১৬৪ বার পড়া হয়েছে
দজ্জাল বউ
[আফছানা খানম অথৈ]
রাজু মাস্টার্স কমপ্লিট করে বড় একটা চাকরী পেয়েছে।পলি নামের এক মেয়ের সাথে সে রিলেশন গড়ে তুলে।বছর খানেক কেটে গেল তার রিলেশনের মেয়াদ। পলির বাবা বড় ব্যবসায়ী , এক মেয়ে দু’ছেলে। পলি সবার ছোট।সবেমাত্র অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হলো।এরই মধ্যে রাজুর সাথে প্রেমের রিলেশন গড়ে তুলল।একে অপরকে না দেখে থাকতে পারেনা।তাই দু’একদিন পর পর দু’জন হাওয়া খেতে বের হয়। বিভিন্ন জাগায় ঘুরাঘুরি তারপর নামী দামী হোটেলে ডিনার।এভাবে আর কত দিন।
সম্পর্কটা শক্ত করে বাঁধতে হবে। রাজু দেখতে শুনতে মন্দ না,ভদ্র, নম্র, সুদর্শন অনেক মেয়ে তার পেছনে ঘুরঘুর করছে।
কাউকে সে পাত্তা দেয়নি।কিন্তু শেষ পর্যন্ত পলি নামের মেয়েটি তাকে প্রেমের জালে বন্দী করলো। তবুও পলির ভয়, রাজু যদি অন্য কোন মেয়ের প্রেমের মায়াজালে…।
তাই ঘটা করে একদিন পলি বলে,
রাজু একটা কথা বলবো?
বলো কি বলবে?
ইয়ে… মানে….. ইয়ে ….।
মানে মানে করছ কেনো, কি বলবে সরাসরি বলো।
রাজু তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাস?
হ্যাঁ বাসি।
তাহলে চল বাপীর সঙ্গে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিই।
এত তাড়াহুড়ার কি আছে?
তাড়াহুড়া মানে, বিয়ে করতে হবে না।
তাই বলে এত তাড়াতাড়ি।
জান তুমি যদি আবার হারিয়ে যাও।
বারে কোথায় হারিয়ে যাব? হারিয়ে গেলে ও সমস্যা কোথায়, আমার পুরো ঠিকানা তোমার জানা।
তবু আমার ভয় হয়।
তো এখন কি করতে চাও?
বারে বাপীকে জানাতে হবে না, আমাদের ভালোবাসার কথা।
ঠিক আছে তুমি জানাও।
তুমি জানাও মানে, তোমাকে
বলতে হবে।
না বাপু আমি পারবো না, তোমার কথা তুমি বলো।
ওকে চলো বাপীর অফিসে। আমার ভালোবাসার কথা আমি বলবো।
তুমি শুধু সাপোর্ট দিবে।
ওকে চল।
একটা রিক্সা দেখে রাজু ডাক দিলো,
এই খালী।
ড্রাইভার এগিয়ে এসে বলে,
সাব আমারে কিছু কইলেন?
গুলশান ১ যাবে?
হু সাব যামু।
দু’জন রিক্সাই উঠে বসলো।দশ মিনিটের মধ্যে রিক্সা গুলশান ১ পৌছে গেল।ভাড়া দিয়ে ড্রাইভারকে বিদায় করলো।অতঃপর পলি রাজুকে নিয়ে বাপীর অফিসে অবস্থান করলো।পলির বাবা জনাব মাসুদ চৌধুরী টেলিফোনে ব্যবসায়ী পার্টনারদের সঙ্গে কথা বলছেন ব্যস্ত, পলিকে হাত ঈশারায় বসতে বললেন।
পলি রাজু দু’জন পাশাপাশি বসলো।মাসুদ চৌধুরী ফোন রেখে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলো,
মা মনি কি খাবে বল,চা না কফি?
বাপী আমি এখন কিছু খাব না। আগে রাজুর সঙ্গে পরিচয়, তারপর বাকী সব।
পলি রাজুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
রাজু উনি আমার বাপী মাসুদ চৌধুরী।
পরিচয় দেয়া মাত্রই রাজু ভদ্রভাবে সালাম দিলো।তিনি সালামের জবাব দিয়ে জানতে চাইলেন,
তোমার পরিচয়?
আমি রাজু আহমেদ। একাউন্টিং এ অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরী করছি।
ওকে থ্যাংকস। তো পরিবারে কে কে আছে?
মা-বাবা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। ভালোই তো চাকরীটা। তো আমার কাছে কি চাও।আমি তো বেকারদেরকে চাকরী দিই।
পলি রেগে আগুন হয়ে বলে,
বাপী তুমি যে কি, রাজু কি চাকরীর জন্য এসেছে?
তো কেনো এসেছে?
বাপী আমি রাজুকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।
তিনি মজা করে বলেন,
শুধু কি তুই ভালোবাসিস। রাজু বাসে না?
ওকে বাপী সেও বাসে।
তো সমস্যা কোথায়?
পলির মাথা রাগে একেবারে বোম হয়ে ফুলে উঠল।সে গজ গজ করে বলে,
বাপী তুমি কি সব যা তা বলছ।বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে হবে না।
এক্ষনই বিয়ে করবি?
