৭২২ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সহ-উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে এ নিয়োগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আজ রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বর্তমান উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসের শুরুতে।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য পদে সাময়িকভাবে তাকে এ নিয়োগ প্রদান করা হয়।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল লক্ষ্মীপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৬ সালের ২১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রয়াত আলহাজ ফরিদ আহমেদ এবং মাতা প্রয়াত মাছুমা খাতুন ছিলেন সমাজহিতৈষী ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিত্ব। ড. মাকসুদ কামালের অগ্রজ প্রয়াত এ কে এম শাহজাহান কামাল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং তিন মেয়াদে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার স্ত্রী সৈয়দা আফসানা ফেরদৌসি একজন শিক্ষাবিদ। তিনি দুই পুত্র এবং এক কন্যাসন্তানের পিতা।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ২০২০ সালের জুন মাস থেকে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক)-এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক। এর পূর্বে ভূতত্ত্ব বিভাগে অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। ড. মাকসুদ কামাল বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটি কলেজে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে এপ্রিল ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৭ পর্যন্ত নিয়োগলাভ করেছেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রেডুকেশন (আইআরডিআর)-এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করে আসছেন।
অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল ২০০০ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং একই বিভাগে ২০১০ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানে (স্পারসো) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদে প্রায় ছয় বছর কর্মরত ছিলেন। তিনি খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে যথাক্রমে ভূতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পাঠদান করেছেন।
ড. মাকসুদ কামাল ভূমিকম্প ও সুনামি এবং নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হিসেবে ‘ইউএনডিপি ও সিডিএমপি বাংলাদেশ’ প্রকল্পে চার বছর কাজ করেছেন। এর পূর্বে তিনি ২০০৭ সালে ভূমিকম্প দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইউএনডিপি ও ইরানে কাজ করেছেন। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে তিনি শিক্ষাবিদ ও গবেষক হিসেবে দেশ-বিদেশে অত্যন্ত সুপরিচিত। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের বহু প্রকল্পে কারিগরি উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাথেও তার কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল ১৯৮২ সালে এস এস সি, ১৯৮৪ সালে এইচ এস সি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে ১৯৮৮ সালে বিএসসি (অনার্স) এবং ১৯৮৯ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সকল পরীক্ষায় তিনি প্রথম ডিভিশন প্রাপ্ত হয়েছেন। ২০০৪ সালে তিনি টোকিওর প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ও জাপান থেকে ভূমিকম্প প্রোকৌশল বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশি-বিদেশি জার্নালে তার ৬৫টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রবন্ধ, রিপোর্ট, বুক চ্যাপ্টারসহ তার ১০০টির ওপরে গবেষণাকর্ম রয়েছে। অনেকগুলো আন্তর্জাতিক জার্নালে তিনি রিভিউয়ার হিসেবে অবদান রেখে আসছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তিনি জ্ঞান ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা সংক্রান্ত কাজ করছেন।
অধ্যপক ড. মাকসুদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল পর্যায়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (২০১২-২০১৭) ছিলেন যা বর্তমানে ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ নামে পরিচিত। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পাওয়ার পূর্বে ২০১২ সাল থেকে আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিনের (চার বার নির্বাচিত) দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিনের দায়িত্বে থাকাকালীন আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দুই মেয়াদে (২০১৩-২০১৮) তিনি মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ড. মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির চার মেয়াদে সভাপতি (২০১৭-২০২০) এবং তিন মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক (২০১৪-২০১৬) ছিলেন। এ ছাড়াও তিন মেয়াদে (২০১৭-২০১৮, ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এবং মহাসচিব (২০১৫-২০১৬) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষক সমিতি ও ফেডারেশনের দায়িত্বকালীন সময়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য বিভিন্ন কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে তিনি অবদান রেখে আসছেন। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন।
ড. মাকসুদ কামাল বিষয়ভিত্তিক ও সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে গণমাধ্যমে লেখালেখি করেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও তিনি বিষয়ভিত্তিক মতামত প্রদান করে থাকেন। তার লেখালেখি মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়াবলি কেন্দ্রিক।