পুরো নাম সাদিকা পারভিন পপি। দেশের জনপ্রিয় ও সেরা চিত্রনায়িকাদের অন্যতম। যিনি তার দুই যুগের ক্যারিয়ারে অর্ধশত চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জিতে নিয়েছেন তিন তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। নান্দনিক অভিনয়ের পাশাপাশি দৈহিক উচ্চতা, সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় ফিগারের কারণে পপি সব সময়ই ছিলেন পরিচালক-প্রযোজকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে।
কিন্তু কয়েক মাস ধরে কোনো খোঁজই নেই জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকার। কোথায় হারিয়ে গেলেন পপি? কেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে? এমন প্রশ্নই ঘুরছে অভিনেত্রীর ভক্তদের মনে। পপির খোঁজখবর নিতে যোগাযোগ করা হয় তার ব্যক্তিগত সেলফোন নম্বরে। কিন্তু সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বর্তমানে সেখানেও তিনি সক্রিয় নন।
তাহলে উপায়? শেষ চেষ্টা হিসেবে যোগাযোগ করা হয় লেখক, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজু আলিমের সঙ্গে। কারণ, পপি শেষ এই পরিচালকের ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ সিনেমার শুটিং করছিলেন। কিন্তু সিনেমার কিছু অংশের কাজ বাকি রেখেই উধাও হয়ে যান। ফলে, পরিচালক রাজু আলিম প্রতিনিয়ত পপির খোঁজ করছেন। যাতে সিনেমার বাকি অংশের কাজ শেষ করতে পারেন। কিন্তু পপির খোঁজ জানেন না রাজু আলিমও।
শনিবার রাতে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা বলেন এই অভিনেতা ও নির্মাতা। তিনি বলেন, ‘আমার ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ সিনেমার ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পপি দুই-তিনদিন সময় দিলে বাকি কাজও শেষ হয়ে যেত। তার চেয়ে বড় বিষয়, পপির জন্য বড় একটা সারপ্রাইজ রেখেছিলাম। কারণ, কাজের বাইরেও সে আমার খুব ভালো বন্ধু। তাই আমার প্রত্যাশা, সে যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক।’
নির্মাতা রাজু আলিম আরও জানান, ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’র প্রধান নায়িকা পপি। সিনেমাটি পরিচালনার পাশাপাশি আমি এখানে পপির স্বামীর চরিত্রে অভিনয়ও করছি। আমার ছবিটি বড় বাজেটের। প্রথমে ভালোবাসা দিবসে এবং পরে রোজার ঈদে আমরা ছবিটি মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। বাকি কাজ শেষ করতে পপির খোঁজে আমি ইস্কাটন ও গুলশানের বাসায় লোক পাঠিয়েছি। কিন্তু কোথাও পপিকে পাওয়া যায়নি।’
তাহলে পপি আছেন কোথায়? বাতাসে গুঞ্জন, কোনো এক শিল্পপতিকে গোপনে বিয়ে করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। বর্তমানে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে ওই শিল্পপতির দেয়া আলিশান ফ্ল্যাটেই থাকছেন। এও গুঞ্জন, ওই শিল্পপতি নাকি বিবাহিত। তার সন্তানও আছে। যদিও সেই শিল্পপতির নাম পরিচয় জানা যায়নি। তিনি নাকি দেশের বড় একটি ডকইয়ার্ডের মালিক।
আবার এও শোনা যাচ্ছে, পপি নাকি কয়েক মাস ধরে দেশেই নেই। তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতে থাকছেন। এ জন্যই তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এই গুঞ্জন সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে গত বছর গুঞ্জন ওঠে, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে গোপনে বিয়ে করেছেন পপি। অভিনেত্রীর ইস্কাটনের বাসায় তারা সেই বিয়ের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে কেকও কাটেন। সেই ঘরোয়া অনুষ্ঠানের একটি ছবি প্রকাশ হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে পপি-জায়েদের বিয়ের একটি কাবিননামাও ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এমন খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন দুই তারকাই।
তারও আগে একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিল খানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন পপি। একসঙ্গে হাফ ডজনের মতো সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন এই জুটি। কাজের সূত্রেই তারা একে অপরের কাছাকাছি হয়েছিলেন। গুঞ্জন রয়েছে, পপি ও শাকিল খানের সেই সম্পর্ক নাকি বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছিল। কিন্তু একাধিক বার আলাদা আলাদা সাক্ষাৎকারে হাজির হয়ে তারা সেই বিয়ের খবরকে বরাবরই অস্বীকার করেছেন।
দীর্ঘাদেহী চিত্রনায়িকা পপির চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছিল ১৯৯৭ সালে ওমর সানীর বিপরীতে ‘কুলি’ ছবিটির মাধ্যমে। যদিও তার অভিনীত প্রথম ছবি ছিল সাবেক প্রেমিক শাকিল খানের সঙ্গে ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’। কিন্তু ‘কুলি’ আগে মুক্তি পাওয়ায় সেটিই হয়ে যায় নায়িকার অভিষেক চলচ্চিত্র।
এই ছবি মুক্তির পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি পপিকে। দুর্দান্ত গতিতে এগিয়েছেন শুধু সামনের দিকে। ওমর সানী, শাকিল খান ছাড়াও কাজ করেছেন রুবেল, মান্না, ইলিয়াস কাঞ্চন, অমিত হাসান, আমিন খান, রিয়াজ, ফেরদৌস থেকে শুরু করে বর্তমান সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গেও। প্রত্যেকের সঙ্গেই পেয়েছেন সাফল্য। এমন একজন নায়িকার হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনায় চিন্তায় তার অগণিত ভক্ত।