বাপী তোমার সঙ্গে এ নিয়ে আর তর্ক করতে চাইনা।চলো রাজু চলো।
বাবার সামনে থেকে মেয়ে হন্ত দন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল।বাবা মিটি মিটি হেসে হেসে বলে,
মেয়েটার যে কি রাগ। কথায় কথায় রাগ উঠে।
কিছু বলতে গেলে সমস্য। অঘটন ঘটিয়ে তবে শান্তি।ভাবলাম পড়ালেখা শেষ হলে, তারপর বিয়ে,কিন্তু এক্ষণি তাড়াহুড়া।
ধৈর্যগুণ বলতে কিচ্ছু নেই।
তিনি চিন্তা করে দেখলেন, মেয়ের বিয়ে এক্ষণই দেয়া আবশ্যক।তানা হলে হিতে বিপরীত হবে।তাই টেলিফোনে দাওয়াত থেকে শুরু করে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া সব ঠিক করে বাসায় ফিরলেন।মেয়েকে খাবার টেবিলে ডাকতে গর্জে উঠে কড়া ধমক দেয়।
বাপী তুমি যাও তো, আমি খাব না।
কি বলিস, দু’দিন পর রাজুর সঙ্গে তোর বিয়ে। এখন না খেয়ে বডিকে শুকিয়ে কাঠ করলে, তোর এ রুগ্ন চেহারার দিকে রাজু কি ফিরে তাকাবে?”মাশআল্লাহ” রাজু অনেক হ্যান্ডসাম। ওকে আমার খুব পছন্দ।
রাজুকে বলেছি তার মা-বাবাকে নিয়ে আসতে। উনারা যেন বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে।
বাবার মুখে বিয়ের কথা শুনে মেয়ে হঠাৎ কেমন জানি নার্ভাস ফিল করছে
তাই আর কিছু না বলে খেতে বসলো।
এদিকে রাজু ভাবলেন গরীব রিক্সা চালক বাবা আর গৃহিণী মাকে এই হাই সোসাইটিতে নিয়ে আসলে তার মান সম্মান টিকবে না। শ্বশুর বাড়ির লোকজন আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব,সবাই তাকে হেয় ও ছোট করবে।তাই উনাদেরকে নিয়ে আসল না। শুধু তাই নয় জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলো না।মহা ধুমধাম করে পলি রাজুর বিয়ে হলো।রাজু পলিকে নিয়ে ফ্যামিলি বাসায় উঠল।
বিয়ে শাদীর ব্যাপার অনেক খরচা হয়েছে।এখন পকেট একেবারী খালী।বিয়ের সময় এক বন্ধুর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিলো।মাস শেষে টাকা পেলে দিয়ে দিবে।পলির বাবা শিল্পপতি তার উপরে একটা মাত্র মেয়ে। কালার টিভি ফার্নিচার, সোফা, ডাইনিং টেবিল, আর ও প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র দিয়ে মেয়ের বাসা একেবারে সাজিয়ে দিয়েছেন।অলঙ্কারাদি ও কম দেননি।পুরো দুই সেট, স্বর্ণও ডায়মন্ডের, আরো হরেক রকম সিটি গোল্ডের সেট।
তবুও পলিদের মতো বড়লোকের মেয়েদের টাকার অভাব কোন দিন ও পূরণ হবে না।এরা যত পায়, তত চাই।রাজু মাস শেষ মাইনে তুলল।বন্ধুর ধার করা টাকা দিতে হবে।তাই মা বাবার জন্য অল্প কিছু টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিলো।এরপর বন্ধুর টাকা শোধ করে বাকী টাকা নিয়ে বাসায় ফিরল।প্রতিদিনের তুলনায় আজ একটু লেট হলো।এরই মধ্যে নতুন বউ রেগে বোম।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো,আজ রাজুর জন্য দরজা খুলবে না।কারণ একটাই, সে এত লেট করল কেনো?
বলতে না বলতে আকাশ এসে কলিংবেলে টিপ দিলো।পলি শুনছে তবুও খুলছেনা।ঐ যে বললাম প্রতিজ্ঞা করেছে।কলিংবেল বেজে চলেছে।তবু ও পলি দরজা খুলছে না।এবার রাজু বাধ্য হয়ে মুঠোফোনে কল দেয়,পলি রিসিভ করে শুরুতে কড়া ধমক দেয়,
আজ বাইরে থাকবে। দরজা খুলবো না।
নরম সরে রাজু বলে,
জান, এসব কি বলছ, বাইরে কোথায় থাকবো।তাছাড়া নতুন বউকে ফেলে বাইরে থাকা যায়।প্লিজ জান দরজাটা খুলে দাও।
পলি গজ গজ করে কড়া ভাষায় বলে,
আগে প্রমিস করো,
আবার প্রমিস কেনো?
