আড়ালের গল্প
জেসমিন সুলতানা চৌধুরী
নিপীড়িত, সমস্ত অধিকার বঞ্চিত, অবহেলিত ‘সোমা’ এক নারী সত্তা;
যে কিনা তার সন্তানদের মা।
আত্মহননের পথ পারেনি বেছে নিতে ,
এক পা এগোয় তো তিন পা পিছায়,
পিছুটান
দিয়ে যায় কার হাতে সন্তানদের।
যে মানুষটির মনে নেই ভালোবাসা তার জন্যে এক বিন্দু ,
যার সমস্ত সুখ, সকল বিনোদন পর্দার আড়ালের সাজসজ্জায়
সেকেন্ড হোম,থার্ড হোম ।
যার স্বপ্ন শুধু কাড়ি কাড়ি টাকা আর অমৃত সুধা
সেই লোকটির দুচোখে যদি না আসে ঘুম,
ঘরে থাকা ঔষধের শিশি হাতে তুলে নেয় কখনোবা ।
রোজ রাতদুপুরে ঘরে ফিরে,
জানতে চাওয়ার অধিকার সোমার নেই।
আবার কাক ডাকা ভোরে প্রাতঃভ্রমণ এবং
আরেক দফা সুধা পানের নেশায় ছুটে পর্দার অন্তরালে
দিতে হয়নি কখনো কৈফিয়ত
প্রতিদিনের রুটিন।
কারণ তার চোখে ‘সোমা’ একজন দাসী
স্ত্রীর মর্যাদা সে কখনো পায়নি,
নাম সর্বস্ব একটা সাইনবোর্ড।
তাই জরুরী কোন ফোন রিসিভ করা যেন এক মহাপাপ
সে পাপ ভুল করেও করতে নেই,
যদি করতে হয় এক মহা ভূমিকম্প ।
কখনো বলেনি, আমি এসেছি তুমি কই ?
কখনো বলেনি,আজ ফিরতে দেরি হবে
চিন্তা করো না
কখনো বলেনি, দাওয়াত আছে ঘরে খাব না
কখনো বলেনি আজ কোন এক জরুরী কাজে বাইরে যাচ্ছি ঘরে ফিরবনা
কখনো বলেনি আমার পাশে একটু বসো,
কখনো বলেনি আজ একটা উপলক্ষ ছিল, খেয়ে এসেছি
বলেছে খাবনা, ক্ষিধে নেই ।
কখনো তাকে নিয়ে যায়নি দু কদম ঘুরতে
এমনকি কখনো জানায়নি কারো জন্ম-মৃত্যু সংবাদ।
গল্প গুজব তো কখনো ছিলই না
বরং রুমে দেখলে একরাশ বিরক্তি প্রকাশ
কাজের কথা বলে দূরে সরিয়ে দেয়া
সেই অমানুষের সাথে সংসার নামক হাজতে দিন কাটায়।
অশ্রু জলে হাজার-হাজার রাত নির্ঘুম ফুরিয়ে যায় ।
ধরাছোঁয়া বারণ, যেন এক বিছানায় দুজন দুই গ্রহের মানুষ।
এ কষ্ট কাউকে বোঝানোর নয় ,
এ কষ্ট শুধু জ্বলে জ্বলে শেষ হয়ে যাওয়া ।
কোথায় যাবে, কে দেবে নিরাপদ আশ্রয়
বাবার বাড়ি, না না। সে তো বিয়ে হলেই পর।
ভালো থাকার অভিনয়ে যায় কেটে যায় মাস,বছর,যুগ।
বুকে কষ্টের পাহাড় সরাতে অশ্রু বিসর্জনে শান্তি খুঁজে।
চেয়ে থাকে, তার জ্বালানো প্রদীপগুলো কখন আলো ছড়াবে
কখন তারা বড়ো হবে ,স্বনির্ভর হবে
সেই আশায় কোরবানি দেয় নিজের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য !
সস্তায় যে আলো পায়, সে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে,
স্ত্রীর প্রাপ্য মান-মর্যাদা দিতে কুণ্ঠাবোধ করে
এমনকি সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে
কণ্ঠ রোধ করতে শারীরিক নির্যাতনকে পথ ভেবে নেয়
কাঁচের বুকে অপরিসীম সুখ খোঁজে
নিজের সত্তাকে বিলিয়ে দেয়
সেই মুখোশধারীকে কখন জানাবে বিদায়,
দিন গুনে একটি একটি করে ।
আলোকে নিংড়ে দিয়ে আঁধারে যার পথ চলা
মুক্তো দানার সৌন্দর্য সে শিশির বিন্দুতে নয়,
বরং মানুষের ফেলে দেয়া মুখের থুথুতে খুঁজে পায়
আর অতি যত্ন করে পরম মমতায় অঙ্গে মাখে প্রতিনিয়ত
এদিকে মুক্তো দানার কথা সে বেমালুম ভুলে যায় ।
ভুলে যায় ভাগ্য গুণেই তা তার পাওয়া।
ভাবে-
থাক না পড়ে দামী ঐ মুক্তো দানা
চার দেয়ালের মাঝে
ছোট্ট কৌটায়,
কোথায় বা যাবে বন্ধ কৌটার ঢাকনা খুলে
আর কেইবা দেখবে তার ঔজ্জ্বলতা !!
২ Comments
অনেক ভালো লিখেছেন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে