এগিয়ে আছে।
আবীরের বাবা বাড়ি ফিরে বউয়ের সাথে পরামর্শ করলো।বউ বলল,
আপনি এসব বুঝবেন না।নজরুল মাস্টার কায়দা কইরা আমাগো পোলারে কিনবার চাইছে।তাছাড়া এমন বড় ঘরে আবীরকে বিয়া করান ঠিক অইব না। শেষে বউ আমাগোরে মান দিব না।গরীব বইল্যা দূর দূর কইরা তারাইয়া দিব।
আবীরের বাবা স্ত্রীর কথায় সাঁয় দিয়ে বলল,
হ্যাঁ বউ তুমি ঠিক কথাই কইছ।
আপনি ঘটককে না কইরা দেন। আমরা এত বড় ঘরে আবীরকে বিয়া করাইবো না।
ঠিক আছে বউ তাই কমুনে।
আবীরের বাবার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত বেকার ছেলেকে বিয়ে করাবে না।আগে চাকরী তারপর বিয়ে।তাই হুজুত ঘটকের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন মনে করলো না।কিন্তু হুজুত ঘটক থেমে নেই আটার মতো আবীরের বাবার পেছনে লেগে আছে।আবীরের বাবা কুদ্দুস আলী দোকানে বসে চা খাচ্ছে এমন সময় হুজুত ঘটক নজরুল মাস্টারকে নিয়ে তার সামনে হাজির হলো।নজরুল মাস্টার আগ্রহের সহিত সালাম দিয়ে আবীরের বাবার গলায় গলা মিলিয়ে কোলাকুলি করলো। দোকান ভর্তি লোকজন সবার জন্য চা’র অর্ডার করলেন।চা খতে খেতে নজরুল মাস্টার আবীরের বাবাকে বলল,
ভাইজান আজ থেকে আপনি আমার আরেক ভাই।আপনাদের সংসারের সকল দায়িত্ব আজ থেকে আমার।আবীর আমার ছাত্র,ছোট বেলা থেকে আমি তাকে খুব পছন্দ করতাম। আমি তাকে আমার একমাত্র মেয়ের জামাই করতে চাই।তার চাকরী-বাকরী সব কিছুর দায়িত্ব আমার।
মাস্টার সাব এখন তো বহুত নীতি কথা শুনাইলেন। বিয়ার পর এসব কথা মনে থাকবো তো?
থাকবে ভাইজান থাকবে।কারণ সব মানুষ এক রকম হয় না।আমি জানি আপনি কত কষ্ট করে আবীরকে মানুষ করেছেন।
তা ঠিক কইছেন।কিন্তু তা বিয়ার পর মনে থাকলে তো?
ভাইজান অবশ্যই থাকব। শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিগর। আমি একজন শিক্ষক হয়ে কি ভুল করতে পারি?কখনো না।আপনি রাজী থাকলে আজ জুম্মার পর মসজিদে বিয়ে হবে।
দোকান ভর্তি লোকজন এক বাক্যে বলে উঠল,
কুদ্দুস আলী তোমার ভাগ্য ভালো।মাস্টার সাহেব স্বইচ্ছায় তোমার লগে সমন্ধ করবার চাইছে।এতো তোমার জন্য সৌভাগ্য, না করার কি আছে রাজী অইয়া যাও।
সবার সাপোর্ট তার উপরের মাস্টারের আদিখ্যেতা কুদ্দুস আলীর মন গলে গেল।তিনি মাস্টারের মেয়েকে ছেলের বউ করতে রাজী হলেন।বলতে না বলতে মাস্টার বিয়ের আয়োজন কমপ্লিট করে ফেলল।মুঠোফোনে আত্মীয়-স্বজনকে মসজিদে আসার নিমন্ত্রণ করলেন।জুমার পর আবীর তারিন’র বিয়ে হলো।আবীর তারিন আজ থেকে দুজন স্বামী-স্ত্রী।মাস্টার খুব খাতির করে জামাইকে বাড়ি নিয়ে গেল।
পাড়া প্রতিবেশী মহিলারা বলে,
আবীরের মা তোমার ভাগ্য বালা।মাস্টার তোমার সমন্ধী অইল।
ভাবী মাস্টারের মাইয়া বইলা কথা।আমাগো মানলে তো?