রোজ রোজ লেট করে যাতে বাসায় না ফের, তার জন্য।
ওকে জান প্রমিস করলাম। আর কখনো লেট করবো না।
এরপর পলি দরজা খুলে দেয়। রাজু ভিতরে ঢুকে ওয়াস রুমে গেল।এর ফাঁকে রাজুর বাবার ফোন আসে। মুঠোফোন বাজছে। দু’তিনবার বাজনার পর পলি ফোন রিসিভ করে। কিন্তু হ্যালো না বলে কান পেতে আছেন।রাজুর বাবা সাড়া না পাওয়াতে বলতে শুরু করলো।
হ্যালো বাবা রাজু কথা বলছিস না কেনো?কি হয়েছে তোর, অসুখ-বিসুখ করে নি তো।কিরে রাজু কথা বলছিস না কেনো?টাকা এত কম পাঠাইলি ক্যান। তোর মায়ের খুব অসুখ।ডাক্তার দেখাতে হবে।আর ও কিছু টাকা পাঠিয়ে দিস বাবা।
পলি কোন কিছু না বলে লাইন কেটে দিয়ে ফোন অফ করে রাগে বোম হয়ে বসে আছে।রাজু কিছুক্ষণ পর ফ্রেস হয়ে ওয়াস রুম থেকে বের হলো। পলির মুভমেন্ট ভালো না। মনে হয় মুখে গ্রহণ লেগেছে।রাজু সোহাগ করে বলে,
জান তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?মনে হয় পূর্ণিমার চাঁদে গ্রহণ লেগেছে।
এই সেরেছে, পলি কি আর থেমে থাকে, তখনি শুরু হলো কড়া কড়া ভাষা,ধপাধপ বলতে শুরু,
রাজু তুমি নাকি তোমার বাবা মায়ের জন্য টাকা পাঠিয়েছ?
হ্যাঁ পাঠিয়েছি,তো কি হয়েছে?
কি হয়েছে মানে,যা দিয়েছ ব্যস এখানে সমাপ্তি। আর কোন টাকা তোমার মা-বাবাকে দিতে পারবে না।
আজব তো,আমি টাকা না দিলে বাবা মা খাবে কি?
কি খাবেন মানে,উনারা কাজ করে খাবেন।
পলি তুমি এসব কি বলছ, উনারা কত কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে পেলে আমাকে মানুষ করেছেন।আর তুমি কিনা বলছ কোন টাকা দিতে পারবো না।কি সব জঘন্য কথা।
আমি এতকিছু বুঝিনা। আগামী মাস থেকে টাকা তুলে আমার হাতে এনে দেবে।যদি এর ব্যতিক্রম কর,আমি তোমার সাথে রিলেশন রাখবো না।
রাজু অনেক সাধনার পর পলিকে পেয়েছে।এখন বাবা মাকে কেন্দ্র করে রিলেশন ভাঙ্গা কি ঠিক হবে?গভীর মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগছে রাজু।একদিকে বউ, অন্য দিকে পিতামাতা কাকে রাখবে কাকে ত্যাগ করবে?তার ভিতরে মনুষ্যত্ববোধ জেগে উঠে বলে,
রাজু তুমি বিরাট ভুল করতে যাচ্ছ, মা বাবাকে ত্যাগ করলে পরকালে জাহান্নাম,জাহান্নাম,জাহান্নাম,।
রাজু আর পারছে না, অসহ্য যন্ত্রনা মনের ভিতর।কোনকিছু ভালো লাগছে না।মুঠোফোন হাতে নিয়ে অন করে গেম খেলতে সবেমাত্র সফটওয়ার ওপেন করলো।ঠিক তখনি বাবার ফোন আসলো।রাজু বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সে নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছে।আর এ সুযোগে সে চলে গেল বারান্দায়। ফোন রিসিভ করে বাবাকে সালাম দিয়ে বলে,
বাবা কেমন আছ? মায়ের শরীর কেমন?
কোনমতে আছিরে, তোর মায়ের শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না।বড় ডাক্তার দেখাতে হবে। হ্যাঁরে বাবা রাজু তোর শরীর ভালো তো? তোর কণ্ঠ,কথাবার্তা এমন লাগছে কেনো?
এক কথায় জবাব দিলো রাজু,
বাবা ওসব কিছুনা। সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি তো তাই গলার স্বর বসে গেছে।
ডাক্তার দেখাস নি?
বাবা ওসব কিছু না। সেরে যাবে চিন্তা করো না।
বাবা, মা, কি ঘুমিয়েছে?
হ্যাঁ রে ঘুমিয়েছে, তাছাড়া শরীর ও খুব খারাপ যাচ্ছে।
বাবা চিন্তা করোনা। আমি আগামী মাসে বেতন পেলে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেবো।মাকে বড় ডাক্তার দেখাবে কিন্তু।
ঠিক আছে দেখাবো,তো বাবা রাজু টাকা একটু বাড়িয়ে দিস।
দেবো বাবা দেবো। তুমি কোন চিন্তা করোনা।মায়ের দিকে খেয়াল রেখো।
বাবা রাজু তোর মা তোকে খুব দেখতে চাইছে। কবে আসবি বাড়ি?
ছুটি পেলে আসব বাবা।
ঠিক আছে বাবা রাজু, ফোন এখন রাখ, রাত অনেক হয়েছে শুয়ে পড়।তানা হলে শরীর খারাপ করবে।
ওকে বাবা রাখি, মায়ের দেখাশোনা যত্নাদি ঠিক মতো করো কিন্তু।ভালো থেকো বাবা। আসসালামু আলাইকুম।
বাবা ছেলের কথোপকথন শেষ। রাজু মুঠোফোন অফ করে সামনে পা এগিয়ে দিলো।ঠিক সেই মুহূর্তে তার পরির মতো বউটা তার পথ রোধ করে সামনে দাঁডাল।মুভমেন্ট ভালো না,চোখ দুটো উজ্জল লাল রঙ্গে রঞ্জিত,কোমরে কাপড় পেছানো,মনে হয় যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে এসেছে।ঠিক তাই হলো মুহূর্তে যুদ্ধ শুরু, পলি আঁডি পেতে সব শুনলো।রাজু যে কথাগুলো লুকাবে তার ও কোন উপায় নেই,পলি কড়া ভাষায় বলে,
তুমি আবার তোমার বাবার জন্য টাকা পাঠাবে?
