বৃষ্টি
বৃষ্টি আর ভালো লাগে না
এইসব বৃষ্টি আর ভালো লাগে না!
বিষন্ন লাগে, বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগে!
বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে না আগের মতো,
নিতান্তই লুকিয়ে পড়ি কোনো নিরাপদ স্থানে,
যেখানে বৃষ্টি আর আমায় ছুঁতে পারবে না।
বিষণ্ণতা আজকাল বড্ড জ্বালায় বৃষ্টি নামলে,
শুরু হয়ে যায় আহাজারি!
চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির কান্না শুনি।
অভিমানে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখি তাদের।
বৃষ্টিতে ভিজতেও আজকাল আর ভালো লাগে না!
বৃষ্টি কি সবার জন্যই রোমান্টিক হয়ে আসে? বলো…
জীবনে কত চাওয়া, না পাওয়ার হিসাব মিলাতে পারিনি!
বৃষ্টির জল গায়ে মেখে কষ্ট ভুলে থাকা যায় না,
না পাওয়া আক্ষেপ থেকে পালিয়ে বেড়ানো যায় না!
বৃষ্টি এসে সব না পাওয়াগুলো মনে করিয়ে দেয়।
আমি নির্বাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টিকে!
ঠোঁট যবেই ছুঁতে যায়, আমি বৃষ্টির জল মুছে ফেলি;
পকেটে থাকা রুমাল কিংবা টিস্যু দিয়ে!
কিন্তু চোখ যে ছুঁয়ে যায়,বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউ এর খেলা শুরু করে বৃষ্টি।
এ বৃষ্টি যেন আসেই আমায় হতাশ করতে!
জীবনের এতশত না পাওয়াগুলো থেকে অন্তত তোমায় যদি পেতাম,
তবে পৃথিবীর আর কোনো কিছু না পাওয়ায় আমি পরোয়া করতাম না–একদমই পরোয়া করতাম না।
কানাডা, ১৫-১০-২০২২
পার ভাঙা এই নদী
পার ভাঙা এই নদী
আমি নৌকা হতাম যদি,
ভাসিয়ে পাল, যেতাম তোমার কাছে।
লুকানো মনের কথা,
শতেক দুঃখ ব্যথা,
লুকিয়ে নিতাম ঠিক,
কেউ কিছু বলে পাছে।
আমি ডুবন্ত শুকতারা,
নেই আজ কোন পাহারা,
ভাসিয়ে দিতে, এমন কভু যদি,
আমার পার ভাঙা এ নদী।
তুমি দুঃখের হতে সাথী,
আমি যবে আনন্দে মাতি,
তুমি একলা রইতে আমার অপেক্ষায়।
আমি নাই ফেরার দেশে,
যেতেম যদি ভেসে,
এ সুখ ত্যাজি, কোন অসুখের আশে।
তুমি মনের হবে মাঝি,
অবহেলে কভু ত্যাগি,
এমন কভু গিয়েছিল নিরুদ্দেশ,
আমার কষ্ট লাগে বেশ যার নাই অন্ত, শেষ,
কেন যাবো তোমার সুখের দেশ।
আমি অচিন পুরের পাখি,
মনকে দিয়ে ফাঁকি,
আজ ভেসেছি না ফেরার দেশে।
কানাডা ১০-০৯-২০২২
তুমি শুধু তুমি
তুমি ছিলে আমার মহীরুহু,
আমার বটবৃক্ষ,
তোমার ছায়ায়,তোমার মায়ায়
আমি ছিলাম পরিতৃপ্ত।
তুমি ছিলে আমার আলোর মশাল,
তোমার হাত ধরে নির্ভয়ে হেঁটেছি,
আমি যে বহুকাল।
তুমি ছিলে আমার শ্রাবণের বারিধারা,
তাতে অবগাহন করে সিক্ত হয়েছে
আমার বসুন্ধরা।
তুমি ছিলে আমার মেঘমুক্ত স্বচ্ছ নীলাকাশ,
নির্বিঘ্নে ডানা মেলে উড়েছি আমি
সকাল, বিকেল, রাত।
তুমি ছিলে আমার জীবন মরণ,
আমার আরাধ্য ভালোবাসা,
তাইতো তোমায় নিয়ে গড়েছিলাম আমার
স্বপ্ন সুখের বাসা।
তুমি ছিলে আমার জ্ঞানের সমুদ্র,
সেই সমুদ্রে ডুব দিয়ে কুড়িয়েছি আমি
অনেক মনি মুক্তো।
তুমি ছিলে আমার সুখ দুঃখ,
আমার বেঁচে থাকার মন্ত্র,
তোমায় হারিয়ে আমি যে হয়েছি
দিশেহারা উদভ্রান্ত।
তুমি ছিলে আমার সুর,তাল,লয়
আমার জীবনের ছন্দ,
তোমার বিহনে এখন আমার
নিঃশ্বাস হয়ে আসে বন্ধ।
তোমার প্রজ্ঞা, তোমার মেধা, তোমার মুক্তচিন্তা,
দিয়েছে আমায় শক্তি সাহস,
পেরিয়েছি অনেক বাধা।
তোমার আনন্দ, তোমার হাসি,
আমার পরাণে বাজিয়েছে বাঁশী,
ওগো প্রিয়তম, শোনো কানেকানে,
আমি যে তোমায় বড় ভালোবাসি।
কানাডা ০১-১০-২০২২
শরৎ বেলা
বর্ষা গিয়ে শরৎ এলো
খুশির দোলা দিয়ে,
তুলোর রঙে মেঘের ভেলা
করছে যে আজ কতো খেলা!