ভাবী মানব মানব।সব মাইয়া খারাপ অয় না।।মাস্টার খুব বালা মানুষ।মাইয়া খারাপ অইব ক্যান।তই আমাগোরে মিষ্টি মুখ করাইবা না।
বলতে না বলতে আবীরের শ্বশুর চার কেজি মিষ্টি বেয়াই বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো।আবীরের মা সবার মাঝে মিষ্টি বিলিয়ে দিলেন।
নজরুল মাস্টার আবীরের আত্মীয়-স্বজনকে খুব খাতির করে খাওয়ালো। তারিন ও শ্বশুরকে খুব সম্মান করলো।শ্বশুর খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে আসল। স্ত্রী জিজ্ঞেস করলো,
বউ দেইখ্যা কেমন মনে অইল ?
মাস্টারের মাইয়া বইলা কথা খারাপ অইব ক্যান।
এহন এত গপ্প মাইরেন না।সময় অইলে বুঝবেন মাস্টারের মাইয়া কেমন।আমার কথাতো হুনলেন না।
থাক আগে বাগে বাড়তি কথা কইও নাতো।
আবীর ফ্যামিলির বড় ছেলে।তারা পাঁচ ভাই-বোন।বাকী দুভাই লেখা-পড়া করে নি।খেতে খামারে কাজ করে।তাদের ইনকামে সংসার চলে।দুবোনকে বিয়ে দিয়েছে সেই কবে।তাদের বাচ্চা কাচ্চা আছে।আবীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হেড টিচার পদে রিটেন পরীক্ষা দিয়েছিল কয়েক মাস আগে।যাক আবীরের ভাগ্য ভালো বিয়ের পর পর পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়।সে রিটেন পরীক্ষা পাশ করেছে।নজরুল মাস্টার সবাইকে মিষ্ট মুখ করালো।নজরুল মাস্টার জানে কাকে ঘুষ দিলে চাকরী হবে।তিনি সঠিক লোকের হাতে ঘুষের টাকা তুলে দিলেন।সময় মতো আবীরের এপার্টমেন্ট লেটার এসে গেল।সে এখন গভ:মেন্ট প্রাইমারী স্কুলের হেড টিচার।আবীরের নিজের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ি একই এলাকায়।আবীর অধিকাংশ সময় শ্বশুর বাড়িতে থাকে।মাঝে মাঝে এসে মা বাবাকে দেখে যায়।একদিন মা বলল,
আবীর বউরে একদিন আমাগো বাড়ি লইয়া আয় না।
আবীর হাসি মুখে উত্তর দিলো,
জ্বী হ্যাঁ মা নিয়ে আসব।
আবীর শ্বাশুড়ীকে কথাটা বলতেই,তিনি কটাক্ক করে বললেন,
আবীর তুমি কি বললে,আমার মেয়ে তোমাদের বাড়িতে যাবে?
কেনো মা,সমস্যা কোথায়?তাছাড়া সে আমাদের বাড়ির বউ।
তবুও সে যাবে না।কারণ তোমাদের এই নোংরা পরিবেশে আমার মেয়ে থাকতে পারবে না।
না থাকলে না থাকবে।তবুও আমার মা-বাবাকে দেখে আসতে হবে।এটা আমার অর্ডার।
আমার মেয়েকে অর্ডার করার তুমি কে?
আমি কে মানে, আমি ওর স্বামী।
আবীর আমার কথার উপর কথা বলবে না।আমার মেয়ে কখনো তোমাদের বাড়িতে যাবে না।
তাহলে সে কোথায় থাকবে?
কোথায় থাকবে মানে,তাকে নিয়ে আলাদা বাসায় উঠবে।
আলাদা বাসায় উঠলে আমি এত খরচ কোত্থেকে দেব?
কোত্থেকে দেবে মানে,তোমার চাকরীর টাকা কে খাবে?
আমার মা-বাবা কত কষ্ট করে আমাকে মানুষ করেছে। তারা খাবে।
তোমার মা-বাবা মানুষ করেছে।চাকরী ধরিয়ে দিতে তো পারেনি। আমরা টাকা দিয়ে চাকরী ধরিয়ে দিয়েছি।তানা হলে সারা জীবন বেকার থাকতে।এখন তোমার ইনকামের সব টাকা আমার মেয়ের পেছনে ব্যয় করবে,আর কারো পেছনে নয়।এটা আমসর অর্ডার”।
কথাগুলো বলে তিনি হনহন করে ভিতরে চলে গেলেন।
আবীর কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না।তারিন এসে বলল,
আবীর খেতে আস।
আবীর বলল,
আমার খিদে নেয় খাব না।
কি বলছ তুমি ভর দুপুরে না খেয়ে থাকবে?
তা হোক তবুও আমি খাব না?