ঘাড় নেড়ে সাঁয় দিলো রাজু,
হ্যাঁ পাঠাবো?
কেনো কেনো?
কেনো মানে, আমার মা অসুস্থ বড় ডাক্তার দেখাতে হবে।তাছাড়া তাদের খরচ লাগবে না।
লাগলে লাগবে, তাই বলে সব টাকা তোমাকে দিতে হবে?
তো কে দেবে?
কে দেবে মানে, উনারা আগে যেভাবে চলেছে এখনো সেভাবে চলবে।তুমি একটাকা ও পাঠাতে পারবে না।প্রত্যেক স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর বিয়ের পর স্ত্রীর সকল দায়িত্ব পালন করা। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা।আর তুমি কিনা নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে বুড়ো মা-বাবার জন্য সর্বস্ব্য বিলিয়ে দিতে চাইছ।তোমার মতো অপদার্থ স্বামীর সংসার আমি করবো না।এই আমি চললাম।
পরির মতো বউ তার উপর শিল্পপতির একমাত্র মেয়ে তাকে কি ত্যাগ করা বা ভুলে থাকা যায়। মন্দ আচরণ করলে ও তো বউ, জানের জান, প্রাণের প্রাণ, তাকে কি ভুলে থাকা যাই।মা-বাবা গোল্লায় যাক তাতে কি হয়েছে।যেমন করে হোক বউকে ম্যানেজ করতে হবে।এ যুগের কিছু কুশিক্ষিত স্টুপিডদের মতো রাজু মুহূর্তে মনুষ্যত্ববোধকে গলা টিপে হত্যা করে বউকে ফিরিয়ে আনতে ছুটে গেল।পলি সবেমাত্র সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো।এত রাতে কোথায় যাবে আকাশকে ভয় দেখানোর জন্য একটা প্ল্যান। কিন্তু আদর্শ বাবার আদর্শ ছেলে এত সব বুঝলো না।তাই বউয়ের প্রেমে পড়ে নিজের মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দিয়ে অনাদর্শ হয়ে গেল। আর তাই বউকে ডেকে আনতে গেল।
পলি রাজুকে দেখে গজ গজ করে চলে যেতে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।তখনি রাজু মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে বলে উঠল,
প্লিজ জান যেওনা।ফিরে এসো, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আজ থেকে তোমার কথা মতো সবকিছু হবে।
পিছন ফিরে পলি বলে,
সত্যি বলছ তো?
ওকে জান সত্যি।
প্রমিস করো আমার অর্ডার ছাড়া আর কোন কাজ করবে না।
ওকে জান।
শুধু ওকে বললে হবে না।কাজে পরিণত করতে হবে।
জান, বল কি করতে হবে।
প্রতি মাসের মাইনের টাকা আমার হাতে দিবে। বাজার সদাই থেকে শুরু করে সব কেনাকাটা আমি করবো।
ওকে জান তাই হবে।এবার বাসায় চলো।
রাজু পলি দুজন মিট হয়ে গেল।দুজন আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠলো।তারা খুব সুখী।
এদিকে রাজুর মায়ের অসুখ ধীরে ধীরে বেড়ে যেতে লাগলো।বাবা বাধ্য হয়ে ছেলের কাছে ফোন দিলো।রাজু পলি সোফায় বসে বসে টিভিতে স্টার ঝলসার সিরিয়াল দেখছে।মুঠোফোনে রিং বাজছে।দু’জনের টিভির দিকে মনোযোগ। তাই মুঠোফোনের বাজনা শুনতে পেলো না।
কি আর করা বাধ্য হয়ে বাবা ফোন রেখে দিলেন।এর পর থেকে বাবা ফোন করলে রাজু রিসিভ করতো না। শুধু তাই নয় মাসে মাসে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলো।এমনি ভাবে পার হলো কয়েক মাস । একটা কথা আছে না, সত্য কোনদিন চাপা থাকেনা।ঠিক তাই হলো । রাজুর বিয়ের খবর বাবা-মার কানে এসে ঠেকল।মা-বাবা দুজনে কেঁদে কেঁদে বলে,
বাবা রাজু এজন্য বুঝি তোকে এত কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছিলাম।এর প্রতিদান তুই এভাবে দিলি।হায়রে পোড়া কপাল তোর বুঝি কোনদিন পরিবর্তন হবে না।সারা জীবন পোড়াই থেকে যাবি।সেই থেকে দুঃখের ঘানি টেনে আসলাম যার ইতি এখনো শেষ হয়নি।
সবই কপাল বুঝলে,সবই কপাল।
তাদের মুখ দিয়ে আর কোন বচনবানী বের হলো না।চোখ বেয়ে পানি আর পানি।
সাগরের পানির চেয়ে চোখের পানির গভীরতা অনেক বেশী।সাগরের পানি সবাই দেখে।চোখের পানি দেখা যায় না। তাই এর পরিমাপ করা যায় না।এর গভীরতা যে কত ব্যাপক তা একমাত্র আল্লাহ পাক জানেন।
এদিকে রাজু প্রতিমাসের মাইনের টাকা তুলে বউয়ের হাতে এনে দেয়।বউ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে খরচ করে শাড়ি-চুড়ি থাকা সত্বে ও আরো কিনে আলমিরা ড্র ভর্তি….।