নানা রঙের ফুলের ডালা
সাজবে যে আজ শরৎ বেলা,
নদীর ধারে কাশ ফুলের মেলা!
সবুজ ধানের শিশির দোলা,
কৃষকের চোখে কতো স্বপ্নখেলা
সোনালি ধানে ভরবে খেত,
ঘরে থাকবে আনন্দের রেশ!
সাদা নুপুর পরে পায়ে,
প্রকৃতি নিজেই মুগ্ধ নয়নে চায়!
নানা ফুলে সেজে,
আপন মনে নেচে যায়
খুশির ডানা দিয়েছে মেলে
নীল আকাশে উড়বে আজ,
মন প্রাণ উজাড় করে!
কানাডা ০১-১০-২০২২
নীল ধ্রুবতারা
ক্লান্ত সময় থেকে যেও তুমি
যেখানে আছে সবুজ রঙে রাঙানো কোন ভূমি,
কোন একদিন হঠাৎ
দেখা হলে থেমে যেয়ো মাঝ রাস্তায়।
যদি তেমনি সময় আসে
দেখা দিও উল্লাসে,
পেছনে ফেলে আসা স্মৃতি-মৃত গাছের সারি,
তোমার ছায়ায় চোখটি পেতে যাবো বাড়ি
একটু খানি দিও জোৎস্না রাত
হবো না হয় হৃদয়ের বর্ষাস্নাত।
কিছুটা জলের স্পর্শে মিশে থাকা
পৃথিবী না হলে করবে চোখ বাঁকা,
অল্প কালচে আকাশের নীচটাই
একা দাঁড়িয়ে থাকবো যখন অপেক্ষায়।
খুব তীব্র ভাবে মাঝে মাঝে মনে হয়
জীবনে কী যেন অপূর্ণ রয়,
জানো কি আকাশের নীল ধ্রুবতারা
শুধুই তুমি -চাই আর তোমার বুকের ঐ জমিন ভরা॥
কানাডা ১০-১০-২০২২
ফ্ল্যাট টু লেট
আমার বুকের ভেতরটায়
তিন কামরার ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট।
শোবার ঘরটায় আমি আর কষ্ট থাকি, একসাথে খাই, ঘুমোই।
ঘুম না এলে রাত জেগে পাহারা দেই বুড়ো রাতটাকে।
পাশের ঘরটা তোদের, তোমার, আপনার
জন্য বরাদ্দ।
এখন বেশিরভাগই খালি পড়ে থাকে ঘরটা।
একসময় কত হুল্লোড় ছিল ওদিকটায়!
আর এখন মানুষ দেখলেই আমার
ভয় ভয় লাগে।
মানুষগুলোও কেমন যেন!
কষ্টকে দেখলেই পালিয়ে বেড়ায়।
সুখ এ ফ্ল্যাটের অনিয়মিত অতিথি।
এ ব্যাপারে কষ্ট বেশ অতিথিপরায়ণ।
সুখ এলেই বসার ঘরে আয়েশ করে বসতে দেয়,
চা করে আনে।
আমার বরং সুখটাকেই হিংসুটে লাগে,
সে কষ্টকে সহ্যই করতে পারেনা!
শোবার ঘরটার পাশেই
ছোট্ট একটা বেলকনি আকাশ পেতে বসে আছে।
পুরো ফ্ল্যাটের মধ্যে এটাই আমার সবচে প্রিয়।
সময় পেলেই সযত্নে তাকে সাজিয়ে রাখা
স্মৃতিগুলো খুলে বসে পড়ি বেলকুনিটায়।
কড়া লিকারের জীবনটায় দু’চামচ
একাকীত্ব মিশিয়ে মগ হাতে
পাশে এসে দাঁড়ায় কষ্ট।
তখন তাকে বড় আপন মনে হয়।
ভাবি,কষ্টের সাথে বেশতো আছি সুখেই!
এসব ভাবতে ভাবতেই
হঠাৎ বেজে ওঠে কলিংবেল।
দরজা খুলে দেখি
মৃত্যু দাঁড়িয়ে আছে!
তসলিমা হাসান
কানাডা ১০-০৯-২০২২