কেনো খাবে না?
তুমি যখন আমাদের বাড়িতে যাবে না।তখন আমি তোমাদের বাড়িতে খাব কেনো?
আবীর তুমি ভুল বুঝছ আম্মু খারপ কি বলেছে।বরং ভালো বলেছে। সব টাকা যদি মা-বাবার পেছনে ব্যয় কর,তাহলে আমাদের ভবিষ্যত বংশধরের জন্য কি থাকবে?তাছাড়া আমি এখন একা না?
মানে।
মানে হলো,আমি মা আর তুমি বাবা হতে যাচ্ছ।
সত্যি।
হ্যাঁ সত্যি তুমি বাবা হতে যাচ্ছ।
বাবা হওয়ার কথা শুনে আবীরের মন ফুরফুরে মুরমুরে হয়ে উঠল।বউকে নিয়ে কিছু সময় আহলাদ করলো।
বাবা-মায়ের বাড়িতে আবীর আর আগের মতো এখন যাতায়াত করে না।শ্বাশুড়ির কথামতো বউকে নিয়ে আলাদা ভাড়া বাসায় উঠল।শ্বশুরের দেয়া ফার্নিচার আসবাবপত্রে ঘর ভর্তি।আবীর বউকে নিয়ে খুব হ্যাপি।মা-বাবার কথা তেমন একটা মনে পড়ে না।মন চাইলে দুএকদিন যায় আরকি।টাকা-পয়সা ও তেমন একটা দেয় না।অনেক দিন পর আবীর মা-বাবাকে দেখতে গেল। মা খুব অসুস্থ,আবীরকে দেখে বলল,
বাবা আবীর তুই আইছস।অনেকদিন তোকে দেখি না।একটু কাছে আয়তো বাপ ভালো কইরা দেখি।
আবীর কাছে গিয়ে বসলো।মা ছেলের মুখ ধরে বলে,
আবীর তুই আমাগো কথা ভুইলা গেলি।কত কষ্ট কইরা তোকে মানুষ করলাম।এখন আমাগোরে ভুইলা গেলি?ক্যানরে আমাগো কি দোষ অইল তোরে পেটে ধরা।
মা আমি তোমাদেরকে ভুলিনি। হেড টিচার বলে কথা, অনেক অনেক কাজ সময় পায় না।
তাই বইল্যা টাকা ও দিবি না।
কি করব মা,বাসা ভাড়া সংসারের খরচ দেয়ার পর হাতে আর টাকা থাকে না।
তাই বইলা সব টাকা বউয়ের পেছনে খরচ করবি?আমরা তোর কেউ না।টেকার জন্য ডাক্তার দেহাইবার পারছি না।আজ কদিন ধইরা বিছানায় পইড়া আছি।
বলতে না বলতে আবীরের মায়ের চোখ থেকে পানিয়ে গড়িয়ে পড়লো।মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে ছেলে বলল,
মা কেঁদো না,এ মাসের বেতন পেলে আমি তোমাকে বড় ডাক্তার দেখামু।
মাকে বুঝিয়ে আবীর বাসায় ফিরে আসল। এদিকে মায়ের আসুখ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল।মাস শেষ আবীর বেতন পেল।আবীরের শ্বাশুড়ি এখন আবীরের বাসায়।অধিকাংশ সময় তিনি মেয়ের বাসায় থাকেন।তিনি হাই প্রেসারের রোগী তার প্রেসার বেড়ে গেল।আবীর শ্বাশুড়ীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল।ডাক্তার এক গাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলো।শ্বাশুড়ীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর ব্যবস্থা পত্র ঔষধ পথ্যে আবীরের অর্ধেক টাকা শেষ।আর বাকী টাকা থেকে কিছু টাকা যখন আবীর মায়ের চিকিৎসার জন্য দিতে বলল,তখনি শ্বাশুড়ী রাগে আগুন হয়ে বলল,
কি বললে আবীর এক সপ্তাহ পর তারিনের ডেলিভারীর টাইম।এখন যদি তোমার মায়ের জন্য টাকা শেষ করে পেল,তখন টাকা কোথায় পাবে?বয়স হলে মানুষের রোগ বাড়ে। এসব রোগের চিকিৎসা হয় না।অযথা টাকা নষ্ট।এই দাও টাকা।
শ্বাশুড়ী জামাইর হাত থেকে টাকা কেড়ে নিয়ে মেয়ের হাতে দিয়ে বলল,
তারিন টাকাগুলো ডেক্সে রেখে দেহ্।
আসলে আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই স্বার্থপর।শুধু নিজের ভোগ বিলাস,আরাম আয়েশের কথা ভাবে।অন্যের কথা একটুও ভাবে না।যেমনটি করেছিল আবীরের শ্বাশুড়ী। নিজে বুড়া হয়ে চিকিৎসা করছে।আর আবীরের মায়ের বেলায় উল্টো পরামর্শ।একে বলে এক রোখা চাওয়া-পাওয়া প্রতিহিংসা পরায়ণতা।আবীরের মায়ের অসুখ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে।গরীব কুদ্দুস আলীর পক্ষে চিকিৎসা করা করা সম্ভব না।দীর্ঘদিনের জ্বর সিরিয়াস টাইফয়েড়ে রুপ নিয়েছে।ঔষধ পথ্য কিছুই ঠিক মতো চলছে না।কুদ্দুস আলী পল্লী চিকিৎকের কাছ থেকে জ্বরের জন্য নাপা টেবলেট এনে খাওয়াচ্ছে।কিন্তু এমন জঠিল জ্বর নাপাতে সারলে তো?