একে বলে অতিরিক্ত বিলাসিতা আর অপচয়।রাজু এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।ইদানীং মা-বাবার কথা ও মনে করে না। বর্তমান যুগের আনকালচার্ড স্টুপিড ছেলেগুলো সুন্দরী বউ পেলে মা-বাবার কথা ভুলে যাই।রাজুও সে দলের একজন।পরির মতো বউকে নিয়ে খুব মজে গেছে।হাসি আনন্দে মেতে থাকে সব সময়।
এদিকে গরীব বাবা-মায়ের দুঃখের অন্ত নেই।পেটে নেই ভাত, পরনে নেই বস্ত্র।মহা কষ্টে দিন কাটছে উনাদের।ইদানীং বাবার শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না।তবুও তিনি বসে নেই।বউয়ের শখের একটা পালিত ছাগল ছিলো।তিনি বাধ্য হয়ে ওটা বিক্রি করে পুরানো একটা রিক্সা কিনলেন।এটা চালিয়ে কোন রকমে সংসার চালান।তাও আবার নাইটে রিক্সা বাইতে যান।দিনে বাইলে লোকে বলবে, ছেলে এম.এ পাস বড় চাকরী করে, এরপর ও রিক্সা বাও ক্যান।ছেলের সম্মান রক্ষার জন্য বাবা রাতে রিক্সা বাইতে যান।দু’জনের বয়সের চাপ,তার উপরে বৃদ্ধ বয়সে পরিশ্রম,ছেলের দায়িত্বহীনতা, সব দুঃখ তাদেরকে জড়িয়ে ধরেছে।রিক্সা চালক রমিজ মিয়া অসুস্থ তবুও রিক্সা নিয়ে নাইটে বেরিয়ে গেলেন। স্ত্রীর জন্য টাকা যোগাড় করতে। তিনি খুব অসুস্থ খানা দানা বন্ধ। এমন কি পানি পর্যন্ত মুখে দেয় না।বড় ডাক্তার দেখাতে হবে।আশ পাশের মহিলারা খুব আফসোস করলো।এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রাজুর ছোটবেলার খেলার সাথী প্রিয় বন্ধু বাবলু। তার বেশী দূর লেখা পড়া করা হয়নি।ছোট বেলায় বাবা মারা যায়। এর পর সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। সে গ্রামের পাড়ায় মুদি দোকান করে ফ্যামিলি খরচ ও ছোট ভাই বোনদের লেখা পড়ার খরচ চালায়।ছোট বোন শহরে হোস্টেলে থেকে লেখা পড়া করে। কাল নাইটে আসবে।তাই চাচাকে আগাম বলতে এসেছে বোনকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু এসে একি দেখল,চাচীর অবস্থা ভালো না।বলতে গেলে শেষ পর্যায়ে, মুমূর্ষু অবস্থা।পরের ছেলে হয়ে করুণ দৃশ্য সহ্য করতে পারলো না।চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
এদিকে পাষণ্ড রাজুর বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ সেই বিয়ের পর থেকে। বন্ধু বান্ধব এলাকার কেউ ফোন করলে রাজু ফোন রিসিভ করে না বউয়ের ভয়ে।শুধু তাই নয় বউ যা বলে তাই করে।তাই বাবলু অন্য নাম্বার থেকে কল করে, রাজু ভেবেছিলো অফিসিয়াল ফোন, তাই সম্মানের সহিত সালাম দিয়ে ফোন রিসিভ করে বলে,
হ্যালো কে বলছেন?
অপর প্রান্ত থেকে করুন কণ্ঠে বাবলু বলে,
প্লিজ রাজু ভাই ফোন রাখিস না, আমি বাবলু।জানি আমার মুঠোফোন থেকে কল দিলে তুই কথা বলবি না।তাই অন্য নাম্বার থেকে কল দিলাম।তোকে আজ একটা দুঃসংবাদ দেয়ার জন্য। চাচির অবস্থা খুব খারাপ। যদি মাকে দেখতে যাস, তাহলে নাইটে চলে আয়।
বাবলু ফোন কেটে দিলো।রাজু হ্যালো হ্যালো বলে আরো খবর জানতে চাইল।কিন্তু সংযোগ স্থাপন হলো না।
অফিস শেষ করে তাড়াহুড়া করে বাসায় গেল।তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে নিলো।বউ শুনলে রেগে যাবে তাই সত্যকে লুকিয়ে বলে,
পলি আমি অফিসের কাজে সপ্তাহ খানেকের জন্য বাইরে যাচ্ছি। অফিসিয়াল কাজতো আরও বেশী টাইমও লাগতে পারে।তুমি ক’দিনের জন্য বাবার বাসায় চলে যেও।
ওকে জান যাব।
বউয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাজু নাইটের গাড়িতে রওয়ানা করলো।
এদিকে রমিজ মিয়া নাইটের যাত্রী টানার জন্য অপেক্ষা করছেন।
শীতের প্রথম সিজন অল্প অল্প শীত পড়ছে।রমিজ মিয়া ছাদর গায়ে জড়িয়ে গামছা দিয়ে মুখ ডেকে বসে আছেন।পরিচিত কেউ যাতে চিনতে না পারে।রাত প্রায় তিনটা এমন সময় একটা গাড়ি ষ্টেশনে এসে থামলো।যাত্রীরা নামতে শুরু করলো।
রাজু নেমে হন্ত দন্ত হয়ে রিক্সা খুঁজছে। এমন সময় দেখতে পেল ষ্টেশনের এক কোনে রিক্সায় ঘাপটি মেরে চাঁদর মুড়ি দিয়ে বসে আছে এক বৃদ্ধ। রাজু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
এই খালী, হাতিম পুর যাবে?
রমিজ মিয়া চোখ মেলে দেখে তার ছেলে রাজু, তাই দামা দামী না করে বলল,
হ্যাঁ যামু সাব উঠেন।
রাজু রিক্সায় উঠল।রমিজ মিয়া হ্যান্ডেলে চাপ দিলেন,রিক্সা এগিয়ে চলল।কিছুদূর যাবার পর রমিজ মিয়ার অসুস্থ শরীরটা আর চলছে না।তিনি থমকে যান।রাজুর ও তাড়াহুড়া তাই রমিজ মিয়ার পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে কড়া ভাষায় বলে,
এই বুড়া মিয়া রিক্সা চালাইতে পারেন না, তবুও এই বয়সে রিক্সা চালান কেনো?আপনার কি ছেলে মেয়ে নেই?
রমিজ মিয়া কোন বচন বানী পেশ না করে, অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার দিলো হ্যান্ডেলে চাপ।রিক্সা এগিয়ে চলল,কিছুদূর যাবার পর রমিজ মিয়ার অসুস্থ দেহটি থেমে যায়।রাজু আবার ও থাপ্পড় দিয়ে পূর্বের বাক্য পেশ করলো। রমিজ মিয়া কিছু না বলে আবার ও হ্যান্ডেলে দেয় চাপ।রিক্সা এগিয়ে চলল,কিছুদূর যাবার পর রমিজ মিয়া আবার থমকে যাই।রাজু আবারো থাপ্পড় দিয়ে পূর্বের বাক্য পেশ করলো।
তিন থাপ্পড় খাওয়ার পর রমিজ মিয়া আর থেমে থাকতে পারলো না।মাথার গামছাটা খুলে কেঁদে কেঁদে বলে,
অফিসার সাব আপনার মোবাইলের আলো দিয়ে দেখুন তো আমাকে চিনতে পারেন কিনা?
রাজু লাইট মেরে দেখে এতক্ষণ যাকে বুড়ো লোক বলে থাপ্পড় মেরেছিল।সে অন্য কেউ না তার জন্মদাতা পিতা।রাজু কি করবে, না করবে, তার মাথায় কোন কিছু কাজ করছে না।সে যে পাপ করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত সারা জিন্দেগী করলে ও শেষ হবে না।তবুও বাবার পা দুখানা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,
বাবা আমি কঠিন পাপী। আমাকে ক্ষমা করে দাও… দাও…দাও…।
বাবার পায়ের উপর মাথা ঠুকে ঠুকে কাঁদছে।বাবার চোখের জল ও থেমে নেই,অনর্গল ঝরছে।
ক’মিনিট পর রমিজ মিয়া চোখের জল মুছতে মুছতে বলে,
বাবা রাজু,আর দেরী করা যাবে না।বাসায় চল।তোর মায়ের অবস্থা ভালো না।
বাবা ছেলে দ্রুত গতিতে ছুটে গেল বাড়িতে। কিন্তু এসে একি দেখল বাড়ি ভর্তি লোকজন।রমিজ মিয়া এগিয়ে এসে দেখে তার স্ত্রী আর নেই, পরপারে চলে গেছেন।মহিলারা পাশে বসে চোখের জল ফেলছে আর আফসোস করে বলে,
রমিজ ভাই আপনি আইছেন,আরো আগে আইলেন না ক্যান?ভাবি আপনারে ছাইরা চিরদিনের জন্য চইলা গেছে।
রমিজ মিয়া স্ত্রীর এমন মৃত্যু সহ্য করতে পারলো না।হৃদয়ের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে চিৎকার করে বলে,
রাজুর মা তুমি একি করলে, আমাকে একা রেখে চলে গেলা।আমারে নিয়া গেলা না ক্যান।
আমারে এখন কে দেখবো।
এক চিৎকারে রমিজ মিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়লো।রাজু পাঁজাকোলা করে বাবাকে বিছানায় শোয়ালো।নাকে মুখে হাত দিয়ে দেখলো শ্বাস-প্রশ্বাস প্রবাহিত হচ্ছে না।তবুও দ্রুত গ্রামের হাট থেকে একজন ডাক্তার নিয়ে আসল।ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন,
রাজু সাহেব আপনার বাবা বেঁচে নেই।স্ট্রোক করার সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছেন।
উহু!কি দুঃখ, কি যন্ত্রণা রাজু মৃত বাবা মায়ের পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলছে,
বাবা, মা, তোমরা আমার উপর অভিমান করে এমনি ভাবে চলে গেলে?