এদিকে আবীরের বউয়ের ডেলিভারী পেইন শুরু হয়।তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলল,
রোগীর অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। দ্রুত সিজার করতে হবে।তবুও বাচ্চা বাঁচানো রিক্স।
আবীরের শ্বাশুড়ী বলল,
ডাক্তার বাচ্চা বাঁচানোর দরকার নেই।আমার মেয়েকে বাঁচান।
ডাক্তার রোগীকে দ্রুত সিজারিয়ান কক্ষে নিয়ে গেল।ঘন্টা খানেকের মধ্যে অপারেশনের কাজ শেষ হলো।কিন্তু আবীরের বাচ্চা বাঁচল না।মরা ছেলে বাচ্চা হলো।এদিকে আবীরের মা রোগের সঙ্গে অনেক লড়াই করলো কিন্তু জিততে পারলো না।মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে বলল,
ওগো আবীর আসে নাই।সে কইছিলো আমারে বড় ডাক্তার দেহাইব।এখনো সে আসে নাই ক্যান।পোলাডারে খুব দেখছে ইচ্ছে করছে।আবীর আইতাছেনা ক্যান।
আবীরের বাবার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। টপটপ করে গড়িয়ে পড়লো।তিনি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন,
বউ কাইন্দ না।সময় মতন আবীর আইব।
ছেলেকে শেষ দেখা আর মায়ের হলো না।তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করলেন।সবাই ডুকরিয়ে কেঁদে উঠল।বাবা রাগ করে ছেলেকে খবর দিলো না।দাদী নাতী দুজনের একই দিন মৃত্যু হলো।দাদী-নাতী দুজনকে একই কবরের দাপন করতে আনা হলো।নাতীর দাপন শেষ।তখনি দাদীর লাশ এনে কবরের সামনে রাখা হলো।আবীর ভাই ভগ্নিপতিদের কাঁদে লাশ দেখে বুঝতে পেরেছে এটা তার মায়ের লাশ।সে খাটের কাছে ছুটে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে,
মা আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারলাম না।আমি পাপী, আমার পাপ কোন দিন মোচন হবে না, হবে না।সে খাটের সঙ্গে মাথা ঠুকে ঠুকে কাঁদছে।বাবা এগিয়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
আবীর কান্দিস না বাপ।এখন কাইন্দা কি অইব।একটা কথা মনে রাখিস।মা-বাবারে কষ্ট দিয়া কোন দিন সুখী অয়ন যায় না।এখন না কাইন্দা চল জানাজা পইরা তোর মায়েরে দাপন করি।
আবীর এক পলক মা’কে দেখে নিলো।তারপর জানাজা পড়ে একবুক ব্যথা নিয়ে মাকে দাপন করলো।আবীরের মতো অনেক শিক্ষিত স্টুপিড ছেলে দজ্জাল শ্বাশুড়ীর পাল্লায় পড়ে নিজের জন্মদাতাও গর্ভধারিণীকে ভুলে যায়।এরা আসল শ্বাশুড়ী নয়,এরা হলো সুবিধাভোগী “দজ্জাল শ্বাশুড়ী” শুধু তাই নয় এরা শ্বাশুড়ী নামের কলংক।
২ Comments
গল্পটিতে সমাজের ঘটে যাওয়া চিত্র , সুন্দরভাবে উপস্থাপন হয়েছে। লেখিকাকে অনেক ধন্যবাদ।
Congratulations