হে খোদা আমি পাপীরে এটুকু সুযোগ দিলে না, বাবা মায়ের সেবা যত্ন করার,পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার।বিলাপ করতে করতে রাজু পাগল প্রায়।তখনি বাবলু বলে,
রাজু ভাই এখন কেঁদে কোন লাভ নেই।তাছাড়া মৃত মানুষকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে নেই।এতে চাচা-চাচির আত্মা আর ও কষ্ট পাবে।উঠ ভাই, চোখের পানি মুছে ফেল।উনাদের দাফন কাপন করতে হবেনা।
অনেক বুঝিয়ে পাড়া প্রতিবেশী সবাই মিলে রাজুর বাবা মায়ের দাফন কাপনের কাজ শেষ করলো।বাবলু অনেক চেষ্টা করলো রাজুকে ভাত খাওয়াতে। ভাত খাওয়া তো দূরের কথা রাজু একফোটা পানি ও মুখে দেয়নি।শোকে পাথর, বুক ফেটে যাচ্ছে,কাউকে দেখাতে পারছে না তার যন্ত্রণার গভীরতে কতটুকু?
সারাদিন কেটে গেল।রাতে মায়ের ঘরে বিছানা ঝাড়ু দিতেই বালিশের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো ভাঁজ করা একটা কাগজ।রাজু খুলে দেখে মায়ের হাতের লেখা চিঠি।
বাবা রাজু,
আমার আদর সোহাগ ও ভালোবাসা নিস।তোরা সুখে থাক এ প্রার্থনা করি খোদা পাকের কাছে।
বাবা রাজু তোর হাতে যখন আমার এ চিঠি পৌছবে তখন হয়তো আমি থাকবো না।তাই বুড়ো বয়সে দু’কলম লিখতে বসলাম।সেই ছোট বেলায় হাতে খড়ি শিখেছিলাম,আর কোনদিন কাগজ কলম হাতে নেইনি।এখন বুড়ো বয়সে তোর অতিতের কিছু স্মৃতি স্মরণ করে দেয়ার জন্য আবার হাতে খড়ি নিলাম।হ্যাঁরে রাজু তুই যখন আমার পেটে ছিলি তখন খুব নাড়া ছাড়া করতি।কোন কোন সময় খুব লাথি গুঁতা মারতি।আমি তখন উহঃ!আহঃ শব্দ করতাম।মা আমায় আদর করে রাশেদা না ডেকে রাশু ডাকতেন।মা বলতেন মা রাশু উহঃ আহঃ শব্দ না করে সবর মান,আল্লারে ডাক।কারণ মা হওয়ার ক্ষেত্রে সকল মেয়েদের এমন হয়।এবার বুঝবি মা হওয়ার যন্ত্রণা কি?এরপর তোর জন্ম হলো।আমরা আলেম ডেকে তোর নাম রাখলাম। হাসি আনন্দে ভরে উঠল আমাদের ঘর।তোর বয়স যখন ছয় মাস পূর্ণ হলো তোর খুব অসুখ করেছিল।দুধ মুখে দিলে খুব কেঁদে উঠতি।তোকে আমরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার একটা যন্ত্র বুকে বসিয়ে হাত পা চোখ মুখ ভালো করে দেখে নিলেন।তারপর কিছু ঔষধ লিখে বললেন,
এ ঔষধ গুলো নিয়ম মতো খাওয়াবেন।আপনার বাচ্চার প্রচুর পুষ্টিহীনতা।বাড়তি খাবার খাওয়াবেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
ডাক্তার সাব বাড়তি খাবার কি?
ডাক্তার বলল,
বুঝিয়ে বলছি শুনুন,
বাড়তি খাবার হলো বুকের দুধের পাশাপাশি, ডিমের কুসুম কলিজা,খিচুড়ি শাক সবজি,ফলমুল,এসব….।
ছয়মাস পূর্ণ হলে বাড়তি খাবার না খাওয়ালে বাচ্চা নিয়ম মাফিক বেড়ে উঠবে না।শুধু তাই নয় অপুষ্টিতে ভোগে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে।এরপর আমাদের দু’জনের পরিশ্রমের মাত্রা বেড়ে যাই। তোর বাবা রাতে রিক্সা বাইতেন।আমি নকশী কাঁথা সেলাই করতাম। এমনিভাবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তোকে সুস্থ রাখার জন্য বাড়তি খাবারের টাকা যোগাড় করতাম।এরপর শুরু হয় তোর পড়ালেখা।
হ্যাঁরে রাজু তুই যখন ফাইভ ক্লাসে ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি পেয়েছিলি।তখন হেড স্যার তোর বাবাকে ডেকে বলল,
রমিজ মিয়া রাজু আমাদের স্কুলের গর্ভ।তোমাকে স্যালুট, রাজুর পড়ালেখার খরচ ঠিক মতো চালিয়ে যাওয়ার জন্য।রাজু বড় হয়ে তোমার মুখ উজ্জল করবে।এখন না হয় একটু কষ্ট করলে পরে তো রাজার হালে থাকবে।এরপর তুই ম্যাট্টিক,আই. এ তারপর অনার্স মাস্টার্স এতদুর যেতে আমাদেরকে কত কষ্ট করতে হয়েছে, তার কিছু অল্প কথা বলে গেলাম।বাবা রাজু আমরা কম খেয়ে তোকে ভালো মতন খেতে দিতাম।তোর শরীর যাতে ভালো থাকে।নিজেরা ছেঁড়া কাপড় পরে তোকে সময় মতো জামা-কাপড় কিনে দিতাম।শুধু কি তাই কত বেলা যে উপোষ ছিলাম,তার হিসেব তোকে দিতে পারবো না।পেটের ভোগে যখন পেট মোচড় দিয়ে উঠত তখন সাদা পানি খেয়ে কোন রকমে ক্ষুধা নিবারণ করতাম।মাঝে মাঝে রোজা ও রাখতাম সংসারের খরচ কমানোর জন্য।এতসব কার জন্য করেছি তোকে মানুষ করার জন্য।আজ তুই মানুষ হয়ে কি করলি, মা বাবাকে ভুলে গেলি।যার ঋন সারা জীবন শোধ করলেও শেষ হবে না।
আর তুই কিনা তাদেরকে ভুলে বসে আছিস?হ্যাঁরে রাজু তুই বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করেছিস, তার জন্য আমাদের কোন অভিযোগ নেই।তোর বিয়ে,তোর বাসায়,তোর বউয়ের পাশে রিক্সা চালক রমিজ মিয়া ও তার স্ত্রীকে মানাবে না, তা মানছি।কিন্তু তাই বলে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলি?আমরা আমাদের সমস্ত সুখ বিলিয়ে দিয়ে, তোর সুখের কথা ভেবেছিলাম।আর তুই কিনা আমাদের সুখের কথা একটি বারের জন্য ভাবলি না। প্রত্যেক সন্তানের উচৎ ,”রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগীরা”। এই দোয়াটি পড়ে সর্বদা পিতা মাতার জন্য দোয়া করতে। আর শৈশবে পিতামাতা সন্তানদেরকে যেভাবে লালন পালন করেছে ঠিক বৃদ্ধাবস্থায় সন্তান, পিতা মাতাকে সেভাবে লালন পালন করতে হবে, এটা আল্লাহ পাকের নির্দেশ ।আর তুই কিনা সব দায়িত্ব এড়িয়ে বউকে নিয়ে রাজার হালে দিন কাটাচ্ছিস।হ্যাঁরে আরেকটা কথা,তুই তোর পরিশ্রমের টাকা আমাদের জন্য নাইবা দিলি,কিন্তু আমাদের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে দিলে তো পারিস।ঐ যে তোকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করেছিলাম, তার ভাড়া,আর তোর বাবা যে জন্মদিয়েছিল তার ভাড়া।
এ সামান্য কটা টাকা পাঠিয়ে দিলে তো তোর বাবাকে এ বৃদ্ধবয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে রাতে রিক্সা চালাইতে হতো না।ঐ টাকা দিয়ে কোন রকমে ভাত আর পানি কচলিয়ে খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতাম ঠিক আগের মতো।বাবা রাজু সবশেষে তোর প্রতি আমাদের কিছু কথা,আমরা তোকে লেখা পড়া শিখে ভুল করেছি।তুই তোর ছেলে মেয়েকে লেখা পড়া শিখিয়ে বড় অফিসার বানাস নি। যদি বানাস তাহলে আমাদের মতো বৃদ্ধ বয়সে না খেয়ে মরতে হবে।বাবা রাজু মনে রাখিস কিন্তু।হ্যাঁরে রাজু আমার শরীর ভালো না। আর বাঁচবো নারে, ভালো থাকিস।খোদা হাফেজ।
ইতি
তোর গর্ভধারিণী
রাশেদা বেগম রাশু।
চিঠিটা পড়ার পর রাজু বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে।কিন্তু এখন কেঁদে আর কি লাভ।সব মেয়ে ভালো না,আবার সব মেয়ে খারাপও না। তো ছেলেদের উচিত রিলশনের পূর্বে ভালো করে জানা শুনা করা।কিন্তু ছেলেরা সুন্দরী মেয়ে পেলে ভালো মন্দ যাচাই করে না।বলে সুন্দরী হলে চলবে।পলি তাদের দলের একজন।পলির মতো কুশিক্ষিত আনকালচার্ড স্টুপিড মেয়েদের কারণে আজ রাজুর মা-বাবার এ ভয়ানক করুণ মৃত্যু দৃশ্য, যা ইতিহাস হয়ে রইল।এরা রাজুর মতো ছেলেদের মিষ্টি কথায় বুলিয়ে বিয়ে করে, তারপর জঘন্য রুপ ধারণ করে।তখন এদেরকে ত্যাগ করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।আর রাজুর মতো শিক্ষিত স্টুপিড ছেলেরা তখন বাধ্য হয়ে মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।এরা আসল প্রকৃত আদর্শ বউ না,এরা হলো কু’শিক্ষিত আনকালচার্ড স্টুপিড, “দজ্জাল বউ”।
বিঃদ্রঃফেস বুকের ভাই বোনও বন্ধুরা আমি ছোট খাটো একজন বাস্তববাদী লেখক।বাস্তবতাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরা আমার কাজ।আজকের গল্পটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা।সবাই পড়বেন।আর যাতে এমন দৃশ্য আমাদেরকে দেখতে না হয়, সেদিকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবেন।
১ Comment
Congratulations